Logo

কারখানা সংস্কার কাজে ধীরগতি, অনিরাপদ কারখানার সঙ্গে ব্যবসা করবে না অ্যালায়েন্স ব্র্যান্ডস

Fazlul Haque
শনিবার, এপ্রিল ১৬, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তর আমেরিকাভিত্তিক ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন জোট অ্যালায়েন্স কোনো অনিরাপদ কারখানার সঙ্গে ব্যবসা করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানার সংস্কার কাজ তদারকির লক্ষ্যে গঠিত এই অ্যালায়েন্স সংস্কারের অগ্রগতি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অ্যালায়েন্সের ওয়েবসাইটেও ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অ্যালায়েন্সের নিরপেক্ষ চেয়ারম্যান ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেস ওম্যান অ্যালেন টশার এক বিবৃতিতে বলেন, ক্রেতাদের ব্যবসা বাতিলের অধিকার রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে কঠোর বার্তা দিতে চাই যে, অ্যালায়েন্সের নিরাপত্তা মানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ না হলে আমরা ওই কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখবো না। তিনি বলেন, সংস্কার কাজে ধীরগতি চলছে। এটা হুমকিস্বরূপ। তবে গত তিন বছরে কারখানাকে শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ করতে অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে বলে বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন।

অ্যালায়েন্সের কাজে অসহযোগিতা ও অনিরাপদ কর্মপরিবেশের (নন কমপ্লায়েন্স) কারণে ৭৭টি তৈরি পোশাক কারখানার সঙ্গে তারা ইতোমধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। বাংলাদেশে গার্মেন্টস কারখানার সংস্কার কাজ তদারকির লক্ষ্যে তিন বছর আগে কার্যক্রম শুরু করে অ্যালায়েন্স ফর ওয়ার্কার্স সেফটি ইন বাংলাদেশ বা অ্যালায়েন্স। ইতোমধ্যে তাদের অর্ডার সরবরাহ করে এমন প্রায় ৭শ’ কারখানা পরিদর্শন শেষে সংস্কার কাজ তদারক করছে তারা।

অ্যালায়েন্সের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কারখানা অগ্নি, ভবনের কাঠামো ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার লক্ষ্যে যে সংস্কারের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে তার প্রায় অর্ধেক সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। অ্যালায়েন্স এ পর্যন্ত ৬৭৭টি কারখানা পুরোপুরি পরিদর্শন কাজ সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে ঝুঁকির বিবেচনায় ৩৬টি কারখানাকে বন্ধের লক্ষ্যে পর্যালোচনা কমিটির কাছে সুপারিশ করেছে। একটি কারখানা স্থানান্তর হয়েছে। ১৩টি কারখানা জোরেশোরে সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাদবাকি ২২টি বন্ধ হয়েছে কিংবা অ্যালায়েন্সের সঙ্গে তাদের কোনো ব্যবসায়িক কার্যক্রম নেই। তবে বন্ধ হয়েছে এমন কারখানার সংখ্যা খুবই কম বলে অ্যালায়েন্সের প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিদর্শনকৃত কারখানার মধ্যে এ সংখ্যা ৫ শতাংশেরও কম। সব মিলিয়ে ব্র্যান্ডগুলো এখন পর্যন্ত ৭৭টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তবে অ্যালায়েন্সভুক্ত কারখানাগুলোকে তুলনামূলক নিরাপদ হিসেবেই অভিহিত করা হয়েছে।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত অ্যালায়েন্সের অফিস থেকে এর নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশে দেশটির সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি টেলি কনফারেন্সে বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় তিনি অ্যালায়েন্সভুক্ত কারখানার সংস্কারের অগ্রগতি তুলে ধরেন। ওই টেলিকনফারেন্সে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাংবাদিকরাও যুক্ত হন।

তবে সংস্কার কার্যক্রমে ধীরগতির কারণ হিসেবে কারখানা মালিকরা অর্থ সংকটকে দায়ী করছেন। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রতিটি কারখানা সংস্কারে গড়ে ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা করে ব্যয় করতে হচ্ছে। পুঁজির দিক থেকে ছোট ও মাঝারি মানের কারখানা মালিকদের পক্ষে এ অর্থের সংকুলান করা কঠিন। তাদের সহজ অর্থায়নের লক্ষ্যে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ও আইএফসি (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন) নামমাত্র সুদে (এক শতাংশেরও কম) অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এ অর্থায়ন থেকে সুদ নিচ্ছে। অন্যদিকে ঋণদানকারী ব্যাংকের সুদসহ গ্রাহকের কাছে এ অর্থ আসতে প্রায় ১০ শতাংশ হয়ে যাচ্ছে, যা দেশীয় ব্যাংক ঋণের সুদের হারের প্রায় সমান।

বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, বিদেশি সংস্থার দেয়া ঋণ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফা করা উচিত নয়। এ ঋণের সুদের হার ৪ শতাংশে রাখার দাবি তাদের। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। ওই বৈঠকে ঋণের সুদের হার কমানোর দাবি জানান তিনি। এছাড়া আইএফসি’র অর্থ মাত্র চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণের বাধ্যবাধকতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, যাদের ওই ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন নেই, তাদের অর্থ প্রাপ্তি কঠিন হয়ে গেল। তার ব্যাংক এ জন্য গ্যারান্টি দিলে এ জন্য বাড়তি এক শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে।

তবে বাংলাদেশে অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ রবিন বলেন, যার যার কাজ তাকেই করতে হবে। তিনি ব্যবসায়ের স্বার্থেই সংস্কার কাজে বিনিয়োগ করবেন। নইলে তিনি ব্যবসা হারাবেন। তবে অর্থায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থায়নের সুদের হার কমানোর বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও বিভিন্ন সময় সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। অন্যদিকে মাত্র চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়নের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি একান্তই যে সংস্থা অর্থায়ন করছে, তাদের পছন্দের বিষয়। এতে অ্যালায়েন্সের কিছু করার নেই। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক