Logo

কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি: ১১% নারী কর্মক্ষেত্রে অনিরাপদ বোধ করেন

RMG Times
সোমবার, আগস্ট ২৭, ২০১৮
  • শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিনিধি: চলতি বছরের মার্চ হতে জুন পর্যন্ত সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর এলাকার ৮টি কারখানার ৩৮২জন নারী পোশাক শ্রমিকের ওপর  এক গবেষণায় পাওয়া তথ্য মতে, “তৈরী পোশাক কারখানায় ১১ শতাংশ নারী কর্মীই কর্মক্ষেত্রে নিজেদের অনিরাপদ মনে করেন।এছাড়া ৩৮.৭ শতাংশ নারী মনে করেন কারখানায় যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি  নেই বা থাকলেও তা কার্যকর নয়।”-

আজ (২৭ আগষ্ট ২০১৮) দি ডেইলী স্টার সেন্টারের এ.এস মাহমুদ সেমিনার মিলনায়তনে  “বেইজ লাইন ফলাফলসমূহের আলোকে বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে নারীর প্রতি সহিংসতা ” বিষয়ক সেমিনারের মাধ্যমে এই গবেষণা পত্র প্রকাশ করে পাঁচটি সংগঠনের (ব্ল্যাস্ট, ব্র্যাক, ক্রিশ্চিয়ান এইড, নারীপক্ষ ও এসএনভি) মিলিত উদ্যোগ  ‘সজাগ’। 

গবেষণায় ৬৬% নারী শ্রমিক বলেছেন, তারা কারখানার কমিটির কাছে কোন সহযোগিতা/প্রতিকার চায়না কারণ তারা মনে করেন কমিটির কাছে কোন বিচার পাওয়া যাবেনা । 

গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদির মধ্যে ২২% নারী শ্রমিক কারখানার ভিতরে অথবা বাইরে শারিরীক, মানসিক এবং যৌন হয়রানির সম্মুখীন হয়েছে, ৮৩% শ্রমিক অশালীন/অকথ্য ভাষায় কথা বলা, কারখানায় প্রবেশের সময় নিরাপত্তা কর্মীর অস্বস্তিকর চেকিং, পুরুষ সহকর্মীর অপ্রত্যাশিত স্পর্শ,যৌন সম্পর্ক তৈরীর চেষ্টার শিকার হয়েছে।

এছাড়া গবেষণায় পুরুষ সুপারভাইজার দ্বারা কারখানার অভ্যন্তরে যৌন হয়রানির শিকার হয় বলে জানিয়েছে ৮৬% নারী শ্রমিক ; আবার অভিযোগ কমিটির সম্পর্কে ২৭.৭% শ্রমিক সচেতন নয়। কিন্তু একই গবেষণায় ৩১.৭ শতাংশ নারী শ্রমিকরা জানিয়েছে কর্মক্ষেত্রে কার্যকর যৌন হয়রানী প্রতিরোধ কমিটি রয়েছে। 

বেইজ লাইন গবেষণার জন্য ৮টি কারখানার পোশাক শ্রমিকের সাথে ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন এবং সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে অর্ধেক সজাগ কোয়ালিশনের সাথে চুক্তিবদ্ধ কারখানা।

ক্রিশ্চিয়ান এইড’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি জনাব সাকেব নাবির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রকল্প সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক ও নারীপক্ষের সদস্য রওশন আরা, বেইজ লাইন ফলাফলের উপর আলোকপাত করেন মাহীন সুলতান, দলনেতা-সজাগ কোয়ালিশন। বেইজ লাইনের উদ্দেশ্য হলো পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের পথে ঘাটে, বাসস্থানে এবং কারখানার ভিতরে যৌন হয়রানী ও সহিংসতা এবং কারখানার ভিতরে সহিংসতা রোধে কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ, ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া সম্পর্কে বর্তমান অবস্থা জানা।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের আইন বিভাগের সহকারী সচিব বেগম মোর্শেদা হাই, , ডাইফি’র জেন্ডার ইকুয়ালিটি এন্ড ওমেন এমপাওয়ারমেন্টের উপ মহা-পরিচালক ড. মতিউর রহমান, রেনেশাঁ গ্রুপের কর্পোরেট হেড অব এইচ আর সৈয়দা শায়লা আশরাফ, ব্লাস্টেও এ্যাডভোকেসী এন্ড কমিউনিকেশন’র উপ পরিচালক মাহবুবা আক্তার প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিও, পোশাক কারখানা, মিডিয়া, ট্রেড ইউনিয়ন থেকে আগত শতাধিক প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহন করেন।

জনাব মতিউর রহমান বলেন, কমিউনিটিতে বানিজ্যিকভাবে ডে-কেয়ার সেন্টার তৈরীর উদ্যোগ নিতে হবে। বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ছাড়াও পরবর্তীতে যাতে বিনা বেতনে দীর্ঘ দিন ছুটি নিতে পারে এবং হালকা কাজ দেয়া হয়, সেই সুযোগ সুবিধা আইনে আসা দরকার। সৈয়দা শায়লা আশরাফ বলেন, যদি মালিকপক্ষ অঙ্গীকার করেন ফ্যাক্টরীতে নির্যাতন হবে না, তাহলে নির্যাতন বন্ধ হবে, সেজন্য কারখানা পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগকে সচেতন করা খুবই জরুরী।

মাহবুবা আক্তার বলেন, তারা যেসব পোশাক শিল্প কারখানার সাথে কাজ করেন সেখানে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কোন অভিযোগ কমিটি নাই। এই ক্ষেত্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এই কমিটি গঠন করা সহজ হবে। এসময় তিনি কলকারখানা পরিদর্শন চেকলিষ্টে অভিযোগ কমিটি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন আছে তবে আরো বিস্তারিত করা এবং নিয়মিত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে কমিটি কার্যকর কিনা তা মনিটরিং করার জন্য ডাইফির প্রতি অনুরোধ জানান।

সবশেষে, এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. জেসন বেলাঞ্জারের সমাপনি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।