Logo

পোশাক খাতে ব্যাপক সংস্কারের পরও পণ্যের দাম বাড়ায়নি ক্রেতারা

RMG Times
শনিবার, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৮
  • শেয়ার করুন

২৫ ডলার মূল্যের একটি পোশাক বিদেশিরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে মাত্র পাঁচ ডলারে! 

ডেস্ক রিপোর্ট: রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। কাজের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় এক হাজার ২০০টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। অথচ পণ্যের দাম বাড়ায়নি বিদেশি ক্রেতারা। এতে দেশীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

আজকের পত্রিকার বরাত দিয়ে জানা যায়, সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী, বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

মূলপ্রবন্ধে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর পাঁচ বছরে গার্মেন্টস খাতে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। বিশেষ করে নিরাপত্তাসহ শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক খাতে তেমন পরিবর্তন আসেনি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তিন ধরনের পরিবর্তনের কথা হয়েছে। এগুলো হল- পণ্য, পদ্ধতি ও কার্যক্রম। তিনি বলেন, উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তির বিকল্প নেই। কিন্তু এ খাতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার তেমনভাবে বাড়েনি। এছাড়া পণ্যের মানও উন্নত হয়নি। অন্যদিকে সামাজিক খাতে পরিবর্তন হলেও বড় ও ছোট কোম্পানিগুলোর মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। তিনি বলেন, যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তা দেশের ভেতরে উদ্যোক্তারা করেছেন।

কিন্তু সে অনুপাতে বিদেশি ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়ায়নি। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের আরও ভালো ভূমিকা পালন করতে হবে। তার মতে, বাংলাদেশের পোশাক খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জও কম নয়। ফলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যাপক বিনিয়োগ দরকার। আর ব্যাপক বিনিয়োগের জন্য উদ্যোক্তারা যাতে কম সুদে ঋণ পেতে পারেন সেজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

ড. রেহমান সোবহান বলেন, গার্মেন্ট মালিক পক্ষকে বুঝতে হবে শ্রমিকরাও মানুষ। তাই তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। উপযুক্ত মজুরির মাধ্যমে তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে।

তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনার পর পোশাক খাতে কী পরিবর্তন এসেছে, শ্রমিকদের ভাগ্যের কতটা উন্নতি ঘটেছে- তা বিবেচনা করা দরকার। তার মতে, মালিকের একার পক্ষে টেকসই শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কারণ ২৫ ডলারে বিক্রি মূল্যের একটি পোশাক বিদেশিরা মাত্র পাঁচ ডলারে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এত কম পয়সায় শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা কঠিন।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতে ৫০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। এর ৮০ শতাংশ নারী। দেশের মোট অর্থনীতির ১০ শতাংশ গার্মেন্ট খাতের ওপর নির্ভরশীল। আগামী তিন বছরে পোশাক খাতের রফতানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।

এটি এ খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এ খাতের উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তির বিকল্প নেই। তবে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মূল বাধা হল তহবিল। এ তহবিল সংগ্রহের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

শুভাশীষ বসু বলেন, রানা প্লাজা আমাদের ওয়েক-আপ কল দিয়ে গেছে। এরপর সরকার এ খাতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের অধিকারের জন্য খুব দ্রুত সময়ে আইনকানুনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।

সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত হল নারীশ্রমিক নির্ভরশীল ও বিদেশি ক্রেতা নির্ভরশীল সরবরাহ খাত। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতে রানা প্লাজার ধস বিশাল বিপর্যয় এনেছে। কিন্তু এ ঘটনা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা ইস্যুতে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে এ খাতে একটি মানদণ্ডও দাঁড় করানো সম্ভব হয়েছে।

বিশ্বের ১০টি শীর্ষ গ্রিন কারখানার সাতটি বাংলাদেশে রয়েছে। এছাড়া ৩০০ কারখানা গ্রিন হওয়ার জন্য পাইপলাইনে রয়েছে। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ঘটনার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এক হাজার ২০০ কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। তবে এ খাত নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণাও চলছে। বিশেষ করে স্থানীয় অনেক কারখানা নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা রয়েছে। তবে এসব কারখানার কোনোটিই পোশাক খাতের কোনো সংগঠনের সদস্য নয়।

এসব গার্মেন্টে একজন মারা গেলেও তা পত্রিকায় বড় করে দেখানো হয়। এ খবর পোশাক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, প্রতি বছর ২২ লাখ লোক শ্রমবাজারে আসছেন। তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গার্মেন্ট খাতকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।