Logo

এনজিও এবং শ্রম আইনের প্রয়োগ

RMG Times
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
  • শেয়ার করুন

ড. উত্তম কুমার দাস : আমাদের কাছে একজন জানতে চেয়েছেন বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও’র ক্ষেত্রে শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে কি না?

প্রথমে দেখতে হবে বেসরকারির সংস্থা বা এনজিও’র কোন বিষয় নিয়ে আপনি কথা বলছেন।

এনজিও’র গঠন, রেজিস্ট্রেশন, কার্যক্রম পরিচালনা এবং তার জন্য অনুদান গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে।

তবে বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও’র শ্রম নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত (Employment relations) বিষয় বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (ও তার বিধিমালা, ২০১৫) এর আওতায় পড়বে।

 

যদিও শ্রম আইন কতিপয় বেসসরকারি সংস্থাকে শ্রম আইনের সাধারণ প্রয়োগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- অসুস্থ, অক্ষম, দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী, এতিম, মহিলা, বা শিশু অথবা বিধবাদের চিকিৎসা, যত্ন বা সেবার জন্য পরিচালিত কিন্তু মুনাফা বা লাভের লক্ষ্যে পরিচালিত নয়, এইরূপ কোন প্রতিষ্ঠান [শ্রম আইন, ধারা ১(৪)(ঘ)]।

এর আলোকে ধরে নেওয়া যায় এহেন সংস্থার নিয়োজিত শ্রমিকরা শ্রম আইনের আওতায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারী নয়।

তবে এহেন সংস্থায় যারা কাজ করেন সেসব শ্রমিক বা কর্মীর নিয়োগ ও চাকরীর শর্তাবলী, প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা, কর্ম ঘণ্টা ও ছুটি, দুর্ঘটনাজনিত কারণে জখমের ক্ষতিপূরণ প্রভৃতি কোন আইনে পরিচালিত হবে?

প্রাসঙ্গিক অন্য আইনের অনুপস্থিতিতে এইক্ষেত্রে অবশ্যই শ্রম আইনের বিধান প্রযোজ্য হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা এই ক্ষেত্রে নিজস্ব বিধান করলেও তা শ্রম আইন প্রদত্ত অধিকার ও সুযোগের চেয়ে কম হতে পারবে না (শ্রম আইন, ধারা ৩)।

আর উপরে উল্লেখিত তালিকার বাইরে যে সব সংস্থা তাদের ক্ষেত্রে শ্রম আইন সরাসরি প্রযোজ্য হবে (শ্রম আইন, ধারা ১)।

ধরা যাক একটি বেসরকারি সংস্থা গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে। তাদের সুবিধাভোগী যারা (নারী শ্রমিকসহ) তারা প্রথাগতভাবে দুস্থ নয়; কারণ তাঁদের নুন্যতম মাসিক মজুরী ৫,৩০০/- টাকা বা তার বেশী। তাই এই ধরণের সংস্থা একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে শ্রম আইনের আওতায় পড়বে।

শ্রম আইন অনুসারে, প্রতিষ্ঠান হ’ল এমন কোন দোকান, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, পরিবহন, শিল্প-প্রতিষ্ঠান অথবা বাড়ি-ঘর বা আঙ্গিনা যেখানে কোন শিল্প পরিচালনার জন্য শ্রমিক নিয়োগ করা হয় [শ্রম আইন, ধারা ২(৩১)]। এখানে শিল্প বলতে পণ্য উৎপাদন বা কোন সেবা প্রদানকেও বুঝাবে।

তাই কোন বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওতে (যে কোন ধরণের) তার দপ্তর বা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যেসব শ্রমিক বা কর্মচারী নিয়োগ করা হয় তারা শ্রম আইনের আওতায় সুরক্ষা পাবেন। অর্থাৎ তাদের নিয়োগ, ছাঁটাই, বরখাস্ত, অপসারণ, টার্মিনেশন, অবসর প্রভৃতি শ্রম আইনের নিয়ম অনুযায়ী হবে।

এটা নুন্যতম মানদণ্ড। এর চেয়ে বেশী সুবিধা দেওয়া যাবে, তা দোষের নয়; তবে কম নয়, কম হলে তা বে-আইনি হবে।

আর শ্রমিক হলেন যিনি মজুরীর বিনিময়ে দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারগরি, ব্যবসা উন্নয়নমূলক প্রভৃতি কাজ করেন [শ্রম আইন, ধারা ২(৬৫)]।

তবে যারা প্রধানতঃ প্রসাশনিক, তদারকি বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজ করেন তারা শ্রমিকের এই সংজ্ঞার আওতায় পড়বেন না এমনটি বলা হলেও আমাদের সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্ত রয়েছে যে কারও শুধুমাত্র পদবী দেখে বলা যাবে না যে কে শ্রমিক আর কে শ্রমিক নয়। বরং তার কাজের ধরণ বিবেচনায় নিয়ে তা দেখতে হবে। এই ক্ষেত্রে কোন সাধারণীকরণ চলবে না।

দ্রষ্টব্য: এই লেখা একটি বিশ্লেষণ, সম্পূর্ণ আইনী পরামর্শ নয় এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি। আপনার সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট আইন দেখুন এবং এই বিষয়ে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সংগে পরামর্শ করুন।

পরামর্শক: ড. উত্তম কুমার দাস, এলএল.এম. (যুক্তরাষ্ট্র), পিএইচ.ডি. (আইন), এডভোকেট, সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ

ই-মেইলঃ [email protected], ফোনঃ ০১৭৫৬ ৮৬৬৮১০।