Logo

শ্রমিক বিক্ষোভ -সবপক্ষ একত্রে বসে সমস্যার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধান করুন

RMG Times
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান সেই পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা বেশ কিছুদিন ধরে তাদের ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে সরব। দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় আমরা প্রায় দিনই এ সংক্রান্ত খবর দেখছি। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গাড়ী ভাংচুর, দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়গুলি সত্যিই উদ্বেগের। সবচেয়ে বড় এবং দুঃখজনক বিষয় হল রাসেল হাওলাদার নামে একজন শ্রমিকের মৃত্যু। এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। নিহত রাসেল এর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। আশা করছি যে, রাসেলের মৃত্যুর মতো কিংবা মিরপুরের দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার মতো কোন ঘটনা আর ঘটবে না। কিংবা মালিকরা দুষ্কৃতিকারীদের সহযোগিতা নিবেন না। এসব ঘটনায় আমাদের শিল্প আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিক কর্তৃক কারখানা ভাংচুর এর মতো ঘটনা দেখা গেছে সেটিও কাম্য নয় এবং এহেন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।

রানা প্লাজা , তাজরীন ফ্যাশনের পর যখন Accord এবং Alliance বাংলাদেশে এলো এবং কমপ্লায়েন্স নিয়ে চাপ দিলো বেশ কিছু মালিক বলেছিল যে এতো খরচ করে তাদের factory চালানো সম্ভব হবে না। কিন্তু non-compliant factory গুলো ব্যতীত অন্য সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি সেই চাপ সামলে নিয়েছে। ঠিক তেমনই ৫ বছর পরপর যখন শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসে আমরা দেখি সেই একই দোহাই দেয়া হয়!

আমাদের বুঝতে হবে কেন শ্রমিকরা পথে নেমেছে, আজ তাদের পরিবারের দৈনন্দিন সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। শুধু একা একটি মানুষ না একটি শ্রমিকের আয়ে জড়িত তার পরিবার এমনকি গ্রামের বাড়ীতে থাকা তাদের বাবা মা আত্মীয় স্বজনও নির্ভরশীল।

স্বনামধন্য ইংরেজী জাতীয় দৈনিক New Age BD তে ০৬/০৯/২০২৩ ইং তারিখ প্রকাশিত “Prices of essentials rise by 34-219pc in 3 years” নিবন্ধে গত তিনবছরে নিত্যপন্যের দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির একটি চার্ট দেয়া হয়েছে যা দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায় ৮,০০০ টাকা বেতন পাওয়া একজন পোশাক শ্রমিকের জীবনযাপন আজ কতোটা দুর্বিষহ!

সূত্রঃ https://www.newagebd.net/article/211380

মানবিক বিবেচনায় আর দ্রব্যমূল্যের দাম বিবেচনা করলে শ্রমিকদের বেতন কোনোভাবেই ১৩,০০০-১৫,০০০ টাকার নীচে যদি হয় সেক্ষেত্রে তাদের পরিবার survive করতে পারবে কিনা সন্দেহ। যদিও তা পর্যাপ্ত নয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় বিশেষজ্ঞ দিয়ে জীবনযাপনের ন্যূনতম খরচের সঠিক জরিপ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না।

একবারও কি এমন হতে পারে না যে, পোশাক শ্রমিকরা রাস্তায় নামার আগে আমরা তাদের সমস্যার সমাধান করি!
যারা পেটের জন্য, পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ জীবনীশক্তি এই শিল্পের পিছনে ক্ষয় করছে , তাদের কি একবার হাসিমুখে সুখ সমৃদ্ধে ভরা আগামীর স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দেয়া যায় না!

আমাদেরকে বুঝতে হবে আমরা যাদের দিয়ে পোশাকগুলো তৈরি করে নিচ্ছি তাদের মানসিক অবস্থার পুরো প্রভাব কিন্তু পোশাকের প্রতিটি সেলাইয়ে কিংবা গুণগতমানে প্রভাব ফেলবে! আমাদেরকে এও বুঝতে হবে যে শ্রমিকরা তখনই রাস্তায় নামে যখন তাদের এ ছাড়া আর অন্য কোন পথ খোলা থাকেনা।
তবে এক্ষেত্রে গত পাঁচ বছরে অর্ডার স্বল্পতার কারণে বহু মালিক আছেন যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছেন এবং তাদের অনেকেই যে এখনো সেই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আছেন সেটাও যেমন চিন্তা করতে হবে, অপরদিকে খরচ যেভাবে বেড়েছে তার সাথে তাল মিলিয়ে বহু বায়াররা যে সিএম কিংবা এফওবি এর মূল্যবৃদ্ধি করেননি সেটাও সকলকে বিবেচনায় নিতে হবে।

এক্ষেত্রে সকল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, মালিক এবং শ্রমিক নেতারা একত্রে বসে সকল দিক বিবেচনা করে এ সমস্যার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধান করবে এটাই কামনা।

তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল
মানবসম্পদ ও শ্রম-অধিকার বিশেষজ্ঞ এবং কলামিস্ট