আব্দুল আলিম : গত সপ্তাহের শুরুতে আশুলিয়া এলাকায় মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে অনেকটা আচমকা শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমদিকে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে তাদের বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে দ্রুত তা অন্যান্য কারখানায়ও ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনা শুরুর দ্বিতীয় দিনেই তিন মন্ত্রনালয়ের যৌথ মিটিং দেখে আমরা অনেকেই আশান্বিত হয়েছিলাম পরিস্থিতির দ্রুত সমাধানের। তবে তাতে তেমন কোন কাজ হয়নি। পরের দিন পুলিশি প্রহরায় আশুলিয়া এলাকায় কিছু কারখানা চললেও দুপুরের পর প্রায় অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ সম্পদের ক্ষতিসাধন রক্ষার্থে বিজিএমইএ নেতারা ঘোষণা দিয়ে ওই এলাকার সকল কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ করে দেয়।
২০১৩ সালে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সুপারিশক্রমে সর্বনিম্ন বেতন ৩০০০ টাকা থেকে ৫৩০০ টাকা নির্ধারণ করে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫% বেতনবৃদ্ধি বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু ৩ বছরের মাথায় এসেই আবার কারখানায় আন্দোলন কেন এ প্রশ্ন কারখানা মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের। আইএলও এর গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল এর বাংলাদেশ সফরকে একটি চক্র এই দাবি উত্থাপনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে করেছেন কিনা তাও অনেকের ধারনা। এটা যদি সামগ্রিক শ্রমিক অসন্তোষ হবে তাহলে কেন শুধু আশুলিয়া এলাকায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টিভি টক শো সহ আলোচনার টেবিলে আলোচিত হচ্ছে পোশাক খাতের সাম্প্রতিক বিষয় যেখানে কোন না কোন ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজছেন অনেকেই।
সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাবি উত্থাপনের পরিবর্তে কথায় কথায় কাজ বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় নেমে আসা কোন ভাবেই মালিক শ্রমিক কোন পক্ষের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারেনা। মালিক যেমন শ্রমিকের ঘামে মুনাফা ঘরে তুলছেন তেমনি এই মালিকের উদ্যোগে দারিদ্র্যপীড়িত এই দেশে কয়েক মিলিয়ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আমাদের মালিক-শ্রমিক দুপক্ষকেই বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে এই শিল্পকে, যার মাধ্যমে বেঁচে থাকবে আমাদের উন্নত দেশের তালিকায় নাম লেখানোর স্বপ্ন।
শ্রমিকদের কোন দাবি উত্থাপন করা অন্যায় নয় তবে তা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক। সেই দাবি কতটুকু মানবেন বা না মানবেন, যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক তা আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই উত্তম পন্থা। মামলা, হামলা বা গ্রেফতার সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই খাতের জন্য দূর ভবিষ্যতে কোন সুফল বয়ে আনবেনা।
কারখানা বন্ধ রাখা কোনভাবেই মালিক বা শ্রমিকের জন্য লাভজনক নয়। যেসব কারখানা বন্ধ রয়েছে তাদের নির্ধারিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। সেক্ষেত্রে আগামী মাসের বেতনেও প্রভাব পড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। আর কারখানা লম্বা সময়ের জন্য বন্ধ থাকলে সাধারণ শ্রমিকরা কর্মহীন হতাশা নিয়ে ঢাকা বা আশুলিয়া এলাকা ছেড়ে ইতিমধ্যেই গ্রামের বাড়ীতে চলে যেতে শুরু করেছেন। তাহলে এই আন্দোলনের ফসল উঠছে কার ঘরে?
এখানে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বা শ্রেনী যদি অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে থাকে তাহলে শ্রমিক ও শিল্পের স্বার্থে দ্রুত ও কার্যকর তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের খুজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। তবে কোন প্রকার তথ্য প্রমাণ না থাকলে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে শত শত শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা ও তাদের চাকরীচ্যুত করা মোটেও সমর্থনযোগ্য হবে না।
পোশাক খাতের অত্যন্ত সহজ সরল শ্রমিকদের বিভিন্ন সময় উস্কে দিয়ে নানা শ্রেনীর মানুষ রাজনৈতিক ও আর্থিক সুবিধা আদায় করেছেন বলে আমাদের জানা আছে। এবারের শ্রমিক অসন্তোষ কি আসলেই বেতন ভাতার নামে সাধারণ শ্রমিকের দাবির প্রতিফলন নাকি রানা প্লাজা ধ্বসের পরেও ঘুরে দাঁড়ানো এ দেশের পোশাক খাতের প্রতি কোন দেশি বিদেশী চক্রের ষড়যন্ত্রের অংশ তা খতিয়ে দেখা সরকারের দায়িত্ব। সরকার অত্যন্ত দ্রুত ও নিখুঁতভাবে এই ঘটনার তদন্ত করে যত দ্রুত সম্ভব মালিক-শ্রমিকদের সাথে নিয়ে কারখানাগুলিকে সচল করার সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের সর্ববৃহৎ এই শ্রমঘন শিল্পকে রক্ষায় ভুমিকা রাখবেন পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট সকলের আশাবাদ।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দি আরএমজি টাইমস ই-মেইল : [email protected]
মতামত লিখুন :