Logo

পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকার প্রস্তাব সিপিডি’র

RMG Times
সোমবার, আগস্ট ৬, ২০১৮
  • শেয়ার করুন

শ্রমিক নেতাদের সমালোচনা

ডেস্ক রিপোর্ট: তৈরি পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি (৬ষ্ঠ গ্রেডে) ১০ হাজার ২৮ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকরি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গড়ে প্রতি পরিবারে ২ দশমিক ১জন উপার্জনকারী ধরে ৪ দশমিক ৪ জনের একটি পরিবারের জন্য এই সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এর সমালোচনা করে ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবী জানিয়েছেন  শ্রমিক নেতারা।

গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে তৈরি পোশাক শিল্পে নুন্যতম মজুরি এবং জীবনযাত্রার অবস্থা নিয়ে সিপিডি আয়োজিত সংলাপে এ বিষয়গুলো উঠে আসে। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। বক্তব্য দেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ বিভিন্ন পক্ষের শ্রমিক নেতারা।

এতে এক জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারের শ্রমিকদের জীবনমান নিয়ে এই জরিপটি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ঢাকার চেয়ে গাজীপুরে জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক বেশি। তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের পরিবার প্রতি ব্যয় হচ্ছে গড়ে ২২ হাজার ৪শ টাকা। একটি শ্রমিক পরিবার ঢাকায় প্রতি মাসে প্রায় ২৩ হাজার টাকা ব্যয় করে। গাজীপুরে পরিবার প্রতি ব্যয় ২৪ হাজার ৮শ টাকার বেশি। ২০১৩ সালের জরিপে শ্রমিকরা তাদের আয়ের ৫০ ভাগ খাদ্য গ্রহণে ব্যয় করলেও এখন ৪২ ভাগ করছে। অর্থাত্ তাদের খাদ্য বহির্ভূত খাতে ব্যয় বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে সন্তানদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আগের চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাড়ি ভাড়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। গড় হিসাবে আয়ের ১৯ ভাগ চলে যাচ্ছে বাড়ি ভাড়ায়। অন্যদিকে আয়ের সাড়ে ২২ ভাগ অর্থ চলে যাচ্ছে ঋণ পরিশোধে। সন্তানদের শিক্ষায় ব্যয় করছে ১৫ ভাগ আয় এবং চিকিত্সায় ব্যয় করছে ৯ দশমিক ৭ ভাগ আয়। খাদ্য বহির্ভূত খাতে তুলনামূলক বেশি ব্যয় হচ্ছে গাজীপুরে এবং তুলনামূলক কম ব্যয় হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে।

জরিপকালে দেখা গেছে, ৫২ ভাগ শ্রমিক নিজেদের মধ্যে শেয়ার করে বাস করছে। ৮৬ ভাগ শ্রমিক টয়লেট শেয়ার করে ব্যবহার করছে। ৮৫ ভাগ শ্রমিক রান্নার চুলা শেয়ার করছে। ১৭ ভাগ শ্রমিক মেঝেতে ঘুমায়। ১৬ ভাগ শ্রমিকের ঘরে কোন পাখা নেই। ৫৬ দশমিক ৫ ভাগ শ্রমিকের কিছু না কিছু সঞ্চয় রয়েছে।

সবকিছু বিশ্লেষণ করে সিপিডির পক্ষ থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের মজুরি কাঠামোতে ৭ম গ্রেড তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ৬ষ্ঠ গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ২৮ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংলাপে এর সমালোচনা করে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের কার্যকরি সভাপতি কাজী মো. রুহুল আমীন বলেন, ঢাকা বা ঢাকার বাইরে কোথাও এখন একটি টিন শেড বাসা পাঁচ-ছয় হাজারের নিচে পাওয়া যায় না। শ্রমিকরা জীবন ধারণের জন্য যেটুকু খাদ্য গ্রহণ করে তাতে পঁয়ত্রিয়-চল্লিশ বছর বয়সের পর তাদের আর উত্পাদনশীলতা থাকে না। মানবিক জীবন নয়, কোনমতে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবী জানানো হয়েছে। বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিপিডি বলছে, একটি পরিবারে মাসিক ২২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে, অথচ ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হল। শ্রমিকরা ১৬ হাজার টাকার দাবী করলেও এটি দুই বছর আগের দাবী। প্রকৃত মজুরি এর চেয়েও বেশি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে শ্রমিকরা কমই দাবী করছে।

তিনি বলেন, ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরিণত হয়েছে। কেননা ২০১০ ও ২০১৩ সালে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। গার্মেন্টস ওয়ার্কার ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার বলেন, আগের দুইটি মজুরি বোর্ড সুপারিশ করলেও প্রধানমন্ত্রীকে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণায় হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। এবারও তাই করতে হবে। সংলাপে উপস্থিত অন্যান্য শ্রমিক নেতারা বলেন, ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখা প্রয়োজন। শ্রমিরা যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে তাতে তারা খুব বেশি বয়স পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকে না। শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য হলেও ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা মজুরি দাবী করেন তারা।