টিপু সুলতান: পবিত্র মাহে রমজান বাংলার ঘরে ঘরে যখন সংযম সাধনার বার্তা দিয়ে বেড়াচ্ছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের সুবাতাস যখন মুমিনের হ্নদয়ে প্রশান্তি যোগাচ্ছে তখন বাংলাদেশের অর্থ উর্পাজনের বড় হাতিয়ার নানা সঙ্কায় জর্জরিত হয়ে আছে। যখন দেশে গার্মেন্টস শিল্পে ক্রয়াদেশে ভরপুর তখন কেন অজানা অশনি সংকেত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে? কেন এবং কেন এতো সঙ্কা এই সেক্টরে? প্রতিটি আনন্দের ঘনঘটায় কেন বেদনার সুর! এই শিল্পের সাথে জড়িযে আছে আমার ১৭ টি বছর। কোথা থেকে বাংলাদেশ আজ এই জায়গায়? কারা এনেছে এই শিল্পের জয়যাত্রা।
আজ যখন ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশের এক উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ আমাকে জানালেন টিপু সুলতান ভাই কোন এক ফ্যাক্টরীর শ্রমিকরা বিষের বোতল হাতে নিয়েছে আর ফ্যাক্টরীর মালিককে আটকে রেখে ভয় দেখাচ্ছে, বেতন-ভাতা না দিলে বিষ খেয়ে দাবী আদায় করে ছাড়বে!! বুকের ভীতর আতঁকে উঠল। কার জন্য জানি না, বলতে পারি না, ভয় হয় কেন এমন হতে চলেছে দেশের এই বৃহত্তম সেক্টরে ? কেন শ্রমিরা এমন করবে, আর কি দোষে ফ্যাক্টরীর মালিক আজ বন্দি হয়ে মৃত্যু ভয় নিয়ে দেশের এই শিল্পে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে? এর দায়ভার শুধু কি ফ্যাক্টরীর মালিকের? এর জন্য কি শ্রমিক ভাইয়েরা বা কোন বিভাগ দায়ী নয়?
কেন হেমলকের শুধা আড়ষ্ট করে ফেলছে এই শিল্প সেক্টরকে? কি এমন হয়েছে যে বিষের বড়ি হাতে নিয়ে ভয় দেখাবে ? আর মালিকরা মৃত্য ভয় হাতে নিয়ে দেশের হাল ধরে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে? কেন প্রতিটি মুসলিম উৎসবে শ্রম সেক্টর অশান্ত হয়ে থাকবে? কেউ কি দেখার নেই? যে ফ্যাক্টরীর বেতন ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট বিভাগ মালিকের সাথে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করে দিলে তো আর হেমলকের বড়ি নিয়ে শ্রমিক উত্তেজনা ছড়াবে না। নতুন শিল্প উদ্যোক্তরা ভয় পেয়ে এ শিল্পে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবে না। বিদেশের বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে না। যে সকল ফ্যাক্টরীতে সমস্যা আছে তা কেন এক মাস আগে থেকে সর্তক হলো না ? কেন ছুটির প্রাক্কালে এতো অস্থিরতা এই সেক্টরে? যারা কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োজিত আছেন তাদের ঘুম কেন হারাম হয়ে যাবে অজানা ভয়ে ?
দেশে যখন এই শিল্পে ব্যাপক কাজের চাপ তখন এই জাতীয় অস্তিরতা আমাদের ব্যাপকভাবে হতাশ করে। হতাশ হয়ে পড়ে নতুন শিল্প উদ্যোক্তরা। আজ যদি মালিক পক্ষ মুখ ফিরিয়ে নেয় এই শিল্প থেকে তাহলে কি হবে ! এ কথাটি কেউ ভাবছি না। শ্রীলংকা যখন একটি আর্দশ রাষ্ট্রের তকমা হাতে নিয়ে আজ তলাবিহীন ঝুড়ি হয়ে বসে আছে, তখন কি শুধু মালিকরা কষ্ট পাচ্ছে? না দেশের সবাই আজ অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছে শুন্যে ! সুবিধা-অসুবিধা থাকতে পারে, তাই বলে শিল্পকে বন্ধ করে আন্দোলনের জন্য কেন রাজপথ ব্যবহার করা হবে? কেন মালিককে বন্দি করে রাখতে হবে ? আবার প্রতিটি ঈদ উৎসবে শ্রমিকদের কে রাজপথে দাবী আদায় করার জন্য, পথে ঠেলে দেয়াও সঠিক নয়।
এই শিল্পের সম্মান ধরে রাখতে চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা। মালিক-শ্রমিকের সহসশীল ভুমিকা আমাদের শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে এটাই প্রত্যাশা। কোন ষড়যন্ত্র আমাদের এই শিল্পের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করবে না। শ্রমিকদের সহনশীল আচরন এবং মালিক পক্ষের সদয় বিবেচনা রাখতে হবে। নইলে এর দায়ভার আমাদের সবার উপর বর্তাবে। নিতে চাই না তলাবিহীন ঝুড়ির খেতাব। বিশ্বে যখন প্রচন্ড উত্তেজনা বিরাজ করছে তখন সুজলা সুফলা বাংলার ঘরে নবান্নে উৎসব বিরাজ করছে, সেই উৎসব কে জলাঞ্জলী দেয়া যাবে না এই সময়ে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবার অংশগ্রহন থাকতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়কে সবাই সহসশীল হবেন, হেমলকের পাত্র যেন মধুর পাত্রে পরিণত হয় এটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক: টিপু সুলতান
জেনারেল ম্যানেজার, আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড।
মতামত লিখুন :