২ বছরের জন্য উৎসে কর প্রত্যাহার চায় বিজিএমইএ
RMG Times
রবিবার, মে ২৮, ২০১৭
ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী ২ বছর তৈরি পোশাক রফতানিতে উৎসে কর প্রত্যাহার চায় তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এছাড়া এ শিল্পের করপোরেট ট্যাক্স হার ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। শনিবার বিজিএমইএ’র সভাকক্ষে পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও আসন্ন বাজেট (২০১৭-১৮) শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক শিল্পকে বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। ইউরোর দরপতন, ব্রেক্সিট এবং গ্যাস সংকটসহ বিভিন্ন কারণে এ খাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১৮ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে নতুন বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করলেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। ব্যাপক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জাপানের বাজারে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বাজারের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সব মিলিয়ে ১০ মাসে নতুন বাজারে রফতানি প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ২১ শতাংশ। গত বছর এ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ছিল।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ২১ শতাংশ। অথচ ১০ বছরে এ খাতে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। আমাদের পণ্যের মূল্যমান কমেছে। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ কম এসেছে। দেশি পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নীরব মন্দা চলছে। নির্বাচনের পরও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ায়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদ্যমান প্রতিকূলতার দরুন বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা ও ক্রয় কমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১০ মাসে রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। তৃতীয় বৃহত্তম বাজার যুক্তরাজ্যে কমেছে ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর মুদ্রার তুলনায় আমাদের টাকা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ৫ বছরে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩২ শতাংশ। এছাড়া তুরস্কে মুদ্রা ১০২ শতাংশ ও পাকিস্তানি রুপির ১৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। এ সময়ে টাকার মান ডলারের বিপরীতে ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে। এর ফলে রফতানিকারকরা বেকায়দায় রয়েছেন। তিনি জানান, ২০১২ সালে ৮৫ টাকায় যে ডলার নেগোশিয়েট করা হয়েছে, এখন একই ডলার ৮০ টাকারও নিচে। অপরদিকে ইউরোর ক্রম অবমূল্যায়ন ও ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ পাউন্ডের অবমূল্যায়নের ফলে রফতানিকারকরা মূল্যছাড়ের চাপে রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে উদ্যোক্তারা মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করছেন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর এ খাতের উদ্যোক্তারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কারখানা ঠিক করছেন। রিমেডিয়েশন প্লান বাস্তবায়ন করতে একটি কারখানাকে গড়ে ৫ কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে তা ২০ কোটি টাকা পর্যন্তও পৌঁছাচ্ছে।
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, পোশাক শিল্পটি কারও ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৪৪ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতের উদ্যোক্তারা শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ৩৩ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। এছাড়াও পোশাক শিল্প খাত থেকে এ সময়ে দেশের ভেতরে অন্যান্য সেবা খাতে পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। শ্রমিকদের কল্যাণে অর্থনীতির বিভিন্ন খাত বিশেষ করে বেশকিছু পণ্যের স্থানীয় বাজার বিকাশ লাভ করেছে। এখন পোশাক শিল্পের পরিস্থিতি ভালো নেই। এতগুলো মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিবেচনা করে পোশাক খাতে বাড়তি সহায়তা চেয়েছেন তিনি। এ সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ২ বছরের জন্য এ খাতে উৎসে কর প্রত্যাহারসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেন সিদ্দিকুর রহমান। শিল্পে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাজস্ব নীতিসহ অন্যান্য সব নীতি কৌশল ৫ বছরের জন্য স্থিতিশীল রাখার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএসহ সভাপতি মোহাম্মাদ নাসির এবং মোহাম্মদ হাসান খান বাবুসহ বিজিএমইএ’র অন্য কর্মকর্তারা।
মতামত লিখুন :