ড. উত্তম কুমার দাস : টেলিভিশন খুললেই একই চিত্র। হৃদয় বিদারক। কারো মাথায় বোঝা, হাতে ব্যাগ, কারো কোলে শিশু সন্তান। প্রখর রোদে তাঁদের এ পথ চলা; যানবাহন নেই, তো কি হয়েছে- পায়ে হেটেই চলা। এই চিত্র টাঙ্গাইল, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সর্বত্র। এযেন নিয়তির লেখা! এরা আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিক। রপ্তানিমুখী শিল্পের চালিকাশক্তি।
এহেন ঘটনার জন্য যে সকল কারণকে দায়ী করা যায় তা হ’ল- “সাধারণ ছুটি” কার-কার জন্য- কিভাবে পালিত হবে, করোনা সংক্রমণ কিভাবে মোকাবেলা করা হবে সেই বিষয়ক সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা; কারখানা বন্ধ-খোলা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মালিক ও তাদের সংগঠনের সিদ্ধান্তহীনতা, কারখানা ছুটি নিয়ে সুস্পষ্ট ও যথাসময়ে ঘোষণার অভাব; শ্রমিকদের মধ্যে ভুল তথ্য প্রচার ও যোগাযোগ; বিদ্যমান অসহায়ত্ব, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা এবং বকেয়া মজুরী ও পাওনাদি পরিশোধের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা (কারখানা পর্যায়ে) না থাকা প্রভৃতি।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ও বিস্তার রোধে সরকার “সাধারণ ছুটি” ঘোষণা করে লোকজনকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়। সরকারের পক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিগত ২৪ মার্চ এতদসংক্রান্ত প্রথম প্রজ্ঞাপন জারী করে। এর মাধ্যমে ২৭ মার্চ থেকে থেকে এই “সাধারণ ছুটি” ঘোষণা করা হয়; আরও তিন দফা বেড়ে যা এখন ৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে। এখন ১৬ মে পর্যন্ত বাড়বে বলে শোনা যাচ্ছে।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মপরিধি সংক্রান্ত যে বিধিমালা রয়েছে তার ভিত্তিতে এই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত আদেশে জরুরী সেবাখাতসমূহ, রপ্তানিমুখী শিল্প, ঔষধ শিল্প এবং কতিপয় মন্ত্রণালয় ও দপ্তর প্রভৃতি ছুটির আওতামুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছে।
তবে এই ব্যাতিক্রমী শিল্প (যেমন- তৈরি পোশাকশিল্প) হিসেবে যারা আওতামুক্ত থাকবে তারা ছুটির মধ্যে কিভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর কিংবা সংশ্লিষ্ট মালিকদের সমিতি বা অন্য কেউ কোন সম্পুরক আদেশ কিংবা বিস্তারিত নির্দেশনা জারী করেনি। ফলে বরাবরই বিভ্রাতি রয়েই গেছে।
অপরদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গত ১৬ এপ্রিল এক আদেশে করোনার সংক্রমণ রোধে লোকজনকে ঘর থেকে বের না হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। তাঁর এই আদেশ সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-এর ১১(১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জারী। এই আদেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে (কারণ এতে কোন সমাপ্তির তারিখ নেই) এবং এর অন্যথা অর্থাৎ পালন না করা কিংবা পালনে বাধাদান শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাহলে প্রশ্ন- এখন যা কিছু ঘটছে তা কিভাবে? কিভাবে কারখানা-দোকানপাট খোলা হচ্ছে?
