সাহাবউদ্দিন বিলাস:
“ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল
গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল”।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতার সাথে Compound Effect এর কার্যপদ্ধতি সম্পূর্ণ পরিপূরক। আর সর্বকালের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন “কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট” হচ্ছে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য। তিনি কেন কম্পাউন্ড ইন্টারেস্টকে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য বলেছিলেন আজ শুনবো সেই গল্প। কম্পাউন্ড ইফেক্ট এর বহুমাত্রিক ব্যবহার আমরা জানতে পারবো আজকের আলোচনায়। মানুষ যদি জীবনে ছোট ছোট ভালো অভ্যাস বা কাজ ক্রমাগতভাবে করে যেতে থাকে তবে সে কাজ জীবনে একসময় বিশাল কিছু হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। পক্ষান্তরে মানুষ যদি ছোট ছোট ভালো কাজগুলো না করে বা তা করা বন্ধ করে দেয় তবে নেগেটিভভাবে বিশাল কিছু হয়ে তা জীবনে আসবে। কম্পাউন্ড ইফেক্ট এর মূল কথা হল, “Either you earn it or you pay for it”. উদাহরনের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক:
দুজন মানুষের সামনে দুটি অফার দেওয়া হলো। প্রথম অফার: আজ এই মুহূর্তে আপনাকে ১০ কোটি টাকা প্রদান করা হবে।
দ্বিতীয় অফার: আজ এই মুহূর্তে আপনাকে ১ টাকা প্রদান করা হবে, যা এক মাস অর্থাৎ ৩১ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন দ্বিগুণ হবে। তারপর বলা হলো কে কোন অফারটি গ্রহণ করতে আগ্রহী? প্রথমজন ছিলেন খুবই চালাক প্রকৃতি লোক এবং শর্টকাট পদ্ধতিতে সফলতা অর্জনে বিশ্বাসী। তাই তিনি সময় নষ্ট না করে প্রথম অফারটিই লুফে নিলেন। দ্বিতীয়জন ছিলেন ধীর-স্থির স্বভাবের এবং খুব বুদ্ধিমান প্রকৃতির লোক, তাই তিনি দ্বিতীয় অফারটি গ্রহণ করলেন। এবার প্রথমজন ১০ কোটি টাকা পেয়ে জীবনে অনেক আনন্দ ফুর্তি এবং দেশ বিদেশ ভ্রমন করা শুরু করলেন। দশ দিন পর বিদেশ ভ্রমণ শেষে যখন প্রথম ব্যক্তির সাথে, দ্বিতীয় ব্যক্তির দেখা হল তখন দ্বিতীয় ব্যক্তির অর্জন মাত্র ৫১২ টাকা। আবার ২০ দিন পর, দ্বিতীয় ব্যক্তির সাথে যখন, প্রথম ব্যক্তির দেখা হলো তখন দ্বিতীয় ব্যক্তির অর্জন মাত্র ৫,২৪,২৮৮ টাকা। তখন প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তিকে টিপ্পনী কাটতে ছাড়লো না, ” বললো, ২০ দিনে মাত্র তোমার এই অর্জন, আর এদিকে আমার বিশ্বভ্রমণ প্রায় শেষ!” দ্বিতীয় ব্যক্তি মুচকি হাসেন, আর মনে মনে বলেন, “সময়ই বলে দেবে কার অর্জন বেশি! কে সফল আর কে ব্যর্থ!!” এভাবে ২৪ দিন পর যখন আবার যখন দুজনের দেখা হল, তখন দ্বিতীয় ব্যক্তির অর্জন মাত্র ৮৩,৮৮,৬০৮ টাকা। এদিকে মাস প্রায় শেষ হতে চলল! এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির মধ্যেও কিছুটা অস্থিরতা এবং কপালে চিন্তার রেখা দেখা দিল!! কিন্তু আসল রহস্যটা জমা ছিল শেষ ৪ দিনের মধ্যেই। এখানেই কম্পাউন্ড ইফেক্টের আসল ম্যাজিক!
