Logo

মা, শ্রম ও বৈদেশিক মুদ্রা

RMG Times
মঙ্গলবার, মে ১৩, ২০২৫
  • শেয়ার করুন

“মা” — এমন এক শব্দ, যা কেবল অনুভবের, ব্যাখ্যার নয়। তার স্নেহে যেমন পৃথিবীর সব ক্লান্তি গলে যায়, তেমনি তার আত্মত্যাগে নির্মিত হয় একটি জাতির ভবিষ্যৎ। আজকের বাংলাদেশ যখন বৈদেশিক মুদ্রার শক্ত ভিত গড়ে তুলছে, তখন সেই ভিতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছেন পোশাকশিল্পে কর্মরত লাখো মা — যারা সূর্য ওঠার আগেই ঘুমন্ত সন্তানের পাশে থেকে পায়ে হেঁটে পৌঁছে যান কারখানায়। প্রায় ২৪ লাখ নারী শ্রমিকের এই সেক্টরে, অগণিত মা প্রতিদিন নিঃশব্দে গড়ে যাচ্ছেন দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাস। সন্তানকে বুকে না নিয়ে সারাদিন সেলাই মেশিনে মাথা নিচু করে কাজ করে যাওয়া — এ এক নিঃসীম ভালোবাসার পরাকাষ্ঠা, যার স্বীকৃতি আমরা অনেক সময়ই দিতে পারি না। এই মা দিবসে আমরা শুধু আবেগ নয়, দায়িত্বের জায়গা থেকে তাকাতে চাই তাদের দিকে — যারা ঘরে মা, বাইরে কর্মী, আর সমাজে এক নীরব নির্মাতা। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাদের সংগ্রাম, বঞ্চনা, ভালবাসা আর অবদানের প্রামাণ্য চিত্র — যা কেবল সংখ্যায় নয়, প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে গেঁথে রাখার মতো।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (RMG) শিল্প শুধু একটি উৎপাদন খাত নয় — এটি দেশের অর্থনীতির প্রাণ, রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস, এবং কোটি মানুষের জীবিকার ভিত্তি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪.৩৪% এসেছে এই পোশাক শিল্প থেকে, যার পরিমাণ প্রায় ৪৮.৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (BGMEA Annual Report 2024)। এই বিপুল অর্থনৈতিক অবদানের পেছনে যাঁরা প্রতিদিন শ্রম দিচ্ছেন, তাঁদের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি নারী — আর তাঁদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মা। তারা কোনো কর্পোরেট অফিসের ব্যবস্থাপক নন, তাদের জন্য নেই এসি রুম বা নির্ধারিত লাঞ্চ ব্রেক; তবু তারা দিন শুরু করেন ভোরে, বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়ে বা খাইয়ে নিজের ব্যাগ কাঁধে তুলে নেন। তারপর দিনের ১০-১২ ঘণ্টা কাটে টানা সেলাই, ফিনিশিং, আয়রনিং, প্যাকিংয়ের মতো কঠোর পরিশ্রমে।

প্রতিদিনের এই শ্রম কেবল একটি পোশাক তৈরি করছে না; এটি তৈরি করছে বিদেশি ব্র্যান্ডের আস্থা, দেশের রপ্তানি সক্ষমতা, আর টিকে থাকার লড়াই। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের নির্ধারিত সময়সীমা মেনে কাজ শেষ করার চাপ, লক্ষ্য পূরণের জন্য ওভারটাইম — এসব কিছুই মা শ্রমিকদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। তবে এই ত্যাগের বিনিময়ে তারা কেবল মাসের শেষে কিছু টাকা নিয়ে বাসায় ফেরেন না, বরং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেখে যান অমূল্য অবদান। একজন মা শ্রমিকের ঘামেই তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের ভিত্তিপ্রস্তর। এই মায়েরা আমাদের রপ্তানিকে টিকিয়ে রাখছেন — অথচ তাঁদের নিজস্ব রপ্তানিযোগ্য কিছু নেই। তাঁরা স্বপ্ন রপ্তানি করেন, কষ্ট রপ্তানি করেন — বিনিময়ে পান টিকে থাকার সুযোগ।

বাংলাদেশে নারীর কর্মজীবী হয়ে ওঠা আজও একটি সংগ্রামের নাম, আর সেই সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যখন একজন নারী শুধু কর্মজীবীই নন, তিনি একজন মা। শহরে কিছুটা সচেতনতা তৈরি হলেও, দেশের অধিকাংশ গ্রাম ও মফস্বল অঞ্চলে এখনো মা হয়ে কারখানায় কাজ করা অনেকের চোখে “অশোভন” বা “অপ্রয়োজনীয়” বলে বিবেচিত হয়।

গার্মেন্টস খাতে কাজ করা অসংখ্য মা প্রতিনিয়ত শুনে আসছেন – “মা হয়ে বাইরে কাজ করা ঠিক না” “সন্তানের দেখাশোনা করবে কে?”, “টাকাপয়সার কী দরকার, স্বামী তো আছে!”