আশ্চর্যের বিষয় হ’ল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৩ এপ্রিলের যে প্রজ্ঞাপন তাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উক্ত আদেশের কোন রেফারেন্স নেই। একইভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উল্লেখিত আদেশে আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আগের প্রজ্ঞাপনগুলোর কোন রেফারেন্স নেই।
যে বিষয়টি বড় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে তা হ’ল সরকারের “সাধারণ ছুটির” (“জেনারেল হলিডে”) প্রজ্ঞাপন কি-ভাবে বেসরকারি ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও কারখানার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে- সেই বিষয়ে কোন ব্যাখা বা নির্দেশনা অদ্যাবধি নেই। এই কাজটি দু’ভাবে হতে পারতো; মূল প্রজ্ঞাপনেই তা বলা যেতো, অথবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোন মন্ত্রণালয় পরে আলাদাভাবে প্রজ্ঞাপন বা নির্দেশনা দিতে পারতো, বিষয়টি খোলাসা করতে পারতো। এই ক্ষেত্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত কোন আদেশ-নির্দেশ নেই।
সংবিধানের বিধান (১৫২ অনুচ্ছেদ) অনুসারে, সরকারের নির্বাহী আদেশ কিংবা বিজ্ঞপ্তি “আইন” বলে গণ্য করতে হবে। এটি একটি সরল ধারণা।
একই সঙ্গে বলা যায়, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও কারখানা বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত; উক্ত আইন সংসদ কর্তৃক পাশকৃত- একটি বিশেষ আইন। তাই উহার প্রাধান্য নির্বাহী আদেশের চেয়ে বেশী- এমন যুক্তি কেউ কেউ দেখাতে পারে। আর শ্রম আইনের বিধান মতে প্রতিষ্ঠান-কারখানার মালিক বা নিয়োগকারী দু’ধরণের ছুটি নিজে নির্ধারণ করেনঃ যার একটি সাপ্তাহিক ছুটি (যা “হলিডে”) ও অন্যটি উৎসব ছুটি (“হলিডে”)। অন্যান্য ছুটি (যা “লিভ”) হ’ল- অর্জিত, নৈমিত্তিক কিংবা স্বাস্থ্য ছুটি (যেগুলো “লিভ”); সংশ্লিষ্ট শ্রমিক বা কর্মী তাঁর চাকুরীর সুবাদে যা অর্জন করেন; তবে ভোগ করা মালিকের অনুমোদন সাপেক্ষে।
তাই সরকার ঘোষিত “সাধারণ ছুটি” (যা “জেনারেল হলিডে”) শ্রম আইনে কি-ভাবে সন্নেবেশিত হবে তা এক আইনি প্রশ্ন। এই কারণে যে সংশ্লিষ্ট মালিক (নিয়োগকারী) যে ছুটি (হলিডে) ঘোষণা করেননি সেই সময়ের জন্য প্রযোজ্য কোন ছুটির (“হলিডে”) অনুপস্থিতি কিংবা সেই সময়ের প্রযোজ্য মজুরীর দায় তাঁর কি-না; হলে কিভাবে হবে- সেও এক বিরাট প্রশ্ন।
এখন যুক্তি হ’ল স্বাস্থ্যজনিত নিরাপত্তা ও জনস্বার্থে এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার “সাধারণ ছুটি” ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। এই ক্ষেত্রে যে নির্বাহী আদেশ তা আইন বলে গণ্য হবে এবং শ্রম আইনের আওতাধীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-কারখানাসহ সকলের জন্য তা সমভাবে প্রযোজ্য হবে।
তবে এই বিষয়ে সরকারের “সাধারণ ছুটি” ঘোষণার প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রম আইনের আওতায় যেসকল প্রতিষ্ঠান বা কারখানা তাদের ক্ষেত্রে সেই ছুটি কিভাবে প্রযোজ্য ও প্রয়োগ হবে এবং সে সময়ে চাকরীর শর্তাবলী বা শিল্প-সম্পর্ক কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে- সেই সব বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বা অন্য কোন দপ্তর থেকে সম্পুরক আদেশ ও নির্দেশনা জারী করা দরকার রয়েছে। তা করা হলে কোন বিভ্রান্তি তৈরি হতোনা। আর এই কাজ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের; কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর কিংবা শ্রম দপ্তরের নয়; কারণ তাদের ক্ষমতা সীমিত (শ্রম আইনের যথাক্রমে ৩১৮-৩১৯ ও ৩১৭ ধারা)।
এই ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন- ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের (২০০৫) আওতায় দেশব্যাপী “লকডাউন” ঘোষণা করেছে। সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান বলে এই আদেশ জারী করেছেন তাদের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব। একই সঙ্গে সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রণালয় মালিকদের নেতৃস্থানীয় সকল সংগঠন বরাবরে লিখিত পত্রে (তারিখ ২০ মার্চ) করোনার সময় মালিকদের সার্বিক সহযোগিতা চান এবং একই সঙ্গে এই সময়ে কোন শ্রমিককে ছাঁটাই বা টার্মিনেট না করতে অনুরোধ করেন। পাশাপাশি করোনাকালে (কোভিড-১৯) কর্মস্থলে শ্রমিক-কর্মচারীর অনিচ্ছাকৃত যে অনুপস্থিতি তাকে কর্ম-সময় (অন ডিউটি) বলে বিবেচনা করার অনুরোধ করেছেন। বিপরীতে সরকার শিল্প-মালিকদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করেছে।
পাকিস্তান বিষয়টিকে মোকাবেলা করছে প্রাদেশিক পর্যায়ে। যেমনঃ সিন্ধু প্রদেশের ক্ষেত্রে সেখানকার স্বরাষ্ট্র বিভাগ বিগত ২৩ মার্চ জারী করা এক আদেশে প্রদেশজুড়ে “লকডাউন” ঘোষণা করেছে। তারা সেখানকার মহামারী রোগ সংক্রান্ত আইন (২০১৪) প্রয়োগ করেছে। একই আদেশে এই সময় কোন শ্রমিককে যাতে লে-অফ কিংবা ছাঁটাই না করা হয় তাও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। সিন্ধু সরকার পরিস্কার করে ঘোষনা দিয়েছে যে, সেখানকার লকডাউনের সময় সকল শ্রমিককে পূর্ণ-মজুরী দিতে হবে, আর তা দিবেন সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী বা শিল্প-মালিক। বন্ধকালীন সময়কে মজুরীসহ ছুটি বলে গণ্য করতে হবে। পাকিস্তান সরকারও সেখানকার শিল্প-মালিকদের জন্য প্রণোদনা ঘোষনা করেছে।
এবার আমাদের দেশের পরিস্থিতিতে ফেরা যাক। সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। যার জন্য শিল্প মালিকদের কোন সুদ দিতে হবে না। এই অর্থ যারা নিবেন তাদেরকে ২% হারে সার্ভিস চার্জসহ গৃহীত অর্থ দুই বছর মেয়াদে ফেরত দিতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বলছেন, এই প্রণোদনা শ্রমিকদের কয়েক মাস মেয়াদে চাকুরীতে টিকিয়ে রাখার জন্য, যাতে করে তাদের বেতন-ভাতা অব্যাহত থাকে। তাহলে, বার্তা কিন্তু পরিস্কার। কোন কারখানায় কাজ থাকুক বা না থাকুক শ্রমিক তার চাকুরীতে বহাল থাকবে; মজুরী পাবে।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনেক আগেই এই বিষয়ে শিল্প মালিকদের প্রতি পরিস্কার লিখিত বার্তা দেওয়া দরকার ছিল। তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে যেয়ে বিভিন্ন সময় যা বলেছেন তা একেকজন একেকভাবে রিপোর্ট করেছে। মন্ত্রণালয় লিখিত নির্দেশনা না দেওয়ার কারণে ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগে প্রায় হাজার খানেক গার্মেন্টস কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। (অনেকে তা থেকে এখন ফেরত আসছেন বলে শোনা যাচ্ছে)।
লে-অফ শ্রম আইনের আওতায় শিল্প-মালিকদের জন্য কারখানা সাময়িক মেয়াদে বন্ধ ঘোষণার একটি প্রক্রিয়া (যা আইনিভাবে মালিক কর্তৃক ঘোষিত এক ধরনের বিশেষ ছুটি- যা মূলতঃ “হলিডে”)। এতে স্থায়ী শ্রমিকদের চাকুরী থাকে, তবে লে-অফের সময় তাদেরকে মূল-মজুরীর অর্ধেক এবং বাড়িভাড়া (ও প্রযোজ্য অন্যান্য ভাতা) দিতে সংশ্লিষ্ট মালিককে পরিশোধ করতে হয়। এটি মালিকের জন্য একটি সুবিধা; তার কিছু অর্থ সাশ্রয় হয়।
তবে খারাপ দিক হ’ল এর কারণে কারখানায় যে সব বদলী ও অস্থায়ী (ক্যাজুয়াল) শ্রমিক রয়েছে কিংবা যাদের চাকুরীর বয়স এক বছরের কম লে-অফকালে তারা কোন মজুরী বা ক্ষতিপূরণ পায়না, অর্থাৎ তারা আয়হীন হয়ে পড়ে। তবে চাকুরীতে টিকে থাকে; লে-অফের পর যদি কারখানা খোলে তখন তারা ফেরৎ আসতে পারবে। আবার ৪৫ দিনব্যাপী লে-অফ শেষ হলে (১৬ ধারা) মালিক তখন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের ছাঁটাই (২০ ধারা) করতে পারেন; এতে স্থায়ী-অস্থায়ী সকল শ্রমিকের চাকুরী অবসান হয়। ছাঁটাই হলে যাদের চাকুরীর বয়স এক বছরের বেশী কেবল তারাই আইন-নির্ধারিত হারে ক্ষতিপূরণ পায়। আর ছাঁটাইকালে যাদের চাকরীর বয়স এক বছরের কম (এবং যারা বদলী ও অস্থায়ী) তারা কোন ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হয়না (যেহেতু চাকুরীর বয়স এক বছর হয়নি)। তবে এই এক বছরের হিসাব হ’ল পূর্ববর্তী ১২ পঞ্জিকা মাসে ২৪০ দিন কাজ; এই ২৪০ দিন হিসাব করতে প্রকৃত কাজের দিনগুলি ছাড়াও লে-অফের দিনসমূহ, মজুরীসহ বা ছাড়া অসুস্থতাজনিত ছুটি, আইনসম্মত ধর্মঘট, ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রসূতিকালীন ছুটি প্রভৃতি ধরতে হবে (১৪ ধারা)।
