ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি হেচং কর্পোরেশন নামের বিদেশী বিনিয়োগকৃত একটি পোশাক শিল্প গ্রুপ অ্যাকর্ড কর্তৃক টার্মিনেট হওয়ায় সর্বত্র অ্যাকর্ডের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠে। হেচং কর্তৃপক্ষ অ্যাকর্ডের সিদ্ধান্তে ভেঙে না পড়ে শক্তভাবে অবস্থান নেয়। বিভিন্ন দফতর ঘুরে সুফল না পেলে নেদারল্যান্ডের কোর্টের আশ্রয় নিলে অ্যাকর্ডের টনক নড়ে। মামলা কোর্টে উঠার আগেই শর্তসাপেক্ষে হেচং এর টার্মিনেট স্থগিত করে ব্যবসায়িক সম্পর্ক পূণঃস্থাপন করে নেয় ইউরোপিয়ান ক্রেতা জোট এ প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে অ্যাকর্ড কর্তৃক ৫৩ টি কারখানার সাথে তাদের স্বাক্ষরিত ক্রেতাদের ব্যবসা স্থগিত ঘোষণা করলেও হেচং গ্রুপই প্রথম প্রতিবাদের ঝড় তুলে আইনের আশ্রয় নেয়। তাতে সুফলও পায়। আর সেই দৃষ্টান্তকে সামনে রেখেই ভুক্তভোগী কিছু কারখানা নতুন করে আশার আলো খুঁজছে। অ্যাকর্ডের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ডাচ কোর্টে অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে একাধিক পোশাক কারখানা।
বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, অ্যাকর্ডের নানা অন্যায় আর চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের বলির শিকার হচ্ছে একের পর এক পোশাক কারখানা। পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেয়ার নামে এরা অভিনব পন্থায় ব্যবসা করছে বলেও জানিয়েছে অনেক ভূক্তিভোগীরা। সিংহভাগ সংশোধনী কার্যক্রম সম্পন্ন করার পরও ঠুনকো অজুহাতে বিভিন্ন কারখানার সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করছে। হেচং কর্পোরেশনের প্রতিবাদ দেখে এখন একাধিক কারখানা ডাচ কোর্টে অ্যাকর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদের মধ্যে অন্তত একটি কারখানা ইতিমধ্যে তাদের পক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়োগকৃত বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য আইনজীবী বলেন, অ্যাকর্ডের অনিয়মের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। খুব শীগ্রই অভিযোগ ডাচ কোর্টে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, চুপ করে বসে না থেকে অ্যাকর্ড এর বাতিল তালিকায় থাকা কারখানাগুলি আইনের আশ্রয় নিলে কারখানা কর্তৃপক্ষের জয়ী হবার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
অ্যাকর্ড কর্তৃক ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া কারখানাগুলি আইনের আশ্রয় নেয়াকে ইতিবাচক ও জরুরী বলে মনে করছেন পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট সুধিজনরা। পোশাক শিল্পে কর্মরত মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা পেশাজীবিদের নিয়ে গঠিত অন্যতম সুপরিচিত সংগঠন “বাংলাদেশ সোসাইটি ফর অ্যাপারেল হিউম্যান রিসোর্স প্রফেশনালস (BSAHRP) এর সাধারণ সম্পাদক আরএমজি টাইমসকে বলেন, অ্যাকর্ড/এলায়েন্স কারখানাগুলিতে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে চাপ দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়কে ব্যয়বহুল ও কঠিন করে তুলেছে যা খুব জরুরী ছিল না। কেউ যদি অ্যাকর্ডের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন এবং তাদের প্রতি অন্যায় হয়েছে মনে করেন তাহলে অবশ্যই তাদের আইনের আশ্রয় নেয়া উচিত।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপিয়ান ক্রেতাদের গঠিত জোট অ্যাকর্ড এর সাক্ষরকারী ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ২০০ এবং তাদের উৎপাদিত ১৬০০ কারখানায় ২০ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে। অ্যাকর্ড ইতিমধ্যে ৫৩ টি কারখানার সাথে তাদের স্বাক্ষরিত ক্রেতাদের ব্যবসা স্থগিত করেছে।
মতামত লিখুন :