২৮ দিন শেষে- ১৩,৪২,১৭,৭২৮ টাকা
২৯ দিন শেষে – ২৬,৮৪,৩৫,৪৫৬ টাকা
৩০ দিন শেষে – ৫৩, ৬৮,৭০,৯১২ টাকা এবং
৩১ দিন শেষে অর্জন ১০৭,৩৭,৪১,৮২৪ টাকা।
অর্থাৎ উপরের আলোচনার মূল তাৎপর্য হলো কম্পাউন্ড ইফেক্টের ফলাফল শুরুতে খুব ধীরগতির থাকে বা শুরুতে ফলাফল অনুধাবন করা যায় না বা দেখা যায় না। কিন্তু যখন ফলাফল দিতে শুরু করে তখন তা অনেক বড় আকারে আসতে থাকে। যেমন একটা সিগারেট খাওয়ার পর যদি কারো রক্ত বমি হতো, তাহলে হয়তো তিনি তার পরদিন থেকেই সিগারেট খাওয়া বন্ধ করে দিতেন। কিন্তু সিগারেট খাওয়ার ভয়াবহতার ফলাফল আসতে সময় লাগে দীর্ঘদিন। শুরুতে তা উপলব্ধি করা যায় না এবং দেখাও যায় না! যখন ফলাফল আসতে শুরু করে, তখন তা প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্র আকার ধারণ করে। তখন সিগারেট খাওয়া বন্ধ করেও কোন উপকার আর পাওয়া যায় না। অনুরূপভাবে একদিন বা দুইদিন ফাস্টফুড খেলেই রাতারাতি কেউ অনেক মোটা হয়ে যায় না বা তার কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয় না। ফলাফল আসতে শুরু করে দীর্ঘদিন পর কিন্তু ফলাফল যখন আসে তার ব্যাপকতা অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ে শরীরের মধ্যে। তখন মনে হয় পানি খেলেও মোটা হয়ে যাচ্ছি।
কোন মানুষ যদি প্রতিদিন ব্যায়াম করেন, তবে সময়ের সাথে সাথে খুব সূক্ষ্মভাবে তিনি শারীরিকভাবে অনেক সক্ষম হয়ে উঠবেন। অন্যদিকে কোন মানুষ যদি কোনরকম ব্যায়ামই না করেন, তবে সময়ের সাথে সাথে সূক্ষ্মভাবে তিনি শারীরিকভাবে অনেক অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়বেন। আবার অনেকেই আছেন এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ ব্যায়াম করার পর আশা করেন তার ওজন কমে যাবে বা অনেক শারীরিক পরিবর্তন আসবে! কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফল না পাওয়ায় তিনি আর ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে নিজের আগ্রহ ধরে রাখতে পারেন না! বিপত্তিটা এখানেই ঘটে! এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট এর মূল ব্যাখ্যাটা এখানেই। খুব সূক্ষ্মভাবে বললে আজকের আমি বা আপনি, যে জায়গায় আছি তা ছোটবেলা থেকে এই বয়স পর্যন্ত আমাদের পছন্দনীয় অভ্যাসগত কাজ আমাদেরকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। হয়তোবা কারো কারো ক্ষেত্রে তা খুব ভালো এবং কারো কারো ক্ষেত্রে তা অনেক মন্দ! কম্পাউন্ড ইফেক্টের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মানুষের জীবনে যে কোন পরিবর্তনই রাতারাতি বা শর্টকাট পদ্ধতিতে ঘটে না! ছোট ছোট ঘটনা বা কাজগুলো একসময় অনেক বড় ফলাফল দিতে শুরু করে (টাকার উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়েছে)।
আবার ধরুন, একজন কর্মজীবী মানুষ, বর্তমানে ম্যানেজার পদে আছেন, বেতন ১ লক্ষ টাকা। তিনি দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ খুব আন্তরিকতা ও ভালবাসা দিয়ে কাজ করে এ পর্যায়ে এসেছেন। হয়তোবা পরবর্তী এক মাসে কমপাউন্ড ইফেক্টের কারণে একই কোম্পানিতে বা অন্য কোন কোম্পানিতে তার পদমর্যাদার উন্নতি এবং বেতন দ্বিগুণও হয়ে যেতে পারে (যদি তিনি নিজের উন্নতির জায়গায় কম্পাউন্ড ইফেক্ট ঘটাতে পারেন)।
