ডেস্ক রিপোর্ট : সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার ফলে আশুলিয়া ইস্যুতে আর আন্দোলনে যাবেন না শ্রমিক নেতারা। গত মঙ্গলবার রাতে শ্রম মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সমঝোতা হয়। মূল বৈঠকের আগে আশুলিয়ার শ্রমিক অসন্তোষ ইস্যুতে আন্দোলনরত প্রায় সব শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দিনভর আলোচনা করেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সমঝোতার পর ‘অ্যাপারেল লেবার সামিট’ নামে একটি শ্রমিক সংগঠন তাদের ডাকা আগামীকাল শুক্রবারের বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। আগামী শনিবার শুরু হতে যাওয়া ঢাকা অ্যাপারেল সামিটের আগের দিন এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে কারখানা মালিকদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পোশাক খাতের বড় শিল্প উদ্যোক্তা হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। অন্যদিকে, শ্রমিক নেতাদের পক্ষে ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সভাপতি আমিরুল হক আমিন, মহাসচিব কুতুবউদ্দিন আহমেদ এবং অন্যান্য শ্রমিক নেতার মধ্যে রায় রমেশ চন্দ্র, বাবুল আখতার, নাজমা আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অ্যাপারেল সামিটের আগের দিন শ্রমিকদের যে কর্মসূচি ছিল, সেটি তারা স্থগিত করেছে। পরে ওই কর্মসূচি পালন করবে। মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আশুলিয়া ইস্যুতে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, সেটি এখন আর নেই। তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। উভয় পক্ষ একসাথে কাজ করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবশ্য এ নিয়ে এখন আর কোনো আন্দোলন নেই। কারণ, শ্রমিক নেতারা যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের সবাই ছাড়া পেয়ে এখন মুক্ত। বন্ধ থাকা বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসও খুলে দেওয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন শ্রমিক নেতা বলেন, আশুলিয়া ইস্যুতে আমাদের সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি ছিল। সরকার ও মালিকপক্ষ এগুলো মেনে নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এ কারণে পূর্বনির্ধারিত অ্যাপারেল লেবার সামিটের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, অ্যাপারেল সামিট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগের দিন এর ধরনের কর্মসূচি পালন কিছুটা দৃৃষ্টিকটু হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে আশুলিয়ার ঘটনায় করা সবক’টি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। সেইসঙ্গে আটক সব শ্রমিকের মুক্তি, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ করে দেওয়া ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের অফিস খুলে দেওয়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব নিয়ে টানাহেঁচড়া বন্ধসহ আরও কিছু দাবি তুলে ধরেন।
শ্রমিক নেতা রায় রমেশ চন্দ্র গণমাধ্যমকে বলেন, গার্মেন্টস পণ্য গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের অংশ। এ জন্য মালিকপক্ষ, শ্রমিক ও সরকার— পরস্পর শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একসঙ্গে কাজ করা দরকার। মালিকপক্ষের ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মানা দরকার। শ্রমিক সংগঠনকেও দায়িত্বশীল আচরণ করা দরকার।
প্রসঙ্গত, নূ্যনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকার দাবিতে গত ১১ ডিসেম্বর আশুলিয়ার বেরণ এলাকায় উইন্ডি গ্রুপের কারখানায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। পরের দিন আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি কর্মসূচিতে যোগ দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় গত ২০ ডিসেম্বর ৫৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিজিএমইএ। এ ধারায় যত দিন কারখানা বন্ধ থাকে, তত দিনের বেতন না দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। পরের দিন নতুন করে কর্মবিরতিতে যোগ দেন আরও চার কারখানার শ্রমিকরা। সব মিলিয়ে এত দিন ৫৯টি কারখানা বন্ধ ছিল। কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পরে কারখানা খুলে দেওয়া হয়।
মতামত লিখুন :