আরএমজি টাইমস ডেস্ক : বিশ্বের মোট তৈরি পোশাকের ৬০ শতাংশের বেশি এশিয়ায় উত্পাদিত হয়। শিল্প খাতটির সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছে দেড় কোটির বেশি মানুষ, যার বেশির ভাগই নারী। জীবিকার জন্য সংগ্রামরত এসব গার্মেন্টস শ্রমিক তাদের সাধ্যের সর্বোচ্চ শ্রম দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু বিনিময়ে পাচ্ছেন শুধুই বঞ্চনা। কারণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশেই তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নিতান্তই অপ্রতুল। এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্সের (এএফডব্লিউএ) কো-অর্ডিনেটর অনন্যা ভট্টাচার্যের দাবি, অসহায় পোশাক শ্রমিকদের দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্ত করতে এ মজুরি যথেষ্ট নয়।
‘লিভিং ওয়েজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়ে ব্র্যান্ডগুলো প্রায়ই উত্পাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার (সাপ্লাই চেইন) জটিলতাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায়। তবে বাস্তব ব্যাপার হলো, সরকার ও সরবরাহকারীদের ওপর ব্র্যান্ডগুলোর অনেক প্রভাব রয়েছে। মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা তাদের রয়েছে।’
অনন্যা বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকরা জীবনধারণের উপযোগী ন্যূনতম মজুরির (লিভিং ওয়েজ) দাবি করতেই পারেন। তৈরি পোশাক সরবরাহকারীরা এশিয়ার লাখ লাখ শ্রমিককে নামমাত্র মজুরি দেয়। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারও তাদের জীবনমান উন্নয়নের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। অনন্যা বলেন, বিশ্বের স্বনামধন্য পোশাক ব্র্যান্ডগুলোকে এসব অসহায় শ্রমিকের দায়িত্ব নিতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আসন্ন সম্মেলনকে সামনে রেখে এমন দাবি জানান শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য কাজ করা অনন্যা ভট্টাচার্য।
থমসর রয়টার্স ফাউন্ডেশনে বক্তব্য দানকালে অনন্যা বলেন, ‘লিভিং ওয়েজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়ে ব্র্যান্ডগুলো প্রায়ই উত্পাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার (সাপ্লাই চেইন) জটিলতাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায়। তবে বাস্তব ব্যাপার হলো, সরকার ও সরবরাহকারীদের ওপর ব্র্যান্ডগুলোর অনেক প্রভাব রয়েছে। মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা তাদের রয়েছে।’
অনন্যার মতে, ‘সাপ্লাই চেইনের পুরোটা অংশজুড়ে মানবাধিকার রক্ষায় কোম্পানিগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তারা কোনোমতেই বিষয়টি রাষ্ট্র কিংবা সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। সরকার কখন ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নিয়ে যাবে, বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো সে আশায় বসে থাকতে পারে না। তাদের মুনাফার সিংহভাগই আসে এশিয়া থেকে। এজন্য অবশ্যই তাদের ন্যূনতম মজুরি ও লিভিং ওয়েজের মধ্যকার ফারাক বুঝতে হবে।’
গঠনগত দিক থেকে গার্মেন্টস শিল্পে বর্তমানে যে মজুরি দেয়া হয়, তা শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। এ কারণে শ্রমিকরা মাত্রাতিরিক্ত ওভারটাইম করতে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলে তাদের স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। একই সঙ্গে তারা পরিবার থেকে দূরে থাকতেও বাধ্য হচ্ছেন।
বিশ্বের শীর্ষ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ চীন। সেখানে শ্রমিক মজুরি তুলনামূলকভাবে বেশি। এ কারণে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো এখন সস্তা শ্রমবাজারের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। চীনের বিকল্প হিসেবে তাদের সামনে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। কম খরচে ও যথাসম্ভব দ্রুততর সময়ের মধ্যে পোশাক উত্পাদনের জন্য এসব দেশের সরবরাহকারীদের ওপর প্রচণ্ড চাপ থাকে।
এএফডব্লিউএর সদস্য সংগঠন ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের মতে, গঠনগত দিক থেকে গার্মেন্টস শিল্পে বর্তমানে যে মজুরি দেয়া হয়, তা শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। এ কারণে শ্রমিকরা মাত্রাতিরিক্ত ওভারটাইম করতে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলে তাদের স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। একই সঙ্গে তারা পরিবার থেকে দূরে থাকতেও বাধ্য হচ্ছেন।
শ্রম অধিকার কর্মীরা লিভিং ওয়েজ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন, যার অধীনে শ্রমিকদের সাপ্তাহিক কাজের সময় মানদণ্ড অনুযায়ী নির্দিষ্ট থাকে এবং তারা আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো পারিবারিক মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য যথেষ্ট আয় করতে সমর্থ হন।
আইএলও লিভিং ওয়েজকে ‘মানুষের মৌলিক চাহিদা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। তবে অধিকার কর্মীরা বলছেন, এশিয়াজুড়ে ন্যূনতম মজুরির আকার জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক কম। সরকারগুলোকেও কালেভদ্রে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
সূত্র: রয়টার্স ও দৈনিক বনিক বার্তা
মতামত লিখুন :