ডেস্ক রিপোর্ট : সাভারের রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের নাম বেঁচে চাঁদা-ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। স্থানীয় যুবলীগ নেতাসহ অনেকে এর সঙ্গে জড়িত।
বিধ্বস্ত রানা প্লাজা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন ও ব্যস্ততম সাভার স্ট্যান্ডে হওয়ায় এর সামনের অংশের পজেশনের চাহিদা এখানকার ব্যবসায়ীদের কাছে লোভনীয়। তাই রানা প্লাজায় হতাহতদের তিন-চারজনকে এখানে দোকানের জায়গা দিয়ে বাকি প্রায় বিশটি দোকান বসানো হয়েছে। তা থেকে তোলা হচ্ছে মাসিক চাঁদা। এমনকি বিধ্বস্ত রানা প্লাজার জায়গাটিতে চাষ করা হচ্ছে মাছ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রানা প্লাজার সামনের অংশে ২০টির বেশি অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে। আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে ব্যবসা করছেন তারা। যদিও বলা হচ্ছে, রানা প্লাজা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দোকান, আসলে সেখানে দু-তিনজন ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক পরিবারের সদস্যকে দোকান করতে দেয়া হয়েছে। আর তাদের নাম বেঁচে বিধ্বস্ত রানা প্লাজার সামনের অংশে যত্রতত্র দোকান বসিয়ে সেগুলো থেকে মাসিক চাঁদা তুলছেন স্থানীয় যুবলীগের পাভেলসহ বেশ কয়েকজন।
তাদের হয়ে কালা নামের এক ব্যক্তি এসব দোকান দেখভাল করছেন বলে স্থানীয় সূত্র জানায় জানায়।
সূত্র জানায়, কালা মূলত এখানকার দোকানগুলো থেকে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা করে চাঁদা তোলেন। আর দোকানের অগ্রিম বাবদ আট থেকে ১০ হাজার টাকাও তার কাছেই জমা দিতে হয়। কালার নিজেরও এখানে সাতটি দোকানের পজেশন রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে পাভেলের বোন, রানা প্লাজার দুর্ঘটনার সময় যিনি উদ্ধারকর্মীর কাজ করেছেন, তিনি এগুলো দেখভাল করতেন। কিন্তু পাভেলের দাপটের কাছে হেরে বোন খুকি আর এখানে চাঁদার টাকা নিতে আসেন না। এ ছাড়া রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের স্মরণে বানানো স্মৃতিফলক ঘেষে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দোকানিরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তাদের ভয় এতে তাদের ব্যবসার পজিশন হারানো এবং ব্যবসায় ঝামেলা হবে। তবে এখানে সব সময় অবস্থান করেন এমন বেশ কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রানা প্লাজার সামনের জায়গায় পজেশন নেয়ার জন্য বেশির ভাগ দোকান মালিক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই রানা প্লাজার নিহত শ্রমিকদের স্বজন পরিচয় দিয়ে দোকান নির্মাণ করেছেন। সত্যিকার অর্থে তারা নিহত শ্রমিকদের কেউ নন। তবে এদের মধ্যে এক-দুজন নিহতের স্বজন রয়েছেন।
দোকান ব্যবসার পাশাপাশি রানা প্লাজার সামনে গড়ে উঠেছে রেন্ট-এ-কারের ব্যবসা। এর জন্য রয়েছে মাসিক চাঁদা। তবে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি নন রেন্ট-এ-কারের চালকরা।
প্রতি বছর রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দিনটি ঘিরে এখানে প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন আসে বলে আগের রাতে চলে এসব দোকান উচ্ছেদ। তবে ‘উচ্ছেদ অভিযান’ প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয় না। দোকানিরা নিজেরাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রাতের আঁধারে সরিয়ে নেন অস্থায়ী দোকানগুলো। আবার ২৫ এপ্রিল সেখানে ফিরে আসেন তারা।
এ ব্যাপারে কথা বলতে পাভেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মতামত লিখুন :