Logo

জিআইজেডের সহযোগিতায় OHSAS 18001 সনদ পেলো ২১ টি কারখানা

Fazlul Haque
বুধবার, জুন ১৫, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পেশাগত ঝুঁকি নিরসনে গত দুই বছরে জিআইজেডের সহায়তায় ২১টি পোশাক ও লেদার ফুটওয়্যার কারখানা স্বেচ্ছায় OHSAS 18001 পদক্ষেপসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছে। ১৫ জুন ঢাকার রেডিসন ব্লু পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কারখানাগুলোর প্রতিনিধিদের সনদপত্র প্রদান করা হয়।

Photo_GIZ Bangladesh

OHSAS 18001 নামে পরিচিত এই মানদণ্ডটি শিল্প শ্রমিক ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা বিষয়ক বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত একটি পরিমাপক। বাংলাদেশ ও জার্মান সরকারের যৌথ প্রকল্প সাপোর্ট টু দ্যা হেলথ সেক্টর প্রোগ্রাম ২ (এসএইচএসপি ২) আয়োজিত অনুষ্ঠানটির লক্ষ্য ছিল উক্ত কারখানাসমূহে OHSAS 18001 বাস্তবায়নের ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে জিআইজেড, যা জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএমজেড)-এর পক্ষে কাজ করে। এখন পর্যন্ত শিল্পকারখানায় যেসব “ওএইচএস” পদক্ষেপের বাস্তবায়ন হয়েছে, সেগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন। এসব ক্ষেত্রে কোনো সুশৃঙ্খল কর্মপন্থা অবলম্বন করা হয়নি। পেশাগত ঝুঁকি নিরসনে অসংখ্য পদক্ষেপ নেয়া হলেও ওএইচএস পদক্ষেপ পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি একক মানদণ্ডের অভাব রয়েছে এখনও। গত দুই বছরে জিআইজেডের সহায়তায় ২১টি পোশাক ও লেদার ফুটওয়্যার কারখানা স্বেচ্ছায় OHSAS 18001 পদক্ষেপসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে শিল্পকারখানা ও শ্রমিকদের মাঝে প্রাণবন্ত, গতিময় ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য উঠে আসে ডিবিএল গ্রুপের সহকারী ব্যাবস্থাপক, সাসটেইনিবিলিটি, জনাব মাশুক মুজিব চৌধুরীর বক্তব্যে। তার কারখানায় OHSAS 18001 বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “এরকম মানদণ্ডের বাস্তবায়ন শুধু নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তা শিল্পকারখানার জন্য সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক মঙ্গল ও বয়ে আনে”। এসব অর্থনৈতিক সুবিধার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমা বাজারে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন। কারখানায় বিভিন্ন শ্রমবান্ধব মানদণ্ডের অনুসরণের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেয় পশ্চিমা বাজারগুলি। রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের মতো মর্মান্তিক ঘটনাগুলির পর এই গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সুবিধা নিশ্চিত করলে তাদের কাজের স্পৃহা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, কর্মস্থলে দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের ক্ষেত্রে বিশাল অংকের খরচের যে ঝুঁকি থাকে, এ ধরণের পদক্ষেপের ফলে সেই ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।

কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি সর্বোপযোগী কর্মপন্থার চাহিদা সৃষ্টি করায় জিআইজেডের প্রশংসা করেন বিজিএমইএ-এর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি জনাব ফারুক হাসান।

বাংলাদেশে জার্মান ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি মিস রজওইথা আমেলস তার বক্তব্যে বাংলাদেশের শ্রম খাতের সার্বিক মানোন্নয়নে জার্মান দূতাবাসের সহায়তা ও নিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন।

একই বিষয়ে কথা বলেন ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্সপেকশন ফর ফ্যাক্টরিজ অ্যান্ড এস্টাব্লিশমেন্ট (ডিআইএফই)- এর ইন্সপেক্টর জেনারেল জনাব সৈয়দ আহমেদ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মিকাইল শিপার। তিনি বলেন, “শ্রম নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিপাদনযোগ্য মানদণ্ড অনুসরণে তার মন্ত্রণালয় বদ্ধপরিকর। যেহেতু বাংলাদেশের শিল্প খাতে অগ্নি, ভবন ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলির সমাধানে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে, এখন সময় এসেছে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি মানদণ্ড কার্যকর করার মাধ্যমে ওএইচএস বিষয়ক একটি সর্বোপযোগী কর্মপন্থা গ্রহণের। বিভিন্ন কারখানায় সহায়তা প্রদান ও অন্যদের জন্য অনুসরণীয় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনে জার্মান সরকারের অবদানের আমি প্রশংসা করছি”।

সমাপনী অনুষ্ঠান শুরু হয় ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস)-এর অধীন নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)-এর লাইন ডিরেক্টর ড. ফারুক আহমেদ ভূঁইয়ার বক্তব্যের মাধ্যমে।

তৈরি পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য খাতে ওএইচএস পদক্ষেপসমূহের প্রচার ও প্রসারের স্বার্থে বিদ্যমান বিভিন্ন কেস স্টাডি ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ওএইচএস বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পোশাক কারখানা ও শিল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতির ফলে মতবিনিময় প্রক্রিয়াটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয় এবং নানামূখী পরামর্শ উঠে আসে।