নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বমান, সাশ্রয়ী মূল্য এবং হাতের নাগালে আইএসও স্ট্যান্ডার্ড বিক্রয়োত্তর সেবা- প্রধানত এই তিন কারণেই ওয়ালটন এলইডি টিভির চাহিদা তুঙ্গে। অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রায় প্রতিমাসেই বাড়ছে দেশীয় ব্র্যান্ডটির মার্কেট শেয়ার। গত বছর এলইডি টিভি বিক্রিতে ৩১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চলতি বছর ৭ লাখ এলইডি টিভি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ওয়ালটন। যা গত বছরের চেয়ে ১০৩ শতাংশ বেশি।
সূত্র মতে, নতুন নতুন প্রযুক্তির সংযোজন, উৎপাদন বৃদ্ধি, মানোন্নয়ন এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন মডেলের এলইডি টিভি বাজারে ছাড়ছে ওয়ালটন। নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন এবং আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের ফলে কমে এসেছে পণ্যর উৎপাদন খরচ। ফলে ওয়ালটন এলইডি টিভির দাম কয়েক দফা কমেছে। যার প্রেক্ষিতে চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। গত বছর দেশের বাজারে ৩ লাখ ৪৪ হাজার এলইডি টিভি বিক্রি হয়েছে, যা কিনা ২০১৫ সালের তুলনায় ৩১৩ শতাংশ বেশি। চলতি বছর এলইডি টিভি বিক্রিতে ১০৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের টার্গেট নিয়েছে ওয়ালটন।
ক্রমবর্ধমান গ্রাহকচাহিদার প্রেক্ষিতে প্রবৃদ্ধির এই লক্ষ্যমাত্রা সহজেই অর্জিত হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ। তাদের সাহস যোগাচ্ছে গত জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার রেকর্ড। মেলায় গতবারের চেয়ে ১১৮.২১ শতাংশ বেশি এলইডি টিভি বিক্রি হয়েছে ওয়ালটনের। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ফেব্রয়ারি মাসেও বজায় ছিলো।
জানা গেছে, দেশেই উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন এলইডি টিভি তৈরির উদ্দেশ্যে গত বছর বিশাল বিনিয়োগ করেছে ওয়ালটন। কারখানায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ্বের লেটেস্ট যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে। পৃথক ম্যানুফ্যাকচারিং লাইন স্থাপনের মাধ্যমে প্লাস্টিক কেবিনেট, স্পীকার, রিমোট কন্ট্রোল ইউনিট, মাদার বোর্ড, ইলেকট্রিক পাওয়ার ক্যাবল, এলইডি টিভির প্যানেলসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নিজস্ব কারখানাতেই তৈরি করা শুরু করে ওয়ালটন। নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সর্বোচ্চ মানের এলইডি টিভি তৈরির পাশাপাশি উৎপাদন খরচও বহুলাংশে কমেছে। ফলে গ্রাহক পছন্দের শীর্ষে এসেছে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের এলইডি টিভি। দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটনের এলইডি টিভি। রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ন অবদানের জন্য সম্প্রতি সরকার সিআইপি হিসেবে সম্মানীত করেছে ওয়ালটন প্রতিনিধিকে।
ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছর টেলিভিশন প্রযুক্তিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানটি। এলইডি টিভিতে ওয়ালটনের ২৮টি নতুন প্যাটেন্ট অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যেগুলো বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে টেলিভিশন গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ প্রসঙ্গে ওয়ালটন টেলিভিশন সোর্সিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এ্যাডিশনাল ডিরেক্টর মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, ইলেকট্রনিক্স, অপ্টিক্যাল এবং মেকানিক্যাল ডিজাইনিংসহ সকল ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে ওয়ালটন। এরই ধারাবহিকতায় টেলিভিশন গবেষণায় ওয়ালটন উদ্ভাবন করেছে কোয়ান্টাম ডট প্লাস প্রযুক্তির আগামী প্রজম্মের স্পেকট্রাকিউ টিভি। যার মাধ্যমে বিশ্ব টেলিভিশন গবেষণায় ওয়ালটন তথা বাংলাদেশ এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে ।
