আশির দশকের গোড়ার দিকে স্বল্প পরিসরে একটি অপ্রচলিত রফতানি খাত হিসেবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়ে তা আজ রপ্তানি আয়ের ৮২% এ পৌঁছেছে।
এ খাদ শুধু দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে না বৈদেশিক মুদ্রাভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করছে। পরোক্ষভাবে ৪ কোটি মানুষ এই পোষাক শিল্পের উপর নির্ভরশীল। যার ৫৫% ই যেখানে নারী। যা নারীর ক্ষমতায়নেও ভুমিকা রাখছে।
যেখানে মোট জনশক্তির প্রায় অর্ধেক নিয়ে কৃষি জিডিপিতে অবদান রাখে প্রায় ১২% সেখানে মাত্র ৪৪ লাখ জনশক্তি নিয়েই পোষাকশিল্প জিডিপিতে অবদান রাখে তার সমান।
উল্লেখ করতে হয় যে, পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে সারা অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার হয়েছে। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প ছাড়াও ব্যাংক, বীমা, হোটেল, পর্যটন, শিপিং, আবাসন, প্রসাধনী সামগ্রীসহ বিভিন্ন খাত বিকাশ লাভ করেছে। বিদেশের মাটিতেও দেশের একটা পরিচিতি বেড়েছে পোষাক শিল্পের মাধ্যমে। ইউরোপে প্রায় প্রতি ৩ টি টিশার্টের ১ টি যায় বাংলাদেশ থেকে শুধু ডেনিম ধরলেও প্রতি ৪ টির ১টি। যুক্তরাষ্ট্রেও প্রায় প্রতি ৫ টির ১ টিতে থাকে বাংলাদেশের নাম। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের মত দেশগুলোতে আমরা পরিচিতি পাচ্ছি। শুধু ইউরোপ আমেরিকাই না বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ৮১ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ডলার, ভারতে ৭১ কোটি ৫৪ লাখ ১০ হাজার ডলার, রাশিয়ায় ৫৮ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪৩ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৮ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার ডলার, মেক্সিকো ২৭ কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং চীনে ২২ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়। যা এসব দেশে আমাদের পরিচয় সৃষ্টি করে। যে পরিচয় তৈরী করতে অনন্য দেশ বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা খরচ করে। যার প্রমান সদ্য সমাপ্ত কাতার বিশ্বকাপ।
বর্তমানে তৈরি পোশাক রফতানিতে চীনের পরেই বাংলাদেশ। ডেনিমের ক্ষেত্রে চীনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অবস্থান প্রথম । সরকারের নীতিগত সহযোগিতা পেলে অতি শিগগিরই ইউরোপের বাজারে শীর্ষস্থান অধিকার করার প্রত্যয়ী এই পোষাকশিল্প।
সবুজ শিল্পায়নে পোশাক শিল্প আজ নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান প্রশংসিত। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সবুজ কারখানার ৮টি বাংলাদেশে। বাংলাদেশে এখন ১৯২টি লিড গ্রিন কারখানা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ৬৮টি প্লাটিনাম রেটেড এবং ১১১টি গোল্ড রেটেড। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ব মোড়লদের মাথা ব্যাথার সময়ে এটি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।
পোশাক শিল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিদের ভাষ্যমতে যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্নিত বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সঠিক পথে রয়েছে পাশাপাশি সরকার এবং পোশাক প্রস্তুতকারকদের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং উদ্যোক্তারা নতুন বাজার অন্বেষণের কারণে নতুন ও প্রচলিত বাজার থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্রুত বাড়ছে। যার প্রমান জাপানে আমাদের রপ্তানি সূচক।
তবে এত অবদান রাখা এই পোষাক শিল্পের দিকে, এর বৈচিত্র্যতার দিকে, আধুনিকতার দিকে আরও দৃষ্টি দরকার। তবেই ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি পোশাকে রপ্তানি একশ বিলিয়ন বা ১০০০০ কোটি মার্কিন ডলার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা সফলতা পাবে।
উজ্জ্বল হাসান
মতামত লিখুন :