এইসব কথা কেবল শব্দ নয়, এটি এক সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, যা নারীর আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানে। মা শ্রমিকদের জন্য প্রতিদিন কাজের বাইরে যুদ্ধ করতে হয় পারিবারিক আপত্তি, সমাজের কটূ দৃষ্টি, এবং আত্মীয়-পরিজনের চুপিচুপি বলা কথার বিরুদ্ধে। অনেক সময় স্বামীর অসমর্থন, শাশুড়ির চাপ বা প্রতিবেশীর বাঁকা দৃষ্টিও তাঁদের চলার পথকে করে তোলে কণ্টকাকীর্ণ। তবু তারা পিছু হঠেন না। কারণ, তাদের চোখে সন্তানের শিক্ষা, ঘরের ভরনপোষণ এবং সম্মানের জীবন যাপনের স্বপ্ন। একজন গার্মেন্টস মা যখন নিজের উপার্জনে সন্তানকে স্কুলে পাঠান, কিংবা সংসারে হাতে দেন অর্থ সহায়তা, তখন ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে সেই পরিবার ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। এই পরিবর্তনটা রাতারাতি হয়নি। এক দশক আগেও পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ মানেই ছিল নির্যাতনের শঙ্কা, অসম্মানের আশঙ্কা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এই খাতেই গড়ে উঠেছে নারীর আত্মনির্ভরশীলতার এক নির্ভরযোগ্য ভিত্তি। মা শ্রমিকেরা এখন শুধু শ্রমিক নন — তারা হচ্ছেন পরিবারের চালিকাশক্তি, সন্তানদের ভবিষ্যতের স্থপতি, এবং সমাজ পরিবর্তনের নীরব বিপ্লবী।

এখন অনেক মা শ্রমিককে পরিবারেই সম্মান দেওয়া হয়, তাদের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যদিও সমাজের পুরো চিত্র এখনো রঙিন হয়নি, তবু এই ধীর পরিবর্তনের ধারায় আশা জাগে — যে একদিন কোনো মা’কে আর শুনতে হবে না, “তোমার কাজের দরকার কী?”

কারখানার মেশিন বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই শেষ হয় না মা শ্রমিকের কাজ। বরং সেখান থেকেই শুরু হয় তার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় — এক অনিঃশেষ দায়িত্বের তালিকা। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীরে, তারা নামেন রান্নাঘরে। একদিকে ঘরের কাজ, অন্যদিকে সন্তানের পড়াশোনা, অসুস্থ শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা, কাপড় ধোয়া, পানি আনা, বাজার করা — সবই যেন তার একার দায়িত্ব। অনেক সময় স্বামী হয়তো বেকার, অথবা আয়ের উৎস অনিয়মিত। এমনকি কর্মক্ষম হলেও অনেক পুরুষ এখনও মনে করেন — “ঘরের কাজ মেয়েদের”। ফলে একজন মা শ্রমিক শুধু তার নিজের নয়, গোটা সংসারের ভার কাঁধে তুলে নেন। সংসারের অর্থনৈতিক দায়িত্ব, দৈনন্দিন যত্ন, মানসিক চাপ — সব একসাথে সামলাতে হয় তাঁকে।

এই দ্বৈত দায়িত্ব পালনকে বলা হয় ‘ডাবল শিফট’। জাতিসংঘের নারী উন্নয়ন সংস্থা UN Women–এর ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উন্নয়নশীল দেশে কর্মরত নারীদের ৭৮%–এর বেশি নিয়মিতভাবে কর্মস্থল থেকে ফিরে ঘরের সকল কাজ একাই সম্পন্ন করেন, যেটি পুরুষদের মধ্যে মাত্র ২৪%। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বৈষম্য আরও প্রকট, বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিক মায়েদের ক্ষেত্রে।

