আব্দুল আলিম: পবিত্র রমজান মাস অত্যাসন্ন। স্বাভাবিকভাবেই সারা মুসলিম বিশ্বে রমজান মাস একটি বিশেষ মাস। অতিরিক্ত আমল আর সংযমের মাস। সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত আমরা একমাত্র আল্লাহর তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য সকল প্রকার পানাহার থেকে যেমন বিরত থাকি, তেমনি অন্য মাসের চেয়ে অধিক ইবাদত করি। রমজান মাস এলে ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য এমন কাজগুলি যেমন কমে যায় অনেক বেশি হারে, তেমনি বেড়ে যায় দান, ছদকাসহ অনেক ভালো কাজ। তবে আমাদের মনের অগোচরে আমরা একটি অগ্রহণযোগ্য কাজ করেই যাচ্ছি; সেটি হল খাদ্যের অপচয়।
এক জরিপে দেখা যায় মুসলিম দেশগুলিতে এই পবিত্র সংযমের মাসে ১৫-২৫% শতাংশ পর্যন্ত খাদ্য বা খাদ্য সামগ্রী খাওয়া বা ব্যবহারের গারবেজ বিনে চলে যায়। একই জরিপে দেখা যায়, রমজান মাসে মুরগি, গরু ও ছাগলের মাংসের চাহিদা প্রায় দেড়গুণ বেড়ে যায়। সামর্থ্যবান মানুষ তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাজার করেন। রোজায় সাধারণত রাতের খাবার সেহেরিতে বা সেহেরির বেঁচে যাওয়া খাবার ইফতারে খাওয়া হয় না। ফ্রেশ খাবারের চাহিদাই বেশি থাকে। অবশিষ্ট খাবারের ঠিকানা হয় গারবেজ বিন।
একইভাবে, রমজানে মাসে জমে উঠে বাফেট ইফতার ও ডিনারের আয়োজন। সংযমের এই মাসে যেখানে আমরা ১৬-১৭ ঘন্টা পানাহার থেকে বিরত থেকে নিজেকে সংযমী করছি, ঠিক একই মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিবার বাফেট ইফতার ও ডিনারে যোগ দিচ্ছি। বাফেট ইফতার বা ডিনার যেমন সংযমের বার্তা দেয় না, তেমনি এই বাফেট ডিনার আয়োজনেই রেস্টুরেন্টের সবচেয়ে বেশি খাবার অপচয় হয়। সেই অপচয়ের পরিমাণ অনেকটা আতকে উঠার মত।
বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি টন খাদ্য অপচয় করে। এই পরিমাণ খাদ্য দিয়ে ১৬ কোটি মানুষকে ৩ মাস খাওয়ানো সম্ভব। ১২ মাসের তুলনামুলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রমজান মাসের খাদ্য অপচয়ের হার সর্বোচ্চ। জলবায়ু সংকটের চরম প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যখন ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে, তারপরও ভাগাড়ে বাড়ছে খাদ্য বর্জ্যের স্তূপ।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের যেখানে লাখ লাখ মানুষ সকালের খাবারের অনিশ্চয়তা নিয়ে রাতে ঘুমোতে যায়, সেই দেশে এই পরিমাণ খাদ্যের অপচয় কি শুধুই অপচয়, নাকি অপরাধ? অন্যদিকে এটি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত মিথেন গ্যাস নিঃসরণ বৃদ্ধি করছে, যেই জলবায়ু সংকট আবার এই পৃথিবীকে খাদ্য সংকটের হুমকি দিচ্ছে।
পবিত্র কোররানে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন ‘(তোমরা) খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। পবিত্র রমজানে যখন আমরা বেশি বেশি নেক আমলের চেষ্টা করি ঠিক একই সময় প্রচুর খাবার অপচয় করছি, যা ইসলামের নিশ্চিতভাবে গর্হিত কাজ। জলবায়ু সংকট, খাদ্য সংকট ও মানবতা রক্ষায় খাদ্য অপচয় রোধ হোক এই রমজানের অন্যতম শপথ।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দি আরএমজি টাইমস
মতামত লিখুন :