ডেস্ক রিপোর্ট : গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে একটি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ২১-এ পৌঁছেছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। আগুনে পাঁচতলা ভবনটির ওপরের তিনতলার অনেকটাই ধসে গেছে। ভবনের বিভিন্ন অংশে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ভবনের ভেতরে আরও লাশ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ফায়ার সার্ভিস।
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। হতাহত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আজ শনিবার সকাল ছয়টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কারখানাটিতে ফয়েল পেপার ও কেমিক্যাল-জাতীয় দ্রব্য প্রস্তুত করা হতো বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
কারখানার মালিক সিলেট-৬ আসনের সাবেক সাংসদ সৈয়দ মকবুল হোসেন বলেন, বয়লারে কোনো ত্রুটি ছিল কি না তিনি জানেন না। শেষ কবে বয়লার পরীক্ষা করা হয়েছে, তাও জানেন না তিনি। আজ কাজ শেষে কারখানা ছুটি হওয়ার কথা ছিল।
সৈয়দ মকবুল হোসেন দাবি করেন, রাতের শিফটে ৭৫ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা। শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দেওয়া হয়েছে। হতাহত ব্যক্তিদের সবাইকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করবেন বলে তিনি জানান।
১৭ জন টঙ্গীতে ও চারজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগ টঙ্গী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি ব্যক্তিদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
টঙ্গী হাসপাতালে নিহত ব্যক্তিরা হলেন শ্রমিক সুভাষ চন্দ্র, ইদ্রিস আলী, আল মামুন, নয়ন মিয়া, মামুন, মো. জয়নুল, আনোয়ার হোসেন, রফিক, মো. হোসেন (৩০), গোপাল দাস (২৫), এনামুল হক (৩৫) ও রেদওয়ান। বাকি ব্যক্তিরা হলেন মো. রাশেদ (রিকশাচালক), হান্নান (নিরাপত্তাকর্মী), জাহাঙ্গীর (নিরাপত্তাকর্মী), রাজেশ (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) ও শংকর (পরিচ্ছন্নতাকর্মী)।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওহিদুজ্জামান (৪০), দেলওয়ার হোসেন (৩৫), আনোয়ার হোসেন (২৫) ও অজ্ঞাত এক নারী (৩০)। আহত আরও ১৫ জন সেখানে চিকিৎসাধীন।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামানের ভাষ্য, বয়লার বিস্ফোরণ থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে ভবনের ওপরের দিকে তিনতলা ধসে গেছে। পুরো ভবনই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১০টিরও বেশি ইউনিট কাজ করছে বলে তিনি জানান। ভবনের ভেতরে আরও লাশ থাকতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামানের ভাষ্য, বিসিক নগরীর ট্যাম্পাকো নামের একটি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। জয়দেবপুর, টঙ্গী, কুর্মিটোলা, মরপুর, উত্তরাসহ আশপাশের ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
টঙ্গী হাসপাতালে ১৭ জনের লাশ দেখা গেছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. পারভেজ মিয়ার ভাষ্য, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন কয়েকজন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, সেখানে আহত কয়েকজনকে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন নারী আছেন।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম। তিনি আরও জানান, নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও আহত ব্যক্তিদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, জেলা প্রশাসক এস এম আলম, গাজীপুর-২ আসনের সাংসদ জাহিদ আহসান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান প্রমুখ।
খবর : দৈনিক প্রথম আলো
মতামত লিখুন :