Logo

“এশিয়ার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিতে সহায়তা করতে হবে পোশাক ব্র্যান্ডদের” আইএলও

Fazlul Haque
শুক্রবার, মে ২৭, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ  এশিয়ার দেশগুলোতে কোটি কোটি পোশাILOক শ্রমিক অত্যন্ত স্বল্প মজুরিতে কাজ করে থাকে। সরকারও তাদের প্রতি উদাসীন। এ শ্রমিকদের জন্য দায়িত্ব নিতে হবে পোশাকের বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোকেই। এশিয়া অঞ্চলে শ্রমিকদের উচ্চমজুরি বিষয়ক একজন কর্মী ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) সম্মেলনের প্রাক্কালে এসব কথা বলেছেন। এ খবর দিয়েছে রয়টার্স।

খবরে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী পোশাক খাতের ৬০ শতাংশেরও বেশি উৎপাদিত হয় এশিয়ার দেশগুলোতে। এই শিল্পে প্রত্যক্ষ নিয়োজিত জনবলের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি, যাদের বেশির ভাগই নারীকর্মী। সাপ্লাই চেইন লবি গ্রুপ এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্সের (এএফডাব্লিউএ) একজন সমন্বয়ক অনন্যা ভট্টাচার্য বলেন, এশিয়ার বেশির ভাগ দেশেই পোশাক খাতের শ্রমিকদের যে ন্যূনতম মজুরি দেয়া হয় তা তাদের দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। তারা বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম মজুরি পাওয়ার যোগ্য। থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে অনন্যা বলেন, ‘সাপ্লাই চেইনের জটিলতা প্রায়ই ব্র্যান্ডগুলোর জন্য অজুহাত দাঁড় করায় যে ব্র্যান্ডগুলোর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু সরকার ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে ব্র্যান্ডগুলোর বহুবিধ সম্পর্ক রয়েছে এবং মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতাও তাদের হাতেই।’ চীনে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এই খাতের বড় বড় রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো বাজারকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে, যেখানে মজুরি শ্রমিকদের মজুরি কম। এসব দেশের পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর খরচ যথাসম্ভব কমিয়ে দ্রুত কাজ করার জন্যও চাপ থাকে অনেক বেশি। এএফডাব্লিউএ’র সদস্য ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পোশাক শিল্পের এই মজুরি শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে ‘কাঠামোগতভাবেই ব্যর্থ’ হচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে, স্বাস্থ্য সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে এবং পরিবার থেকে আলাদা বাস করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। এ বিষয়ে আন্দোলনকারীরা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা বলছেন শ্রমিকদের এমন পরিমাণ মজুরি দিতে হবে যা তাদের পরিবারের বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট হবে এবং শ্রমিকরা জরুরি পরিস্থিতির জন্য কিছু টাকা জমিয়েও রাখতে পারবেন।

আইএলও জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম মজুরিকে ‘মৌলিক মানবাধিকার’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। তবুও এশিয়ার অনেক দেশেই ন্যূনতম মজুরি একজন শ্রমিকের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম। অধিকার কর্মীরা বলছেন, সরকার কখনও কখনও এই মজুরি পুনর্নিধারণ করলেও তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বেড়ে যাওয়া জীবনধারণের ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অনন্যা বলেন, ‘কোম্পানিরা তাদের সাপ্লাই চেইনজুড়ে মানবাধিকার রক্ষার জন্য দায়ী। এই দায়িত্ব তারা সরকার বা সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো শ্রমিকদের মজুরিকে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করতে পারে না। বর্তমান ন্যূনতম মজুরি ও জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মজুরির পার্থক্যের অঙ্কটা তাদেরই দিতে হবে। কারণ তাদের লভ্যাংশের বেশির ভাগই আসে এশিয়ার কারখানাগুলো থেকেই।’

এশিয়ার দেশগুলো থেকে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার পোশাক খাতের অনেক শ্রমিকই ভূমিহীন শ্রমিক বা নিম্নবর্ণের শ্রমিক যারা সুনির্দিষ্টভাবে বৈষম্যের ঝুঁকিতে থাকে এবং প্রায়ই তাদের ওপর ঋণের বোঝা থাকে। ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় ন্যূনতম মজুরি এএফডাব্লিউএ’র প্রাক্কলিত জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মজুরির পাঁচ ভাগের এক ভাগ। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে রানা প্লাজা ধসে ১১শরও বেশি শ্রমিকের মৃত্যুর পর দক্ষিণ এশিয়ার তৈরি পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ ও মজুরি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শুরু হয়েছে। সুইডেনের ফ্যাশন রিটেইলার এইচঅ্যান্ডএম গত সপ্তাহে বলেছে, ভারত ও কম্বোডিয়ায় তাদের পোশাক সরবরাহকারী কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ অনুপযোগী বলে এএফডাব্লিউএর গবেষণায় উঠে এলে তারা এসব কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়ন করতে দেশগুলোর ট্রেড ইউনিয়ন ও সরকারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে এএফডাব্লিউএ আগামী সপ্তাহে জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য আইএলও সম্মেলনে মজুরিসহ সাপ্লাই চেইনের বৈশ্বিক একটি মানদণ্ড স্থির করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। অনন্যা বলেন, ‘আপনি যদি শ্রমিকদের কোণঠাসা করে রাখেন এবং তাদের ওপর চাপ বাড়াতে থাকেন, তারা কোনো একদিন প্রেশার কুকারের মতো ফেটে পড়বে। এটা দেশ বা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়- কারও জন্যই ভালো নয়। কাজেই এই পরিস্থিতি ঠেকাতে সবাইকেই কাজ করতে হবে এবং এটা সহজ; কারণ এই পরিস্থিতি ঠিক রাখতে খুব কমই খরচ করতে হবে।’ সূত্র ঃ মানব জমিন