আব্দুল আলিম : আজ মহান মে দিবস। শোষণের বিরুদ্ধে শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রামের দিন। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে। স্থান আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ও অন্যতম উন্নত দেশ আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেট। দানবীয় শ্রমঘন্টার বিরুদ্ধে ৮ ঘন্টা কাজের দাবীতে সেই দিন লক্ষ-লক্ষ মানুষ ন্যায্য অধিকার আদায়ে সমবেত হয়েছিল শিকাগোর হে মার্কেটে। ১লা মে’র শিকাগো ধর্মঘট শেষ পর্যন্ত রক্ত সংগ্রামে পরিণত হয়।
৪ঠা মে ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগোর হে-মার্কেট নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। আগস্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরন ঘটে, এতে এক পুলিশ নিহত হয়। পুলিশবাহিনী তৎক্ষনাত শ্রমিকদের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা রায়টের রূপ নেয়। রায়টে শহীদ হয় ১১ জন শ্রমিক। পুলিশ হত্যা মামলায় আগস্ট স্পীজ সহ আটজনকে অভিযুক্ত করে প্রহসনমূলক বিচার করে ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর এক প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করে। লুইস লিং নামে একজন একদিন পূর্বেই কারাভ্যন্তরে আত্মহত্যা করেন, অন্যএকজনের পনের বছরের কারাদন্ড হয়। ফাঁসির মঞ্চে আরোহনের পূর্বে আগস্ট স্পীজ বলেছিলেন, “আজ আমাদের এই নি:শব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে“।
শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের “দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার” দাবী অফিসিয়াল স্বীকৃতি পায়। আর পহেলা মে বা মে দিবস প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবী আদায়ের দিন হিসেবে, পৃথিবীব্যাপী আজও তা পালিত
বিশ্বের প্রায় ৮০ টি দেশে এই দিনটিতে সরকারী ছুটি থাকে। শ্রমিকদের জন্য এই দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মরণীয় একটি দিন। প্রতি বছর এই দিনে শ্রমিকরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে তাদের দাবীর পক্ষে শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে রাজপথ, এভাবেই মহান মে দিবসে শ্রমিক ঐক্য সুদৃঢ় করার প্রয়াস পায় মেহনতি মানুষ।
১৮৮৬ সালে আমোরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের দৈনিক আটঘন্টার কাজের দাবীতে শ্রমিকদের এই আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন জানাতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব দিনটিকে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করলেও খোদ আমেরিকাতে শ্রমিক দিবস পালিত হয় ৫ সেপ্টেম্বর।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি সরকারী ছুটিসহ পালিত হয়। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, শ্রমিক ফেডারেশন ও সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠন মে দিবস পালন করে থাকে। ঐতিহাসিক এই মহান মে দিবসে সকল আত্বত্যাগকারী শহীদ শ্রমিক, আমাদের দেশের বিভিন্ন মিল-কারখানা, যানবাহন, পরিবহন, জাহাজ শিল্প, হস্তশিল্প সহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত শ্রমিক, রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনসহ বিভিন্ন অনাকাংখিত দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা। আজকের এই দিনে দাবি জানাই যেন প্রতিটি শ্রমিক যেন ন্যূনতম জীবন ধারনের জন্য যথেষ্ট মজুরী পান। পাশাপাশি শ্রমের মূল্য যাতে সকল শ্রমজীবি সঠিক ভাবে সঠিক সময়ে পায় সেদিকে সরকার ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও যারা আমাদের অর্থনীতিতে আঘাত লাগতে দেয়নি, যাদের ঘামের মূল্যে আমার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে তাদের জন্য চাই নিরাপদ কর্ম পরিবেশ। চাই দেশের শ্রম আইন ও কারখানা নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন চাই। চাই এ দেশের আইনেই চলুক এ দেশের কারখানা, নিশ্চিত হোক আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা, বন্ধ হোক দেশের ভিতর বিদেশিদের খবরদারি, জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে প্রবেশ করি উন্নত বিশ্বের তালিকায়।
লেখক : সম্পাদক, দি আরএমজি টাইমস
মতামত লিখুন :