Logo

মানব সম্পদ

RMG Times
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
  • শেয়ার করুন

নূরে এ. খান : আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার যে অংশটুকু সরকারী অর্থায়নে অর্থাৎ সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয় তন্মধ্যে উচ্চ শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা) অন্যতম। এ ব্যাপারে আমার কিছু মূল্যায়ন রয়েছে। 

সরকারী বাজেটের বিশাল একটা অংশ আমাদের উচ্চ শিক্ষা অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচের খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। এখানে বলে রাখা ভাল, শিক্ষার সমস্ত উপকরণ এবং পাঠদানের প্রয়োজনীয় আনুসাঙ্গিক যে বিষয়গুলো আছে যেমনঃ জমি, ভবন, ক্লাস রুম, ল্যাব ইত্যাদি। এক কথায় বলতে গেলে এগুলো এখন সমস্ত বিভাগীয় পর্যায় যথেষ্ট এবং সুন্দর ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এখন যেই জিনিসগুলো দরকার তা হচ্ছে যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা, পাঠ্যক্রমের মান উন্নয়ন, যোগ্য এবং মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগদান এবং তার যথাযথ প্রয়োগ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে দক্ষ, যোগ্য, সম্পদশালী জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর করা।

মানবজাতির সবচাইতে উল্লেখযোগ্য যে পাঁচটি মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে কিন্তু শিক্ষা অন্যতম। শিক্ষার অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মোট জনসংখ্যাকে জনশক্তি তথা জনসম্পদে পরিণত করা, অর্থাৎ মানব সম্পদ। যে কোন জাতির উন্নয়নের জন্য জনশক্তি বা মানব সমম্পদের দক্ষ ব্যবহার, যোগ্য ব্যবহার এবং যথোপযুক্ত ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই, সে জন্য আধুনিক শিক্ষা, মানসম্মত শিক্ষা এবং সময়োপযোগী শিক্ষার কোনই বিকল্প নেই।

আমি যে কথাটি বলতে চাইছি- তা হল, আমাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা গরিব দেশের সরকার হয়েও সরকারী বাজেটের আমরা যে বিশাল অংশ ব্যয় করি তা আসলে কতটুকু এবং কিভাবে কাজে আসছে তা মূল্যায়ন করার এখনই সময় বলে আমি মনে করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চশিক্ষায় পৃষ্ঠপোষকতার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কিছু যুক্তি তুলে ধরছি।

প্রথমত, সরকার শিক্ষা খাতে বাজেটের বিশাল একটা অংশ, প্রথম বা দ্বিতীয় সারির খরচের যে অংশটা উচ্চ শিক্ষায় ব্যবহার করছে, সেটা আর করতে চাচ্ছিনা। কারন, Infrastructure বা অন্যান্য বিষয় গুলো তৈরি হয়ে গেছে। তার পরেও যে খরচগুলো না হলেই নয় যেমনঃ শিক্ষকদের বেতন বা অন্যান্য যে খরচ বা ব্যয় ভার বহনের জন্য, একটি চমৎকার জায়গা তৈরি করার জন্য আমি বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি আর তা হচ্ছে, প্রত্যেকটি জেলায় নূন্যতম একটি করে ইন্ডাস্ট্রি করতে হবে, সেটা উদাহরণ স্বরূপ একটি প্লাস্টিক কারখানাও হতে পারে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাই এই কারখানায় কর্মী হিসেবে দৈনিক তিন ঘন্টা বা চার ঘন্টা করে বিভিন্ন শিফটে কাজ করবে। 

সেখানে অর্থাৎ ওই কারখানাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির  স্টুডেন্টরা সকল বিভাগে অর্থাৎ সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে পিয়ন, প্রোডাকশন, এইচ আর, এডমিন, কোয়ালিটি, মার্কেটিং, কমার্সিয়াল, একাউন্টিং, ফিন্যান্স ইত্যাদি সব ডিপার্টমেন্টে কাজ করবে।

যেখানে সকল বিভাগ বা সেকশনে প্রতি শিফটে একজন নিয়োগপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মী থাকবে যারা প্রত্যেকটি সেকশনের প্রধান থাকবেন। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য চাকরি করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এক্ষেত্রে যে যেই বিশ্ববিদ্যালয় লেখা পড়া করবে সে সেই অঞ্চলের বা সে জেলার ফ্যাক্টরীতে চাকরি করবে, যার ফলে ক্রমান্বয়ে উৎপাদনমূখী শিক্ষা ব্যবস্থা বিরাজ করবে বা নিশ্চিত হবে। ফ্যাক্টরী থেকে তাদের যে বেতন দেওয়া হবে তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার খরচ যোগান দিবে। সেক্ষেত্রে বেসরকারী এবং সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতনের যে তারতম্য সেটা সমান করতে হবে।

উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পড়াশুনার ব্যয় যখন বৃদ্ধি পাবে তখন বাবা-মা এটার খরচ বন্ধ করে দিবে অথবা কম দিবে তখন বাধ্য হয়ে সবাই চাকরি করবে, কাজের মান এবং কোয়ালিটির যাতে ঠিক থাকে সেদিকেও যত্নবান হবে। এতে করে প্রত্যেকেরই প্রোমোশন হবে, দেখা গেলো চার বছর বা পাঁচ বছর পড়াশুনা এবং কাজের সমন্বয়ে তার যে জ্ঞান লব্ধ হবে এবং যে যেই সাবজেক্টে পড়ছে তার সমসাময়িক বা তার সাথে মিল রেখে সে ঐ নির্দিষ্ট বিষয়ে কাজ করবে এবং প্র্যাক্টিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করবে। সে তার গ্যাজুয়েশন শেষ করার পরে, তার কাজর অভিজ্ঞতা ৪ বা ৫ বছর যা হোক না কেন তা সে তার সিভিতে  উল্লেখ করলে আমার মনে হয় বেকার এর প্রশ্নটা আর থাকবেনা এবং সবাই বাই-ডিফল্ট শিক্ষার পাশাপাশি একটা দক্ষ জনশক্তিতে পরিনত হবে। যার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হবার আগেই তার মধ্যে পেশাগত শিক্ষা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা চলে আসবে।

দেশের এই সমস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য-সামগ্রী সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব কিন্তু সরকারকেই নিতে হবে। সেক্ষেত্রে সূলভ মূল্যে কোয়ালিটি সম্পন্ন দেশীয় পণ্য সারা পৃথিবীতে কিভাবে মার্কেটিং করা যায় সে ব্যাপারে সরকার তার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে দায়িত্ব দিতে পারে। আমি যতগুলো বিষয় উল্লেখ করছি তাতে করে শিক্ষা মন্ত্রনালয় এর সাথে আরেকটি মন্ত্রনালয়ের খুব প্রয়োজন হবে আর তা হচ্ছে মানবসম্পদ মন্ত্রনালয়।

শুধু মাত্র যে প্লাস্টিক  ফ্যাক্টরী হতে হবে তা কিন্তু নয়। প্রয়োজন এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে যে কোন প্রতিষ্ঠানই করা যেতে পারে। এবং প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী যখন বাধ্যতামূলক চাকরি করবে তাদের ভেতরে অনেক ধরনের নোংরামি, বাজে চিন্তা এবং সমাজ বিরোধী কার্যকলাপ থেকে তারা সরে আসবে এবং আমাদের সামাজিক অবস্থানেও পরিবর্তন হবে। 

এখানে অনেক গুলো বিষয় আমরা পাবো আর সে গুলো হল: শিক্ষা খাতে যে ঘাটতি থাকে বা যে বাজেট করা হয় তা আর করতে হবেনা, উক্ত বাজেটের অর্থ দিয়ে উন্নয়ন মূলক যে কোন কাজ করা যাবে, আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে, বেকার বলে কোন কিছু থাকবে না, আমাদের দেশে বিদেশী লোক নিয়োগ বন্ধ হবে। বিদেশীরা চাকরীর সুবাদে যে বিশাল পরিমানের অর্থ নিয়ে যায় তা বন্ধ হবে, যার ফলে দেশের টাকা দেশেই থেকে যাবে। আর আরকটা বিষয় হচ্ছে যে আমাদের টোটাল এমপ্লয়ীদের মাঝে একটা সুন্দর স্ট্রাকচার সৃষ্টি হবে এবং সুস্থ প্রতিযোগীতা মূলক কাজের পরিবেশ তৈরী হবে, দক্ষ শ্রমিক গড়ে উঠবে। পরিশেষে দক্ষ মানব শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটবে। দেশের মোট জনশক্তি সর্বোপরী একটা শক্তিশালী জনশক্তি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

লেখক : ফ্যাক্টরী প্রধান, এনভয় গ্রুপ