Logo

রানা প্লাজা ট্রাজেডির ৫ বছর: ভয়াবহতা কাটিয়ে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা এখন বিশ্বসেরা

RMG Times
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
  • শেয়ার করুন

আব্দুল আলিম: নিউইয়র্ক তথা আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম শিল্প বিপর্যয় ছিল ১৯১১ সালের ২৫ মার্চ নিউইয়র্ক শহরস্থ ট্রায়াঙ্গল শার্টওয়েষ্ট কারখানার অগ্নিকান্ডের ঘটনা যা সমগ্র বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল, কান্না ও আর্তনাদে ভারী হয়ে গিয়েছিল সেদিনের বাতাস। পোশাক কারখানার ইতিহাসে পাকিস্তানের আলী এন্টারপ্রাইজে দূর্ঘটনার পূর্বে এটিই ছিল পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ানক অগ্নিকান্ড। কিন্তু আজ সে ইতিহাস শতোর্ধবর্ষী। ট্রায়াঙ্গল শার্টওয়েষ্ট কারখানার নির্মম অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার পর দেশটি তাদের আবাসিক ও শিল্প উভয় জায়গাতেই অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়েছে ৩৬০ ডিগ্রি মোড়। এভাবেই আমেরিকার চিত্র পাল্টাতে থাকে, পৌঁছায় বর্তমান অবস্থানে।

২৪ এপ্রিল ২০১৩। একটি স্নিগ্ধ সকাল কিন্তু মূহুর্তের মধ্যেই রানা প্লাজা ধ্বসের মধ্য দিয়ে ঘটে যায় ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা মারাত্মক ইমারত ধ্বসের ঘটনাটি যেটি কেড়ে নেয় ১১৩৪ টি তাজা প্রাণ এবং আহত করে ২৫০০ বা তারও বেশি নিরীহ মানুষকে। এটি সত্যিকার অর্থেই এমন এক মানবিক বিপর্যয় ছিল যখন সাধারণ মানুষ নিজেরাই নিজেদেরকে দোষারোপ করছিল কারণ ইট, কংক্রিটের নিচে আটকে থাকা মানুষগুলোকে তারা শত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারছিল না। সমগ্র বিশ্ব তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেছিল যারা প্রকৃতপক্ষেই ছিল নিরপরাধ, নিষ্পাপ।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের জন্য ভয়াল রানা প্লাজার ঘটনাটি ছিল সবচাইতে মর্মস্পশী ও বেদনাদায়ক। বাংলাদেশের পোশাক কারখানগুলোতে অগ্নি, ভবন ও বিদ্যুৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার, আন্তর্জাতিক বায়ার ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সমন্বয়ে ‘অ্যাকর্ড’ ও ‘অ্যালায়েন্স’ নামের দুটি জোট গঠনের তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ গ্রহন করে। শুধু ‘অ্যাকর্ড’ ও ‘অ্যালায়েন্স’-ই নয় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোও অন্যান্য দেশের সাথে তাদের চুক্তি থাকার পরও বাংলাদেশের যে কোন ধরনের কারখানার সাথে কাজ করার জন্য পূর্ব সাবধানতার জোরদার করে।

সরকারের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কারখানার মালিকরাও এগিয়ে আসে দেশের হারানো গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে এবং আজ সেই লক্ষ্য অর্জনে তারা সফল হয়েছে। এখন প্রায়ই বহুজাতিক ব্র্যান্ডগুলোকে বলতে শোনা যায় ‘বাংলাদেশের পোশাক কারখানাই বিশ্বসেরা’। ইতোমধ্যেই ৬৫ -রও বেশি সবুজ কারখানা এখন বাংলাদেশে উৎপাদনরত এবং আরও ২০০ টি শুরু করার অপেক্ষায়। বিশ্বের সেরা ১০ টি সবুজ কারখানার মধ্যে প্রথমসহ মোট ৭ টিই আমাদের দখলে। বিশ্বে এখন কারখানার সবুজায়ন বিষয়টি আলোচনায় আসলে বাংলাদেশের নামটি সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয় যা আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক।

পোশাক কারখানাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাব্য ঝুঁকিসমূহ এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সমাধান করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে ‘অ্যাকর্ড’ ও ‘অ্যালায়েন্স’। পোশাক শিল্পে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়গুলি এখন দৈনন্দিন ব্যাপার। অতি গুরুত্বপূর্ণ খুব বেশি কোন বিষয় প্রক্রিয়াধীন নেই। যারা খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ তাদেরকে ইতোমধ্যেই বন্ধ করে দিয়েছে ‘অ্যাকর্ড’ বা ‘অ্যালায়েন্স’। এমন বহু কারখানা আছে যারা আজকের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে না পেরে নিজেরাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অতএব, এক কথায বলা যায় বাংলাদেশের যেসব পোশাক কারখানা আন্তর্জাতিক বায়ার বা ব্র্যান্ডদের কাছে তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে সেগুলো নিঃসন্দেহে বিশ্বসেরা। রানা প্লাজার দুর্বিসহতার পর তাৎক্ষণিক ও সময়োপযোগি পদক্ষেপ নেয়ার ফলেই এ গৌরব পুণঃরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

হাজারও প্রাণের এ বেদনাদায়ক প্রয়াণের জন্য দায়ী যারা, ৪০০০ পরিবারের স্বপ্নকে ধুলিস্মাৎ করে দিয়েছে যারা, দেশের সুনামকে নষ্ট করে ‘রানা প্লাজা’র মতো কালো অধ্যায় রচনা করেছে যারা তাদের সমুচিৎ শাস্তি কামনায় উচ্চ আদালতের রায়ের অপেক্ষায় গোটা জাতি আজ অধির আগ্রহে অপেক্ষমান।

পৃথিবী আর কোন দ্বিতীয় রানা প্লাজার মতো প্রাণঘাতী ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী হতে চায় না, চায় না নতুন আরেকটি ২৪/০৪/২০১৩। আমাদের এমন বিস্মৃতি মনে ধারণ করে রাখার মতো আর কোন শক্তিই বেঁচে নেই। আমরা সকল জরাগুলোকে ভুলে যেতে চাই, দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পোশাক খাতের সম্মানকে বিশ্ববাজারে সমুন্নত রাখার জন্য একসাথে কাজ করতে চাই। শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ প্রত্যয় নিয়ে দেশকে পৌঁছে দিতে চাই সর্বশিখরে।

আসুন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি টেকসই বাংলাদেশ উপহার দিই।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক