Logo

সবুজ শিল্পায়নের জন্য কারখানার মালিকদের বাড়তি কর দেয়ার আহবান অর্থমন্ত্রীর

Fazlul Haque
সোমবার, আগস্ট ১, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

বাসস: পরিবেশবান্ধব ‘সবুজ’ শিল্পের জন্য সরকারের সেবা নিশ্চিত করতে কারখানার মালিক ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের আরো বেশি কর দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা আরো বেশি কর দেবেন, যাতে এই অতিরিক্ত পয়সা দিয়ে সরকার পরিবেশ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। কেননা বর্তমান রাজস্ব আয় দিয়ে সবুজ শিল্পায়নের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।এজন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।’

রোববার রাজধানীর মতিঝিলে মেট্রোপলিটন চেম্বার মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের জন্য সবুজ শিল্পনীতি:সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও দ্যা এশিয়া ফাইন্ডেশন যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে।

এমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিল্প মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিস-উদ-দৌলা,বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভ্যান্স স্টাডিজ (বিসিএএস)’র নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান, এশিয়া ফাউন্ডেশনের আবাসিক প্রতিনিধি হাসান মজুমদার, এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহমেদ, বে ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান, রহিমআফরোজ রিনিউএ্যাবল এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনওয়ার মেজবাহ মঈন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মনোজ কুমার বিশ্বাস প্রমূখ আলোচনায় অংশ নেন।

সেমিনারে সিপিডির ড. ফাহমিদা খাতুন ‘সবুজ শিল্পনীতি: আঞ্চলিক পর্যায়ে সর্বোত্তম ব্যবহার এবং বাংলাদেশের জন্য উন্নয়ন কৌশল’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এম আবু ইউসুফ ‘তৈরি পোশাক শিল্পখাত সবুজয়ানের ওপর কেস স্টাডি: বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার জন্য বিশ্লেষণ’ বিষয়ক পৃথক দু’টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, শিল্প-কারখানার কারনে পরিবেশ যেন দূষিত না হয়, তার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ কারখানার মালিকদের নেওয়ার কথা। কিন্তু যেসব কারখানায় মালিকরা এসব সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি, সেখানে সরকার সবুজ শিল্পায়নের স্বার্থে এমন সেবা সরবরাহ করতে পারে।কিন্তু এর জন্য দরকার বাড়তি রাজস্ব আয়। কারখানার মালিক ধনী ব্যবসায়ীরা বাড়তি কর দিয়ে সরকারকে এই অতিরিক্ত অর্থের যোগান দিতে পারেন।

তিনি বলেন,আর একটি বিকল্প হতে পারে ভর্তুকি মূল্য (সাবসিডাইজড রেট) কোথাও থেকে অর্থায়ন পাওয়া। ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদহারে কোথাও থেকে ঋণ পেলে, সরকার সেই অর্থ দিয়ে ইটিপি স্থাপনসহ পরিবেশবান্ধব শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কোন কারখানার মালিক একা না করে, ৩০/৪০ জন্য মিলে একটি ইটিপি প্লান্ট স্থাপন করতে পারেন।এতে ব্যবসায়ীদের খরচ অনেক কমে আসবে।

তিনি বলেন, আমাদের জমির স্বল্পতা রয়েছে। এজন্য সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করছে। এখানে কারখানা স্থাপন করলে ইটিপিসহ সবুজ শিল্পায়নের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে মুহিত বলেন, বাংলাদেশে যে হারে দারিদ্র্য হ্রাস পাচ্ছে, তাতে ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা দারিদ্রমুক্ত হবো। তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই মোট জনসংখ্যার অন্তত ১০ শতাংশ তাদের জীবন ব্যয়ের জন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। ২০২৪ সাল নাগাদ আমাদের দারিদ্র্যের সংখ্যা ১০/১২ শতাংশে নেমে আসবে। সেই হিসেবে ওইবছর আমরা দারিদ্রমুক্ত জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবো।

অনুষ্ঠানে শিল্পসচিব মোশাররাফ হোসেন ভূইয়া বলেন, সম্প্রতি মন্ত্রীপরিষদ সভায় যে শিল্পনীতি পাস হয়েছে, তাতে টেকসই উন্নয়নের জন্য সবুজ শিল্পায়ন অগ্রাধিকার পাবে।সরকার সবুজ শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠায় নানা ধরনের ইনসেনটিভ সহায়তা দেবে। তিনি জানান, সবুজ শিল্পায়নের স্বার্থে সাভারে চামড়া কারখানা স্থানান্তর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, সবুজ কারখানা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশে ব্যাংকের তহবিল থেকে ৯ শতাংশ সুদহারে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু সবুজ কারখানা তৈরিতে ব্যয় বেশি, তাই এই ঋণের সুদহার কমাতে হবে।