Logo

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে: রয়টার্স

Fazlul Haque
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : সম্প্রতি দুই বিদেশি হত্যা ও ধর্মীয় স্থাপনায় হামলার ঘটনায় তৈরি পোশাক খাতে বিদেশি ক্রেতা কমে যাওয়ার ‘আশঙ্কা’র মধ্যেও বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রফতানি বেড়েছে। অনেক বিদেশি ক্রেতা এ সময়ে অন্য দেশ থেকে পণ্য কেনারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাংক মধ্য-আয়ের দেশে এগিয়ে যাওয়ার পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা করেছিল। তবে সব আশঙ্কাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে বেড়েছে রফতানি। শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

busi-iDSC_0077

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গার্মেন্টস পণ্য রফতানি বাড়ায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। যদিও কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নতকরণসহ বেশ কিছু চাপের কারণে ব্যবসায়ীদের মুনাফা এ সময়ে কম হয়েছে।

পশ্চিমা ক্রেতাদের কম মূল্যে পোশাক ক্রয়ের অন্যতম স্থান বাংলাদেশ। গত কয়েক মাস ধরে বিদেশি ক্রেতাদের অনেকেই বাংলাদেশে আসতে ভয় পেয়েছেন। দুই বিদেশিসহ বেশ কিছু হত্যার ঘটনার পর এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

দেশে আসতে রাজি না হওয়ায় দুবাই, নয়া দিল্লি ও সিঙ্গাপুরে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে হয়েছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের। এমনকি গত বছর ঢাকায় একটি কারখানা পরিদর্শনে আসা ইতালির এক টেকনিশিয়ানের জন্য নিরাপত্তারক্ষীরও ব্যবস্থা করতে হয় বলে জানান একটি কারখানার জেনারেল ম্যানেজার এম. শফিকুল আজিম।

ওই সময় বিশ্বব্যাংকও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিল, জঙ্গিবাদের কারণে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়া থেকে বিচ্যুত হতে পারে। তবে, সে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, এ আশঙ্কার মধ্যেই বাংলাদেশ ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার (২৬ বিলিয়ন ডলার) তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। এ সময়ে এত বেশি রফতানি অনেকে আশা করেননি।

গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো ৯৩০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে। যা আগের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির পরিমাণ বেড়েছে ১৬ শতাংশ।

বিদেশিদের বাংলাদেশে আসতে না চাওয়া সম্পর্কে আতিকুল ইসলাম বলেন, এটা ছিল সাময়িক পরিস্থিতি। ওই ঘটনাগুলোর ২/৩ মাস পর ক্রেতারা দেশে আসতে শুরু করেন।

ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা এক কূটনীতিক মনে করেন, দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর সরকার ও স্থানীয় পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ ও সহযোগিতার কারণেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত বছর বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকার কূটনীতিক পাড়ায় আধা-সামরিক বাহিনী (বিজিবি) রাতে টহল শুরু করে।

এছাড়া, বিদেশি হত্যাকাণ্ডে মুখোশ পরা মোটরসাইকেল আরোহীরা জড়িত থাকায় মোটরসাইকেলে আরোহী বহন নিষিদ্ধ করা হয়।

মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার পর বাংলাদেশের শ্রম বাজারই সবচেয়ে সস্তা। গার্মেন্টসের শ্রম বাজারে আগে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও সম্প্রতি তা কমে এসেছে। বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা (৬৮ ডলার)। আর বিশ্বের সর্ববৃহৎ পোশাক রফতানিকারক দেশ চীনে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার ১০০ টাকা (২৮০ ডলার)।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে সহ্রসাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর থেকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের মুনাফা কমে গেছে বলে জানান দেশের অন্যতম পোশাক রফতানি কারক আতিকুল ইসলাম। তার মতে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের মুনাফার হার এখন মাত্র ৩ শতাংশ। তিনি জানান, বড় বড় কারখানাগুলো গড়ে ৭ লাখ ডলার ব্যয় করছে কারখানার সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। মুনাফা বাড়াতে অনেক কারখানাতেই অটো মেশিন বসানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ওয়ালমার্টের মুখপাত্র মেরিলি ম্যাকলিনস জানান, বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে একটি গ্রুপ তদন্ত করছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ এ খাতের অন্যতম উৎস। বাংলাদেশে বিনিয়োগ চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।