Logo

বেআইনী ভাবে কর্মকর্তাদের চাকরীচ্যুত করছে মেসিটন বাংলাদেশ

Fazlul Haque
বুধবার, জুন ১৫, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক : আইন বহিঃর্ভূত ও অন্যায় ভাবে কর্মকর্তা কর্মচারী ছাঁটাই করছে জার্মানী ভিত্তিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান  Karl Rieker GMBH এর বাংলাদেশ লিয়াজো অফিস মেসিটোন বাংলাদেশ (Maceton Bangladesh) । গত তিনমাসে প্রায় ১১/১২ জন কর্মকর্তাকে  জোরপূর্বক চাকরীচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে বিদেশি এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।  স্বল্পকালীন নোটিশে একাধিক কর্মকর্তাকে চাকরীচ্যুত করা হলেও কাউকেই দেয়া হয়নি সার্ভিস বেনিফিট কিংবা অন্যান্য আইনগত কোন সুযোগ সুবিধা। কোম্পানি টি মুলত জার্মানি ভিত্তিক পোশাক ব্র্যান্ড  ALDI এর পোশাক সরবরাহ করে থাকে।

চাকরীচ্যুত করার পরে আইনগতভাবে প্রাপ্য সার্ভিস বেনিফিট বা অন্যান্য  সুযোগ সুবিধার কিছুই আমাকে দেয়া হয়নি। আমি আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে উল্টো আমাকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল করে হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমি এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। একজন বাঙ্গালী মুসলমান মহিলা হিসেবে আমি সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছি। 

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক চাকরীচ্যুত হওয়া একজন নারী কর্মকর্তা আরএমজি টাইমসকে অভিযোগ করে জানান, আমাকে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। হঠাৎ করে একদিন মিউচ্যুয়াল টার্মিনেশন লেটার ধরিয়ে দিয়ে তাতে স্বাক্ষর করতে বলে। কিন্তু আমি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করি। কারন আমি তো টার্মিনেশন চাইনি। তারা জোর করে চাকরীচ্যুত করছে কিন্তু মিউচ্যুয়াল টার্মিনেশন পেপারে স্বাক্ষর দিতে বলছে। এটা মানতে পারিনি। পরে আমাকে একটা রুমে নিয়ে আটকে রাখা হয়। টার্মিনেশন লেটারে স্বাক্ষর না করলে আমাকে বাড়ী ফিরতে দিবেন না বলে হুমকি দেয়া হয়। আমি ভয় পেয়ে উত্তরা মডেল থানায় ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে বাসায় ফিরে আসি। থানায় সাধারণ ডায়েরী করি প্রতিষ্ঠানটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইমরানের নামে। কারণ তিনিই আমাকে আটকে রেখে স্বাক্ষর করতে জোর করেছেন। কিন্তু দুদিন পরে আমাকে ডিসমিসাল সামারী লেটার ধরিয়ে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে জোরপূর্বক চাকরীচ্যুত করা হয়।

তিনি আরও জানান, চাকরীচ্যুত করার পরে আইনগতভাবে প্রাপ্য সার্ভিস বেনিফিট বা অন্যান্য  সুযোগ সুবিধার কিছুই আমাকে দেয়া হয়নি। আমি আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে উল্টো আমাকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল করে হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমি এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। একজন বাঙ্গালী মুসলমান মহিলা হিসেবে তিনি সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, খবরে আমার নাম প্রকাশ হলে ওরা (কোম্পানি) আমার অনেক ক্ষতি করে ফেলবে। একইভাবে আরও অনেক কর্মকর্তা চাকরি হারিয়ে পথে বসেছেন বলে তিনি জানান।


Read this article in English : Maceton Bangladesh (KARL RIECKER), a German based Buying agent fired their employees illegally.


একইভাবে মেসিটন থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ মুহিদুল ইসলাম বাবু। আরএমজি  টাইমসকে বাবু বলেন,  কোম্পানীর ব্যবসায়িক মন্দার অজুহাতে আমাকে সহ আরও ৩ জনকে একসাথে টার্মিনেট করা হয়। টানা প্রায় পাঁচ বছর (২০১১ ইং-২০১৬ ইং) এই প্রতিষ্ঠানে চাকরী করার পর কোনো সার্ভিস বেনিফিট ছাড়াই আমাদের ছাঁটাই করা হয়। অফিসের পিছে অনেক ঘুরেছি। কিন্তু প্রতিবার খারাপ ব্যবহার করেছে মেসিটনের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা। শেষমেষ বাধ্য হয়ে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি। দেশের খ্যাত নামা শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ এডভোকেট জনাব জাফরুল হাসান শরিফ সাহেবের মাধ্যমে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন বলে বাবু জানান। উকিল নোটিশ গত ১৩ তারিখে মেসিটোন কর্তৃপক্ষ হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন এই চাকরীচ্যুত কর্মকর্তা।

