Logo

ঘোষিত সময়ে সব পোশাক শ্রমিক ঈদ বোনাস পাননি

RMG Times
মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন ঈদ উপলক্ষে পোশাক খাতের শ্রমিকদের উৎসব ভাতা পরিশোধে মালিক পক্ষকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গঠিত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটি। সরকারের নির্দেশনা থাকার পরও তৈরি পোশাকশিল্পের সব মালিক গতকাল সোমবারের মধ্যে শ্রমিকদের ঈদ বোনাস বা উৎসব ভাতা পরিশোধ করেননি। অবশ্য কত শতাংশ কারখানা ভাতা দিয়েছে কিংবা দেয়নি, সেই হিসাব পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, শ্রমিকনেতা এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর জানাতে পারেনি।

শিল্প পুলিশের হিসাবে গতকাল পর্যন্ত তাদের আওতাধীন প্রায় ২৫ শতাংশ কারখানা উৎসব ভাতা পরিশোধ করেনি। যদিও পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, গতকাল পর্যন্ত উৎসব ভাতা পরিশোধ করেনি সংগঠনটির ১৮ শতাংশ সদস্য কারখানা। আর শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, ৪০ শতাংশ কারখানাই এখনো বোনাস দেয়নি।

প্রতি বছর ঈদের আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গঠিত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় মালিক-শ্রমিক-সরকার— তিন পক্ষই আলোচনা করে বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। বোনাস বা উৎসব ভাতা পরিশোধের শেষ সময় ছিল গতকাল ৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু বরাবরের মতো এবারো কথা রাখেননি মালিকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শ্রমিককে কাজে ধরে রাখতে শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত বেতন-বোনাস আটকে রাখেন মালিকরা। এছাড়া অনেকে সামর্থ্যের ঘাটতি এবং কাজ না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে সময়মতো বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারেন না। এমন অবস্থায় দাবি আদায়ে কাজ বন্ধ করে দেয়ার কৌশল নেন শ্রমিকরা। এবারো এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বেতন-বোনাসের দাবিতে গতকালও বেশকিছু কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন। পরে বকেয়া পরিশোধ করে পরিস্থিতি সামাল দেয় মালিকপক্ষ।

এ বিষয়ে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ  বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে দিন-তারিখ নির্ধারণ হলেও সেই সময়ের মধ্যে বোনাস পরিশোধ প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। তবে বোনাস পরিশোধ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই এবং এখনো তা চলছে। ঠিক কয়টি কারখানা তা পরিশোধ করেছে সেই সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না। কিছু কারখানায় খুব গৌণ কিছু সমস্যা সৃষ্টির খবর আমাদের কাছে এসেছে, তার সমাধানও হয়েছে।

শিল্প পুলিশ অধ্যুষিত চারটি শিল্পাঞ্চল— আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানা আছে ৩ হাজার ২৫৮টি। এর মধ্যে গত রোববার পর্যন্ত এ চার এলাকার ১ হাজার ১২৭টি পোশাক কারখানা শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। সেই হিসাবে এখনো প্রায় ২৫ শতাংশ কারখানার শ্রমিকরা এখনো উৎসব ভাতা পাননি।

এদিকে শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, গতকাল ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংগঠনের সদস্য ৮২ শতাংশ কারখানায় বোনাস পরিশোধ হয়েছে। এ হিসাবে ১৮ শতাংশ কারখানায় উৎসব ভাতা এখনো পরিশোধ হয়নি। তবে জুলাইয়ের বেতন পরিশোধ হয়েছে শতভাগ কারখানায়। আর আগস্টের বেতন প্রদান হয়েছে ১১ শতাংশ কারখানায়। এখনো কোনো কারখানায় ঈদের ছুটি দেয়া হয়নি।

বিজিএমইএ সূত্র আরো জানায়, বেতন-বোনাস পরিশোধ প্রক্রিয়া নিয়ে সংগঠন থেকে মোট ৫১৯টি কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এমন কারখানা ছিল আটটি। বিজিএমইএর সহায়তায় তার সমাধানও হয়েছে। দুটি কারখানার সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়াধীন।

বিজিএমইএ সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, বেতন-বোনাস পরিশোধ প্রক্রিয়াধীন। শেষ দিন পর্যন্ত এটা চলবে। সরকার দিন-তারিখ ঘোষণা দিলেও মূলত মালিক-শ্রমিক সমঝোতার ভিত্তিতেই বেতন-বোনাস পরিশোধ প্রক্রিয়া শেষ হয়।

এদিকে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন সংগঠন সূত্র বলছে, আইন অনুযায়ী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে বেতনসহ অন্যান্য বকেয়া পরিশোধ করতে হয়। স্বাভাবিক সময়ে এ তারিখের মধ্যে পরিশোধ হয় না। এবার ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকরা আশা করছেন, আইন অনুযায়ী ১০ তারিখের সব বকেয়া পেয়ে যাবেন। চলতি মাসের শুরু থেকে উৎসব ভাতা পরিশোধ শুরু হয়েছে মালিক-শ্রমিক সমঝোতার ভিত্তিতে। তবে গতকাল সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ শেষ হয়নি।

বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, বড় কারখানাগুলোয় বোনাস পরিশোধ শেষ হয়েছে। তবে ছোট ও মাঝারি ধরনের ৪০ শতাংশ কারখানা আছে যারা পরিশোধ নিয়ে বরাবরের মধ্যেই গড়িমসি করছে। সেই হিসেবে বলা যায়, ৪০ শতাংশ কারখানা এখনো বোনাস পরিশোধ করেনি। শেষ কর্ম দিবসের মধ্যে পরিশোধ শেষ হলেও বেতন, ওভারটাইম ও বোনাস পূর্ণাঙ্গ পাবেন না এমন আশঙ্কা রয়ে গেছে।

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, কিছু কারখানা শ্রমিকরা পুরনো বকেয়াই পরিশোধ করতে পারেনি। সেসব কারখানা শ্রমিকের দাবি আদায়ের চেষ্টা করছি। তাই ঈদের আগে গত মাসের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।