Logo

বাংলাদেশ প্রতিদিন এ প্রকাশিত কলাম নিয়ে বিজিএমইএ‘র সদস্যের মতামত

RMG Times
বুধবার, এপ্রিল ৮, ২০২০
  • শেয়ার করুন

কমর আলম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ফ্লোরেন্স গ্রুপ:  পোশাক শিল্পের একজন উদ্যোক্তা হলেও আমি নিজেকে ৪১ লাখ শ্রমিকের পরিবারের একজন সদস্য বলেই মনে করি। এই পরিবারের ভালো কিছু হলে আনন্দিত হই। আর যে কোন বেদনায় ব্যথিত হই। এই শ্রমিক ভাইবোনদেরকে আমি সহকর্মী, ভাই অথবা বোন হিসেবেই দেখি। পোশাক শিল্পের মতো এতো বড় একটি শিল্পখাতে কিছু বিচ্যুতি থাকতেই পারে। এসব বিচ্যুতির মধ্যে কিছু বিচ্যুতি স্বাভাবিক ঘটনা। আবার কখনো কখনো কিছু বিচ্যুতি অনভিপ্রেতভাবেই ঘটে যায়। পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারাও মানুষ হিসেবে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন এর এই লেখক শিল্প সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে বিজিএমইএ এবং পোশাক মালিকদেরকে অভিযুক্ত করেছেন, যেগুলোর বেশ কয়েকটির দায়দায়িত্ব আসলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার।

আমি মনে করি, যখন সমগ্র দেশ করোনা মহামারী প্রতিরোধ করতে হণ্যে হয়ে যুদ্ধ করছে – শিল্প তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রানপন সংগ্রাম করছে, সে সময়ে এই সম্পাদকীয় পোশাক শিল্পকে সহায়তা না করে শিল্পের সংকট আরও ঘনীভূত করবে।

প্রথমে ২৬ মার্চ রাতে বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকে সদস্যভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারখানা বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়। সেই অনুযায়ী কারখানাগুলো বন্ধ হয় এবং শ্রমিকদেরকে কারখানা বন্ধকালীন সময়ে বাসায় অবস্থান করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পোশাক কারখানা বন্ধের ঘোষনা দেয়া হয় ২৬ মার্চ, যেখানে কিনা ২৪ মার্চ সন্ধ্যা থেকেই শ্রমিকরা ছুটি ভোগ করছিলেন। সুতরাং সে সময়ে শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা সম্ভবপর ছিলো না। যেহেতু গনপরিবহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিলো, তাই শ্রমিকরা যে সেসময়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়তে পারে, সে বিষয়টি মালিকদের ধারনার মধ্যে ছিলো না।

আমরা দেখেছি যে ২৪ মার্চ লাখো লাখো মানুষ সামাজিক দূরত্ব উপেক্ষা করেই ঢাকা ছেড়েছেন। আবার, ৪ঠা এপ্রিলও একই দৃশ্য দেখেছি। লেখক প্রথম দৃষ্টান্তে কোন সমস্যা খুঁজে না পেলেও পরের দৃষ্টান্ত নিয়ে সমালোচনা করেছেন।

যদি আমরা করোনা পরিস্থিতির দিকে তাকাই, তাহলে দেখি যে, সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত রোগী ঢাকাতেই রয়েছেন। সে অর্থে বলা যায় যে, অন্য জেলা থেকে ঢাকায় আসা ব্যক্তিদের তুলনায় ঢাকা ছেড়ে যাওয়া ব্যক্তিরাই সমগ্র দেশের জন্য হূমকি।

এখন ৫ এপ্রিল কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে আসা যাক। লেখক কি জানেন, মালিকরা কল কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে একটি চিঠি পেয়েছিলেন, যেখানে ৫ এপ্রিল থেকে কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা ছিলো। সে সময় মালিকদের পক্ষে কিভাবে জানা সম্ভব ছিলো যে, সরকারের পরবর্তী ধাপে ছুটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে? মালিকদের মধ্যে কোন অসৎ অভিপ্রায় ছিলো না, শুধুমাত্র দিক নির্দেশনার অভাবে তারা কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মালিকরা কারখানা খুলে শ্রমিকদেরকে মার্চ মাসের মজুরি দেয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন।

আমার প্রশ্ন হলো কেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ডাইফে’র (কল কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের) মাধ্যমে বিজিএমইএ’কে একটি সুষ্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দিলো না? পোশাক কারখানা ছাড়াও এদেশে আরও অনেক শিল্প কারখানা রয়েছে। সম্পাদকীয়তে সেসব কারখানার বিষয়ে কোন কথা বলা হয়নি। প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি যে পোশাক খাতের তুলনায় পোশাক বহির্ভূত খাতের কারখানাগুলো অধিক পরিমানে খোলা রয়েছে।

লেখক করোনা ভাইরাস এর বিশ্ব প্রভাব নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল রয়েছেন। তার লেখনীতে উঠে এসেছে কিভাবে বিভিন্ন দেশে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে – কিভাবে সরকারগুলো সাধারন মানুষ এবং ব্যবসা বানিজ্যের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিখাত করোনার প্রভাবে কি টালমাটাল পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে, ব্র্যান্ডগুলো আমাদের সাথে কি ধরনের আচরন করছে এবং আমাদের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কি বিষয়গুলো নিয়ে প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়নি।

আমার কাছে মনে হয়েছে, লেখক এমন কিছু শব্দ পোশাক উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন, যা শিষ্টাচার বহির্ভূত। এগুলো তিনি না বললেও পারতেন। আমি মনে করি, এখন জাতীয় সংকটময় মূহুর্তে বিভক্তি বা বভাজনের স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা বলা মোটেও ঠীক হবে না। যদি কথা বলি, তবে দেশ বিভাজিত হবে, যা কারুরই কাম্য নয়।

এ মূহুর্তে শিল্পের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গনমাধ্যমের সহায়তা। আশা করি, এ শিল্পটিকে এগিয়ে নিতে প্রত্যেকেই স্ব স্ব অবস্থান থেকে শিল্পকে সহায়তা করবেন।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ফ্লোরেন্স গ্রুপ