তিনি জানান, যেখানে সাধারন প্রযুক্তির টেলিভিশনে কালার প্রদর্শনের ক্ষমতা ৬৮ থেকে ৭০ শতাংশ, সেখানে ওয়ালটনের স্পেকট্রাকিউ টিভি ৯৯ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত কালার প্রদর্শন করবে। যা দর্শকদের নিয়ে যাবে প্রকৃত রঙের দুনিয়ায়। খুব শিগগীরই বাজাওে আসছে স্পেকট্রাকিউ টিভি।
ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক ও বিপণন বিভাগের প্রধান এমদাদুল হক সরকার বলেন, স্থানীয় টেলিভিশন বাজারে চলতি বছরেও গ্রাহক জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকবে ওয়ালটন। এর পেছনে তিনি যুক্তি দেখান- এই বছরেও স্পেকট্রাকিউ, ৭৫ ইঞ্চির ফুল এইচডি, ফোরকে রেজ্যুলেশনের ৯৫ ইঞ্চির বড় পর্দার টিভিসহ বেশকিছু নতুন প্রযুক্তি ও মডেলের এলইডি টিভি বাজারে ছাড়ছে ওয়ালটন। আরো ছাড়া হবে এন্ড্রয়েড স্মার্ট ও ইন্টারনেট টিভি। এসব টেলিভিশন একদিকে যেমন উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন, অন্যদিকে দামও হবে ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে।
ওয়ালটন টেলিভিশন বিপণন বিভাগের প্রধান আব্দুল বারী জানান, স্থানীয় বাজারে ওয়ালটন ১৯, ২০, ২৪, ২৮, ৩২, ৩৯, ৪০, ৪৩, ৪৯ ও ৫৫ ইঞ্চির ৭০টিরও বেশি মডেলের এলইডি, এন্ড্রয়েড স্মার্ট ও ইন্টারনেট টেলিভিশন বাজারজাত করছে। এই টিভির দাম সর্বনি¤œ ৮৯৯০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তিনি আরো জানান, ওয়ালটন টিভিতে রযেছে ছয় মাসের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি , দুই বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি। এছাড়া সর্বোচ্চ ৩৬ মাসের সহজ কিস্তিতে কেনার সুবিধা রয়েছে।
ওয়ালটনের টেলিভিশন প্রকৌশলীরা জানান, গুণগত মান নিশ্চিত করতে ওয়ালটন এলইডি টিভিতে ব্যবহার করা হচ্ছে আইপিএস (ইন প্ল্যান সুইচিং), এডিএস (এ্যাডভান্স সুপার ডাইমেনশন সুইচ) এবং এইচএডিএস (হাই এ্যাডভান্স সুপার ডাইমেনশন সুইচ)) প্রযুক্তির প্যানেল। এর ফলে দর্শকরা ওয়াইড ভিউয়িং এ্যাঙ্গেল এবং হাই কন্ট্রাস্ট এর পিকচার দেখতে পাবেন। এছাড়াও, আইএসও ক্লাস সেভেন ডাস্ট ফ্রি ক্লিন রুম এর সর্বোচ্চ সতর্কতা ও গুণগতমান রক্ষা করে তৈরী করা হচ্ছে এলইডি টিভি প্যানেল। ছবি ও শব্দের উচ্চমান নিশ্চিতকরনে ডাইনামিক নয়েজ রিডাকশন, সর্বোচ্চ ফ্রেম রেট, ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম সমৃদ্ধ নিজস্ব ডিজাইনের উন্নত প্রযুক্তির মাদারবোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে।
ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের এ্যাডিশনাল ডিরেক্টর শাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, আইএসও সনদ প্রাপ্ত সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় দ্রুত ও সর্বোত্তম সেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সারাদেশে ৬৫ সার্ভিস সেন্টার চালু রয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে আরো ৫টি জেলা শহরে নতুন সার্ভিস সেন্টার চালু হবে। এর বাইরে ৩০০ টিরও বেশি সার্ভিস পয়েন্টের মাধ্যমেও বিক্রয়োত্তর সেবা দেয়া হচ্ছে। এই সেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রায় ৩ হাজার অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান।
উল্লেখ্য, দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে উচ্চমানের ওয়ালটনের এলইডি টিভি। বিশ্বব্যাপী বাজার সম্প্রসারণের লক্ষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নিচ্ছে ওয়ালটন। গত বছর নাইজেরিয়া এবং চীনের বানিজ্য মেলায় অংশ নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে বাংলাদেশী এই ব্র্যান্ড। এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ালটন এবছর আরো ব্যাপক পরিসরে চীনের ক্যান্টন ফেয়ারে অংশ নিবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
মতামত লিখুন :