কম্পাউন্ড ইফেক্টের কার্যকরী ফল পাওয়ার জন্য, দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি আত্মোন্নয়নের জায়গায় প্রতিদিন কিছু সময় একান্তভাবেই নিজের জন্য বিনিয়োগ করা এবং সেই সময়কে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা আমাদের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। যেমন- প্রতিদিন কোন একটি ভালো বইয়ের ৫ থেকে ১০টি পাতা পড়া, ১/২ টি পাতা কোন কিছু লেখা, ১০ থেকে ১৫ মিনিট ইউটিউব এর একটি শিক্ষামূলক ভিডিও দেখা, ১৫ থেকে ২০ মিনিট ব্যায়াম করা, সপ্তাহে একটি ভালো মুভি দেখা, আমাদের জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
গুরুত্বপূর্ণ মানুষগুলোর সাথে ক্রমান্বয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা, প্রতিদিন কমপক্ষে একজন মানুষের উপকার করা বা কোন একটি ভালো কাজ করা, পরিবারের সাথে সপ্তাহে অন্তত আট থেকে দশ ঘন্টা সময় খুবই আন্তরিকভাবে কাটানো ইত্যাদি। এরকম বিষয়গুলো যখন আমরা আমাদের প্রতিদিনের কাজের অভ্যাসে পরিনত করতে পারব, তখন সময়ের সাথে সাথে আমাদের মধ্যে একটি বিশাল পরিবর্তন আসবে বা নিজের মধ্যে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হবে। যা খুব সহজেই অন্যদের চাইতে আমাদেরকে ব্যতিক্রম করে তুলবে।
এই ছোট ছোট কাজের যোগফলই একটা সময় অনেক বড় কিছু হয়ে আত্মপ্রকাশ করে।
আজ আমি নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাজগুলো করে যেভাবে এগিয়ে চলবো সময় আমাকে কম্পাউন্ড ইফেক্টের ফলাফল হিসেবে সেরকমই ফলাফল দিবে (তা ভালো হোক বা মন্দ হোক!)। উপরের বিষয়গুলো কে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা যে উপাত্তগুলো পাই তা হল:
(১) প্রতিদিন বই পড়ার (আনুমানিক ২০০ পাতার একটি বই) ফলে বছরে ৯ থেকে ১৮ টি বই পড়া হবে।
(২) বছরে প্রায় ৯১ ঘন্টা শিক্ষামূলক ভিডিও দেখা হবে…. এভাবে সব ক্ষেত্রে যোগফলের মাত্রাটা অনেক বড় হবে, আমরা আত্মবিশ্বাসের সাথে সামনে এগিয়ে যেতে পারবো এবং ধীরে ধীরে অন্যদের সাথে আমাদের একটি ব্যবধান তৈরি হতে থাকবে।
কিন্তু সমস্যার জায়গা হচ্ছে, এই কাজগুলো করা যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তবিক অর্থে ততটাই বিরক্তিকর লাগে! আর প্রতিদিনই আমরা নিজেকে বলি আজ না কাল করব। কারণ দীর্ঘমেয়াদে পরিশ্রম করার পরে যে ফলাফল আসবে সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে আমরা অনেকেই প্রস্তুত নই! মনে রাখতে হবে, স্বল্প মেয়াদের আনন্দ দীর্ঘমেয়াদের জন্য যন্ত্রণার কারণ (যেমন প্রতিদিন মজা করে ফাস্ট ফুড খাওয়া)। আর স্বল্পমেয়াদের যন্ত্রণা উপহার দেয় দীর্ঘমেয়াদের আনন্দ (যেমন আপনার সামনেই প্রতিদিন আপনার বন্ধু মজা করে ফাস্ট ফুড খাচ্ছে আর আপনি তা এড়িয়ে যাচ্ছেন)! ঠিক অনুরূপভাবে মানুষ যদি তার জীবনের প্রথমার্ধে নিজেকে না গড়ে, আনন্দ ফূর্তিতে জীবন অতিবাহিত করে, তবে জীবনের বাকি দীর্ঘ সময় তাকে দুঃখ-যন্ত্রণার মধ্যে সময় অতিবাহিত করতে হতে পারে। আর অন্যদিকে মানুষ যদি তার জীবনের প্রথমার্ধে কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে, নিজেকে গড়ে তোলে, তবে জীবনে বাকি দীর্ঘ সময় তার সুখ আর আনন্দে সময় অতিবাহিত করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। জীবন যেকোনো এক পর্যায়ে আমাদেরকে কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করতেই হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাকেই , কখন আমি এই কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করব? কম্পাউন্ড ইফেক্ট আমাদেরকে সে হিসেব অনুযায়ীই ফলাফল প্রদান করবে।
ছোট জিনিসের ব্যাপকতা যে কত বিশাল তা সবচেয়ে বেশি উপলদ্ধি করেন ১০০ মিটার দৌড়ের স্প্রিন্টারগন। সেখানে আমরা অনেকেই জানি, এক সেকেন্ড নয়! ন্যানো সেকেন্ডের ব্যবধানে যিনি দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থান অর্জন করেন, তাদেরকে কেউই মনে রাখে না, পৃথিবীর ইতিহাসেও তারা নাম লেখাতে পারেন না এবং তাদের পদক প্রাপ্তি বা অর্থ প্রাপ্তির পরিমাণও অনেক কম হয়! আর যিনি ন্যানো সেকেন্ডের ব্যবধানে সবাইকে হারিয়ে দিয়ে প্রথম হলেন, তার পদক থেকে শুরু করে অর্থ প্রাপ্তি, সম্মান, বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনা সব কিছুতেই তিনি সবার চাইতে যোজন যোজন বেশি এগিয়ে থাকেন! এই ন্যানো সেকেন্ড অতি ক্ষুদ্র একটি সংখ্যা, কিন্তু যা পার্থক্য সৃষ্টি করে দেয় অনেক বেশি। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ওই দুই বা তিন ব্যক্তি মধ্যে যোগ্যতায় কিন্তু এত বেশি পার্থক্য নেই। এখানে ন্যানো সেকেন্ড নিয়ে আলোচনার তাৎপর্য হচ্ছে, অতি ক্ষুদ্র একটি সংখ্যা কিন্তু পার্থক্যের ব্যবধান অনেক বেশি। ঠিক একইভাবে ক্রিকেট খেলায় অনেক সময় জয় পরাজয় নির্ধারণ হয় ১ রানের জন্য। কোন প্লেন যদি উডডয়নের সময় ১ ডিগ্রী এদিক-সেদিক হয় তাহলে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে না পৌঁছে, অনির্দিষ্ট কোন গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছাবে। এই উদাহরণগুলো থেকে আমরা এটা বুঝতে পারলাম না যে, ছোট জিনিসকে বা ছোট সময়কে কখনো অবহেলা করতে নেই। এই ছোট সময়ের যোগফলই আজকের আমি/আপনি; এই মানুষটি! মানুষ যত উপরে উঠে বা সামনে এগিয়ে যায়, তত ছোট ছোট পার্থক্যগুলো অনেক বড় ব্যবধান তৈরি করে দেয়! মেডিক্যাল, বুয়েট বা বিভিন্ন বিশ্ববদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও আমরা একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই!
কম্পাউন্ড ইফেক্ট আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে, আমরা জীবনে যা প্রত্যাশা করি বা নিজেদের জন্য যে স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে রেখেছি, একসময় না একসময় তার প্রাপ্তি ঘটবেই। কিন্তু তার পূর্বে আমাদেরকে তৈরি হতে হবে যে, তার জন্য আমরা কতটুকু যন্ত্রণা বা কষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত আছি?
কম্পাউন্ড ইফেক্ট সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে জানতে হলে, Darren Hardy এর লেখা “The Compound Effect” বইটি পড়তে পারেন।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, এতক্ষণ ধৈর্য্য ধরে লেখাটি পড়ার জন্য।
লেখক: সাহাবউদ্দিন বিলাসু
জেনারেল ম্যানেজার (কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রীয়াল সেফটি)
নর্প নীট ইন্ডাস্ট্রীজ লিমিটেড
মতামত লিখুন :