ডেস্ক রিপোর্ট : পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ মূল্যায়নে ২০১৩ সালে গঠিত হয় ইউরোপভিত্তিক আন্তর্জাতিক জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ। এর মেয়াদ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। সম্প্রতি এ জোটের মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়ানোর কথা উঠেছে। এ বিষয়ে ঐকমত্যের কথা জানানো হয়েছে অ্যাকর্ডের বাংলাদেশ কার্যালয় থেকেও।
এদিকে অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের পোশাক শিল্প মালিকরা। মালিকদের এ অভিযোগের সঙ্গে সরকারের পক্ষে একমত পোষণ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। অ্যাকর্ডের সময় বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত আকস্মিক বলে মত প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) প্রভাবশালী ক্রেতাগোষ্ঠীর রাষ্ট্রদূতরাও।
গত ২৯ জুন অ্যাকর্ডের সময় বৃদ্ধিতে সম্মত হয়ে একটি চুক্তির কথা জানায় ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়ন ও ইউনি গ্লোবাল ইউনিয়ন। অনুস্বাক্ষরকারী হিসেবে এ চুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন (সিসিসি) ও ওয়ার্কার রাইটস কনসোর্টিয়াম। চুক্তির উদ্যোক্তারা স্বাক্ষরকারী হিসেবে এ পর্যন্ত যেসব ক্রেতাগোষ্ঠী ও ফ্যাশন ব্র্যান্ডের কথা উল্লেখ করেছেন, তাতে বাংলাদেশের এক হাজারের বেশি পোশাক কারখানা নতুন চুক্তির আওতায় পড়বে। অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকেও গতকাল সময় বৃদ্ধির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
গতকাল অ্যাকর্ডের সরবরাহকৃত বিবৃতি অনুযায়ী, জোটের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানি বা ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলো দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশে ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তায় চুক্তিবদ্ধ হতে বা অ্যাকর্ড গঠনে ঐকমত্য পোষণ করেছে। ২০১৮ সালে বর্তমান অ্যাকর্ডের মেয়াদ শেষ হলে ওই চুক্তি কার্যকর হবে। বাংলাদেশের কারখানাগুলোকে নিরাপদ করে তুলতে কোম্পানি ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মধ্যে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি হলো অ্যাকর্ড।
অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন দেশের পোশাক শিল্প মালিকরা। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে লিখিতভাবে সময় বৃদ্ধির বিষয়ে নিজেদের মনোভাব তুলে ধরেছেন তারা।
এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে জরুরি সভা করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এতে অংশ নেন আইনমন্ত্রীও। স
ভায় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান। আরো উপস্থিত ছিলেন পোশাক শিল্প মালিক রুবানা হক।
রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মার্শা বার্নিকাট, ইইউর পিয়েরে মাইয়িদু এবং কানাডা, নেদারল্যান্ডস ও ইতালির রাষ্ট্রদূতরা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী ও পোশাক শিল্প মালিক প্রতিনিধিরা। এ সময় জানানো হয়, অ্যাকর্ডের সময় বৃদ্ধি নিয়ে রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য গতকালের সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করা হয়েছে যে, অ্যাকর্ডের সময় বৃদ্ধি কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। কারণ এটি নেয়া হয়েছে একতরফাভাবে। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে খাতসংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এছাড়া প্রথমবার অ্যাকর্ড গঠনের সময় বাংলাদেশের পোশাক কারখানার যে অবস্থা ছিল, বর্তমানে সে অবস্থা অনেকটাই পাল্টে গেছে। কাজেই পূর্বনির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগে সময় বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে আসা যৌক্তিক নয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি, অ্যাকর্ডের সময় বৃদ্ধি কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। সিদ্ধান্ত হতে হলে আমাদের সরকারকেও এর মধ্যে রাখতে হবে। এছাড়া খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। এগুলো না করে একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিত নয়। আমরা বলেছি, অ্যাকর্ডের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদ শেষের পর যদি সময় বাড়াতে হয়, তাহলে প্রস্তাব দিতে হবে। এ বিষয় নিয়েই রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তারাও আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
পোশাক শিল্প মালিক রুবানা হক বলেন, রাষ্ট্রদূতরা একমত পোষণ করেছেন। তাদের কাছেও সিদ্ধান্তটি আকস্মিক ছিল বলে তারা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রদূতরা বলেছেন, অ্যাকর্ড অনেক দিন ধরে কাজ করছে। মেয়াদ শেষের পর অ্যাকর্ড থাকলেও অন্য আঙ্গিকে থাকবে। সরকার ও খাতসংশ্লিষ্টরা যদি এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না থাকে, তাহলে প্রক্রিয়াটি অর্থহীন হয়ে যাবে। কারণ আমাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে সেটা ঠিক হবে না। অ্যাকর্ডের সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারা কাজের পরিধিও বাড়াচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়নের মতো বিষয় ও পোশাক খাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কাজেই এটা একতরফাভাবে নেয়ার ও মেনে নেয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নয়।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের বলা হচ্ছে, সময় বৃদ্ধির বিষয়টি খসড়া আকারে রয়েছে, নিশ্চিত সিদ্ধান্ত হয়নি। রাষ্ট্রদূতরা বলেছেন, তারা চেষ্টা করবেন, যাতে সময় বৃদ্ধির বিষয়টি প্রস্তাবনা আকারে আমাদের কাছে পাঠানো হয়। এর পর সরকার ও খাতসংশ্লিষ্টরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন, (অ্যাকর্ড) প্রয়োজন আছে কিনা, কীভাবে থাকবে, কে থাকবে, কতদিন থাকবে আর কী কাঠামোয় থাকবে। অ্যাকর্ড যখন গঠন হয়, তখনকার তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অবস্থা অনেকটাই বদলে গেছে।
সৌজন্যে : দৈনিক বনিকবার্তা
মতামত লিখুন :