Logo

আগামী মাস থেকে রপ্তানি আয়ও কমবে : ফারুক হাসান

RMG Times
রবিবার, মার্চ ১৯, ২০২৩
  • শেয়ার করুন


বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, টাকার অংকে বা মূল্যভিত্তিক রপ্তানি বাড়লেও পরিমাণের দিক (অর্ডারের) থেকে প্রবৃদ্ধি হয়নি। বরং আগের বছর তুলনায় পোশাক পণ্য রপ্তানি আয় কমেছে আগামী মাস থেকে মূল্যভিত্তিক রপ্তানি আয়ও কমে যাবে।

শনিবার (১৮ মার্চ) বিজিএমইএর সভা কক্ষে পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিজিএমএর ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, প্রধানত দুটি কারণে রপ্তানি অর্ডার ক্রমাগত কমছে। প্রথমত, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যার প্রভাব পোশাকের মূল্যের উপর পড়েছে।

দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের শিল্পের মূল্য সংযোজিত পণ্যে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ হয়েছে। আমাদের বেশ কিছু কারখানা অপেক্ষাকৃত উচ্চমূল্যে পণ্য রপ্তানি করছে। ফলে পোশাকের ইউনিট প্রাইস বেড়েছে। সুতরাং আমাদের যে হারে মূল্যভিত্তিক প্রবৃত্তি হয়েছে সে অনুপাতে পরিমাণ ভিত্তিক প্রবৃদ্ধি হয়নি।

ফারুক হাসান বলেন, করোনার ক্ষত সেরে উঠতে না উঠতেই আমরা একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখামুখি হয়েছি । সাম্প্রতিক সময়ে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের অর্থনীতি ও শিল্পে। আমাদের প্রধান বাজারগুলোতে, বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব উন্নত দেশের ভোক্তারা ভোগ্যপণ্যের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন, ফলে কমে আসছে পোশাকের চাহিদা। তাই, পোশাকের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নীতিতে যে পরিবর্তনগুলো আসছে সে বিষয়গুলোতে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে, নতুবা আমাদের বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়তে হবে। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মানবাধিকার ও ডিউ ডিলিজেন্স প্রটোকল গ্রহণ করছে, যেগুলো প্রতিপালন করতে আমাদের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমরা সরকারের সঙ্গে একান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নেশন ব্র্যান্ডিংয়ের পাশাপাশি অ্যাপারেল ডিপ্লোম্যাসি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি, যা আপনারা দেখছেন। বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথটি মসৃণ করতে ট্রানজিশন পিরিয়ড বাড়িয়ে ৬ বছর করার জন্য আমরা সরকারের মাধ্যমে সকল প্রেফারেন্স গিভিং দেশগুলোকে অনুরোধ করছি।

তবে আশার বিষয় হচ্ছে, এতসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে থেকেও আমরা রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছি। ২০২২ সালে আমাদের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৫.৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০২১ এর তুলনায় ২৭দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। আর ২০২৩ এর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে আমাদের মোট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০২২ এর একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি।  তবে আমরা যে প্রবৃদ্ধি দেখছি তা মূলত মূল্যভিত্তিক প্রবৃদ্ধি। কিন্তু পরিমাণের দিক থেকে কোন প্রবৃদ্ধি হয়নি, বরং ঋণাত্মক হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গত কয়েক বছর আমরা যে মডেল ফলো করে শিল্পকে এগিয়ে নিয়েছি, তার উপর ভিত্তি করে আগামী দিনে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন হবে। আমাদের বেশ কিছু বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সামনের দিনগুলোতে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, বিশেষ করে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।  বিশেষভাবে, নন-কটন খাতে আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিগত চার দশকে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছালেও আমাদের পণের ম্যাটেরিয়াল ডাইভারসিফিকেশন হয়নি বললেই চলে।

বর্তমানে বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যের ৫২ শতাংশ পণ্য নন-কটনের, সেখানে আমাদের রপ্তানির মাত্র ২৬ শতাংশ নন-কটন। বর্তমান বিশ্বে ভোক্তাদের ক্রমাগত জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নন-কটন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং এই খাতে আমাদের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে বলেছেন। আমরা মনে করি, তার ঐকান্তিক সহায়তায় বিগত বছরগুলোতে আমরা যেভাবে বাজার বহুমুখী করতে সক্ষম হয়েছি, সেই একইভাবে যদি আমরা সরকারের নীতিগত সহায়তা পাই, তবে পণ্য বহুমুখীকরণেও বিশেষ করে নন-কটন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সফল হব।

তিনি বলেন, সার্কুলার ফ্যাশন আজ সাসটেইনেবল ফ্যাশন এজেন্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা ইতিমধ্যে অপচয় কমিয়ে আনা ও সম্পদের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কারখানাগুলোর সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কারখানাগুলো নতুন নতুন টেকনোলজি ব্যবহার, ও প্রসেস আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে তাদের অপচয় কমিয়ে আনছে। এখন আমরা পোস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্ট বা ঝুট কাপড় পুনরায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। বর্তমানে প্রতিবছর টেক্সটাইল ও পোশাক খাত থেকে প্রায় ৫ লাখ টন ঝুট তৈরি হয়। এর একটি অংশ আমরা রপ্তানি করে থাকি, যার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪০০মিলিয়ন ডলার আয় হয়।

কৃতজ্ঞতাঃ ঢাকাপোস্ট