বাবু আরও উল্লেখ করেন, কোম্পানীর অবস্থা খারাপ বলে আমাদের চাকরীচ্যুত করা হলেও এক মাস যেতে না যেতেই একই পদে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এটি আমাদের সাথে প্রতারনা করা হয়েছে। তাদের ৪ জন ছাড়াও পরবর্তীতে আরও ৭ জন কর্মকর্তাকে একই কায়দায় অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তাদেরকেও কোনো বেনিফিট দেয়া হয়নি। এভাবে কোনোরকম সুবিধা না দিয়ে চাকরীচ্যুত করতে কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই কোম্পানীকে প্ররোচিত করেছে বলে তিনি দাবি করেন।এ ক্ষেত্রে তিনি সিএসআর ম্যানেজার ইমরান ও কোয়ালিটি ম্যানেজার ফিলিপাইন নাগরিক ট্রেছি’র প্রতি অভিযোগের ইঙ্গিত দেন।

একই সময় মেসিটন থেকে চাকরীচ্যুত হয়েছেন আরেক মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বিপ্লব। তিনি আরএমজি টাইমসকে বলেন, হঠাৎ চাকরীচ্যুত করায় খুব বিপদে আছি। চার মাস ধরে বেকার। সামনে ঈদ। কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না। ইতিমধ্যে দুটি ডিপিএস ভেঙে ফেলেছি। ব্যবসায়িক মন্দা যাচ্ছে বলে আমাকেসহ একাধিকজনকে চাকরীচ্যুত করা হলেও পরের মাসেই নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম কিংবা কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ নাই।

তিনি বলেন, চাকরী হারিয়েছি। সার্ভিস বেনিফিট কিংবা কোম্পানী প্রদত্ত কোনো সুযোগ সুবিধা পেলাম না। অনেক ঘুরেছি। সহকর্মীদের সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু সবাই নিরব। শেষমেষ আইনের আশ্রয় নিয়ে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি। এখন আইনী সমাধানের অপেক্ষায় আছি।

গত ৯ জুন অভিযোগ পাওয়ার পর পর আরএমজি টাইমসের পক্ষ থেকে কোম্পানির প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক মিস আইরিন রয় এর সাথে কথা বলতে কয়েকবার চেষ্টা করে অবশেষে কথা বলতে সমর্থ্য হলেও তিনি এসব অভিযোগ সম্পর্কে কোন মতামত প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং কোম্পানির আইনজীবি আরএমজি টাইমসের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। ৫ দিন অপেক্ষার পরেও কোন আইনজীবির ফোন না পেয়ে আবার মিস আইরিনের সাথে কথা বলতে গত ১৪ তারিখে অনেকবার চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করা যায়নি।

ভুক্তভোগী কর্মকর্তাদের আইনজীবি জনাব জাফরুল হাসান শরিফের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাদের চাকরীচ্যুত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে অন্য আরেকটি বহুজাতিক বায়িং কোম্পানি থেকে সদ্য চাকরিচ্যুত এক কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাকে হঠাৎ চাকরীচ্যুত করা হবে বলে নোটিশ প্রদান করে সকল হিসেব বুঝিয়ে দিয়েছে কোম্পানি। তবে এভাবে চাকরি হারানো অত্যন্ত কষ্টের ও অমানবিক।

আরএমজি টাইমস প্রতিনিধির সাথে এ বিষয়ে কথা হয় একটি বহুজাতিক অডিট কোম্পানির এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধির সঙ্গে। তিনি বলেন, এভাবে টারমিনেট করা অন্যায়। কোম্পানি বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী ছাঁটাই করতে পারেন তবে একই ধারায় উল্লেখিত সুবিধা প্রদান কতে হবে। শ্রম আইনের ২৬ ধারা মতেও চাকরির অবসান হতে পারে সেই ক্ষেত্রেও ধারা মোতাবেক সুবিধাদি প্রদান করতে হবে। তবে, কোম্পানি যেহেতু একই পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করেছেন সে ক্ষেত্রে ধারা ২০ এ ছাঁটাই করা এক ধরনের প্রতারনা হতে পারে। আর আইনসিদ্ধ পাওনা শ্রমিককে না দিয়ে থাকলে প্রতিষ্ঠানটি অন্যায় করেছে এবং শ্রম আদালতে যেতে পারেন ভুক্তিভোগি শ্রমিক।

Read this article in English : Maceton Bangladesh (KARL RIECKER), a German based Buying agent fired their employees illegally.


প্রিয় পাঠক, আরএমজি টাইমস আরও বেশ কয়েকটি  ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অফিসগুলোতে ভয়াবহ অনিয়ম ও আইন ভঙ্গের তথ্য প্রমাণ হাতে পেয়েছে। খুব শীগ্রই ধারাবাহিকভাবে তথ্যপ্রমাণসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। আরএমজি টাইমসের সঙ্গেই থাকুন। 

আপনিও যেকোনো তথ্য প্রমাণ দিয়ে সহযোগিতা করুন। পোশাক শিল্পে সকল অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান। পোশাক শিল্পের বিভিন্ন সেক্টর সম্পর্কে আপনার অভিযোগ, অভিমত, পরামর্শ আমাদের জানান। আমরা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছে দেবো।