Logo

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের বাজার হারানোর নেপথ্যে

RMG Times
বুধবার, জানুয়ারি ৩, ২০১৮
  • শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির জন্য সবচাইতে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রানা প্লাজার সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভালো ব্যবসা করতে পারছেনা বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ৫৪০ কোটি ইউএস ডলার সমমূল্যের তৈরী পোশাক এ দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয় এবং সে রপÍানী ২০১৫ সালে নেমে আসে ৫৩০.৫৬ কোটি ইউএস ডলারে যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় শতকরা ১.৭ ভাগ কম।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। ২০১৭ সালের প্রথম দশ মাসে ২,৩১৬ কোটি ইউএস ডলার সমমূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে দেশটি যদিও তাদের এই রপ্তানির হার পূর্ববর্তী বছরের (২০১৬) একই সময়ের রপ্তানির তুলনায় ৩.৬৪ ভাগ কম। ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। তারা শতকরা ৬.৭৯ ভাগ রপ্তানির হার বাড়িয়েছে এবং ৯৮৪ কোটি ইউএস ডলার সমমূল্যের পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত।

বাংলাদেশ গত ২০১৭ সালের প্রথম দশ মাসে সর্বমোট ৪৩৫ কোটি ইউএস ডলার সমমূল্যের তৈরী পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে যা পূর্ববর্তী বছরের সমসংখ্যক সময়ের তুলনায় ৪.৯৩% কম। এই বাজার ধীরে ধীরে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে ভাগাভাগী হয়ে যাচ্ছে। তারা (ইন্ডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া) তাদের রপ্তানি বাড়াচ্ছে অন্যদিকে বাংলাদেশ তার বাজার হারাচেছ।

গার্মেন্টস মালিক, স্টেকহোল্ডার ও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুটি কারণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ব্যহত হচ্ছে। প্রথমত, বন্দর অব্যবস্থাপনা রপ্তানি ব্যহত হওয়ার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। চট্টগ্রাম বন্দরে নানান জটিলতার কারনে পণ্য জাহাজে ওঠানো ও নামানোয় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এতে লীড টাইম বেড়ে যায় ফলে সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় না। দ্বিতীয়ত, বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা। গার্মেন্টস শিল্পের অনেকেই মনে করেন একটি কুচক্রি মহল বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তী নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তারা তাদের নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য দেশের সুনামকে বিকিয়ে দিচ্ছে। এ কারণেই বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও বায়ারদের কাছে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদুত মার্সিয়া বার্নিকাটের সঙ্গে বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রে তৈরী পোশাক রপ্তানি পতনের কারণ সম্পর্কে এক আলোচনা শেষে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারাস এন্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েসন (বিজিএমইএ) এর সভাপতি জনাব মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতের জন্য সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে লীড টাইম। আজকের এই প্রতিযোগীতামূলক বাজারে যে কোন বায়ারই তাদের পণ্যের ডেলিভারী খুবই অল্প সময়ের মদ্ধেই চেয়ে থাকেন কিন্তু অন্যান্য প্রতিযোগীতমূলক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের লীড টাইম বরাবরই বেশি। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের তৈরী পোশাক রপ্তানি পতনের মুখ দেখেছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বন্দর সমূহের দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে আমাদের শিল্প কারখানাগুলো আমেরিকায় পর্যাপ্ত আরএমজি রপ্তানি করতে পারছে না, ফলে আমাদের বৈদেশিক বানিজ্য ব্যহত হচ্ছে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় রপ্তানি পতনমূখী হওয়ার জন্য বন্দর ব্যবস্থাপনাই বহুলাংশে দায়ী’।

সমস্যা সমাধান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘লীড টাইম কমানোর জন্য ও পণ্যের সরবরাহ যথাসময়ে নিশ্চিত করার জন্য বন্দর সমূহে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করতে হবে এবং আমাদের দেশীয় চাহিদা মেটানোর জন্য আরও পোশাক কারখানা গড়ে তুলতে হবে’।

এ সম্পর্কে রাষ্ট্রদুত মার্সিয়া বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচাইতে বড় অবদান রেখে আসছে এ দেশের পোশাক খাত। তাই বন্দর সমূহের যথাযথ উন্যয়ন ঘটিয়ে ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে এবং বিশেষ করে লীড টাইম কমিয়ে আনতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বানিজ্য চালিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই এ চলমান সমস্যাকে কাটিয়ে উঠে প্রমাণ করতে হবে দেশের পোশাক খাত সবচাইতে শক্তিশালী এবং সমস্যা সমাধানে বদ্ধপরিকর। তৈরী পোশাক খাতে শ্রমিকদের অধিকার ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাথে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে’।