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, গার্মেন্টস শিল্পের মোট ৪০ লাখ শ্রমিকের মধ্যে প্রায় ২০% এর চাকুরীর বয়স এক বছরের কম। তাই দেখা যাচ্ছে, কারখানা লে-অফ হলে প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক শুধুমাত্র পোশাকখাতেই আয়হীন হয়ে পড়বে এবং পর্যায়ক্রমে যারা চাকুরী হারাবে। যার সামাজিক প্রভাব ভয়াবহ।
আরেকটি বিষয় কারখানা লে-অফ করা শ্রম আইনের আওতায় মালিকের একটি অধিকার হলেও সরকার ঘোষিত ও বিদ্যমান সাধারণ ছুটির সময় তার প্রয়োগ ও কার্যকর করা কতটা যুক্তিযুক্ত, নীতিসিদ্ধ ও আইনসঙ্গত সে প্রশ্ন রয়েই যায়। লে-অফ এক প্রকারের ছুটি (“হলিডে”), প্রতিষ্ঠান বা কারখানা বন্ধ রাখা যা সংশ্লিষ্ট মালিক কর্তৃক ঘোষিত; আর শ্রম আইনের বিধানে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট মালিক ছাড়া অন্য কেউ কোন কারখানা বা উহার কাজ বন্ধ ঘোষণা করতে পারেনা। তাই সাধারণ ছুটি ও লে-অফের মাধ্যমে কারখানা বন্ধ ঘোষণা একই সঙ্গে কার্যকর করা মূলতঃ দ্বৈত প্রভাব (Double action or overlapping); যা বিদ্যমান আইন ও ন্যায়পরায়নতার দৃষ্টিতেও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
বিষয়টি বুঝতে পেরে দরিদ্র শ্রমিকদের রক্ষা ও আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধে সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে করোনাকালে শিল্প-কারখানা লে-অফ ঘোষণা, শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই ও টার্মিনেশন বন্ধ করতে শ্রম আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাসমুহের (যেমনঃ ১২, ১৬, ২০ ও ২৬ ধারা) মালিক কর্তৃক-প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে (যা এক ধরণের অব্যাহতি) এক প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছিল বলে পত্রিকায় খবর হয়েছে। তবে প্রভাবশালী মহলের তদবিরে সেই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হচ্ছেনা বলেও পত্র পত্রিকায় খবর হয়েছে। শ্রম আইনের ৩২৪ ধারায় সরকারের এই ক্ষমতা রয়েছে, যা প্রয়োগ করতে পারেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব। তাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের “অনুমোদন” দরকার বলে বলা হচ্ছে। অথচ এই ধারা ব্যবহার করেই শ্রম মন্ত্রণালয় ইতিপূর্বে অনেক কারখানা ও মালিককে শ্রম আইনের কিছু ধারা “মানিয়া চলা হইতে অবাহতি”- আদেশ দিয়েছেন। আর এখনকার প্রস্তাব “প্রয়োগ করা হইতে অব্যাহতি” সংক্রান্ত। আগেরগুলির উপকারভোগী শিল্প-মালিকরা; আর এখন যা প্রস্তাবিত তার উপকারভোগী শ্রমিক-কর্মচারী। তাই এতে এতো টালবাহানা!
পত্রিকায়ই খবর বেড়িয়েছে, বে-আইনি ছাঁটাই বন্ধ করার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক গত ৩ এপ্রিল শ্রম সচিব তথা সরকারকে একটি চিঠি দেন। যার ব্যাপারে কই সিদ্ধান্ত হয়েছে তা এখনও কেউ জানেনা।
সর্বশেষ জানা গেছে, শিল্প-মালিক, শ্রমিক প্রতিনিধি ও মাননীয় শ্রম প্রতিমন্ত্রীর এক মধ্যে বৈঠকে (২৮ এপ্রিল) আগামী ঈদ-উল-ফিতরের আগে শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফ না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি এখনও একটি সুপারিশ মাত্র। যদি সিদ্ধান্ত হয়েই থাকে, তবে তাকে প্রশাসনিক আদেশ বা নির্দেশনায় পরিণত করতে হবে এবং ব্যাপক প্রচার করতে হবে। না হলে এ নিয়েও গুজব ও বিভ্রান্তি চলতেই থাকবে।
লেখক: এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং মানবাধিকার ও শ্রম আইনে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী।
ই-মেইলঃ [email protected]
মতামত লিখুন :