তারা কাজ করেন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা বা তারও বেশি সময়। তারপর শুরু হয় রান্নাবান্না, কাপড় ধোয়া, শিশুর পড়াশোনায় নজর রাখা। কারও সন্তান অসুস্থ, কারও স্বামী অযত্নে — তারপরও তারা কারো মুখে বিরক্তি প্রকাশ করেন না। কেবল রাত গভীর হলে ক্লান্ত শরীর বিছানায় রাখেন — তাও মাথায় পরের দিনের কাজের চিন্তা। তাদের এই অদৃশ্য শ্রম, যা কোনও আর্থিক পরিমাপ বা স্বীকৃতিতে ধরা পড়ে না, সেটিই আসলে পরিবারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। আর তার পেছনে আছে একজন মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, অক্লান্ত পরিশ্রম আর মানসিক দৃঢ়তা। এই ডাবল শিফট শুধুমাত্র সময়ের দ্বিগুণ পরিশ্রম নয় — এটি এক মায়ের নিরব যুদ্ধ, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, আর দায়িত্ববোধের অন্তহীন বহিঃপ্রকাশ।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে মায়েদের অবদান অপরিসীম, তবে তাদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা, এবং মাতৃত্বকালীন সুবিধা এখনও পর্যাপ্ত নয়। মাতৃত্বকালীন ছুটি, যা আইন অনুযায়ী ১৬ সপ্তাহের হলেও, বাস্তবে অনেক মা শ্রমিককে এটি দেওয়া হয় না। কিছু কারখানায় মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় বা মায়েদের কাজে ফেরার জন্য চাপ দেওয়া হয়, যার ফলে সন্তানের প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে তারা বাধ্য হন না। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে ডে-কেয়ার সেন্টারের অভাব, যার কারণে মায়েরা কর্মস্থলে থাকাকালীন তাদের শিশুদের সঠিক দেখাশোনা করতে পারেন না। এই অভাবের কারণে, অনেক মায়ের পক্ষে সন্তানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও, অনেক কারখানায় স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা অনুপস্থিত, যার কারণে কর্মরত মায়েরা শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হলেও চিকিৎসা পায় না। রাতের শিফটে কাজ করা মায়েদের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি আরো বাড়ে, যেহেতু কারখানায় সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই এবং যাতায়াতের পথে ঝুঁকি থাকে।

ILO’র ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের বেশিরভাগ গার্মেন্টস কারখানায় এই সমস্যাগুলি অবহেলিত। যদিও সরকারের নীতিমালা রয়েছে, তবুও অনেক ছোট-মাঝারি কারখানায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দেশের অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যদি মায়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন, তবে তা দেশের উন্নয়নেও সহায়ক হবে। এক্ষেত্রে সরকার এবং কারখানা মালিকদের উচিত মায়েদের নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করা, যাতে তারা শুধু অর্থনৈতিক অবদান নয়, তাদের সন্তান ও পরিবারের প্রতি দায়িত্বও সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে।

গার্মেন্টস মায়েরা প্রতিদিন যে আত্মত্যাগ করেন, তা অবর্ণনীয়। সন্তানের অসুস্থতা, প্রথম হাঁটা বা প্রথম কথা বলা মিস করার মতো মুহূর্তগুলো তারা নীরবে সহ্য করেন। এভাবে তারা জীবনের অনেক আনন্দকে বিসর্জন দেন, শুধুমাত্র দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কাজে নিয়োজিত থেকে। তাদের এই আত্মত্যাগের কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই, কিন্তু তবুও তারা প্রতিদিন শান্ত মুখে, মাথা নিচু করে ঘর থেকে বের হয়ে যান, সন্তানের প্রয়োজনীয় যত্ন না নিতে পারার যন্ত্রণা সহ্য করে কাজ করেন। এই মা শ্রমিকরা কেবল তাদের পরিবার নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যদিও তাদের ত্যাগ কখনোই যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না।

গার্মেন্টস শিল্পে মায়েরা প্রায়ই পেশাগত বৈষম্যের শিকার হন। সন্তান থাকার কারণে তাদেরকে প্রায়ই অতিরিক্ত দায়িত্ব কম দেওয়া হয়, যা পদোন্নতির সুযোগ সীমিত করে। সন্তান বা পরিবারের কারণে কিছু সময়ের জন্য অনুপস্থিত থাকলে, তাদের “কম উৎপাদনশীল” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যা তাদের পেশাগত জীবনকে প্রভাবিত করে। তবে, একজন মা যে পারিবারিক ও পেশাগত দায়িত্ব একসাথে সফলভাবে পালন করেন, তা পুরুষের তুলনায় অনেক বড় সাফল্য। এই বৈষম্য দূর করতে, মায়েদের সমান সুযোগ ও সুবিধা প্রদান করা উচিত, যাতে তারা তাদের পেশাগত জীবনেও সফল হতে পারেন।

বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ, যেমন ভিয়েতনাম, কেম্বোডিয়া এবং ইথিওপিয়া, গার্মেন্টস মায়েদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করে তাদের কর্মজীবনকে সহজতর করতে এগিয়ে এসেছে। এসব দেশে মা শ্রমিকদের জন্য শিশু সেবা কেন্দ্র, স্বাস্থ্য বীমা, এবং মাতৃত্বকালীন ছুটি বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। অনেক কারখানায় স্তন্যদান কেন্দ্র, বিশ্রাম সময়, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা সরবরাহ করা হয়, যা মা শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। তবে, বাংলাদেশে কিছু বড় কারখানায় এই সুবিধাগুলি থাকলেও, অধিকাংশ শ্রমিক এখনো ন্যূনতম সুবিধা থেকেও বঞ্চিতবিভিন্ন গবেষণা যেমন ২০২৩ সালের Better Work Asia Review প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অধিকাংশ কারখানায় মা শ্রমিকদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা এবং বিশ্রামের সুযোগ পর্যাপ্ত নয়। এর ফলে, মায়েরা কাজের চাপের সাথে শারীরিক ও মানসিকভাবে অতিরিক্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে মা শ্রমিকদের প্রতি সমাজ, মালিকপক্ষ, এবং সরকারের সম্মিলিত দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কাজের পরিবেশ এবং সামাজিক অবস্থান উন্নত করতে হলে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

প্রথমত, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, স্বাস্থ্যসেবা, এবং ডে-কেয়ার সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মা শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মস্থল, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, এবং শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করলে তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, এবং তারা আরও উৎপাদনশীল হতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, মা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, আত্মমর্যাদা, এবং পদোন্নতির পথ উন্মুক্ত করতে হবে। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা, এবং পেশাগত উন্নতির সুযোগ প্রদান করা খুবই জরুরি। এটি শুধু তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, বরং তাদের পরিবার ও সমাজের জন্যও উপকারী হবে। তৃতীয়ত, গণমাধ্যম, পাঠ্যবই, এবং জাতীয় দিবস উপলক্ষে মা শ্রমিকদের অবদান নিয়ে আলোচনা করা উচিত। তাদের এই অবদান সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মকে জানানো দরকার, যাতে তারা তাদের আত্মত্যাগ, পরিশ্রম এবং দেশপ্রেমে গর্ব অনুভব করতে পারে। এই পদক্ষেপগুলো তাদের অবদানের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করবে এবং সমাজে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান সৃষ্টি করবে। এই সমস্ত উদ্যোগ মায়ের কাজের পরিবেশকে আরও উন্নত করবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও অবদান রাখবে।

তারা শুধু সন্তান জন্ম দেন না, তারা দেশ গড়েন। তাদের নিঃশব্দ প্রচেষ্টায় তৈরি হয় কোটি কোটি ডলারের পণ্য, তাদের ঘামে তৈরি হয় দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ। এই মায়েরা, যাদের নিরলস শ্রমের কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আকাশচুম্বী উন্নতির পথে, তারা এক একটি নীরব নির্মাতা, যাদের অবদান কখনোই ঠিক মতো মূল্যায়িত হয় না। মা দিবসে ফুলের তোড়া নয়, দরকার সম্মান, ন্যায্য মজুরি, এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ — এটাই হোক তাদের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। তাঁদের যন্ত্রণাময় যাত্রার এক এক পৃষ্ঠা প্রতিদিন উল্টাতে উল্টাতে তারা শুধু পরিবার নয়, পুরো দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেন। মায়েরা আমাদের জন্য এক অকৃত্রিম শক্তির নাম, যারা নিজের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য এবং আনন্দ বিসর্জন দিয়ে আমাদের ভবিষ্যত গড়ে তোলেন। এখন সময় এসেছে তাদের সেই অমূল্য অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার। আমাদের কর্তব্য, তাদের জন্য নতুন এক দিগন্তের পথ উন্মোচন করা, যাতে তারা অবিরাম কাজ করার পাশাপাশি, এক শানিত প্রাপ্তির মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারেন। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, এবং ন্যায্য অধিকার—এগুলোই হবে তাদের জীবনের সেরা উপহার।