Logo

পোশাক শ্রমিকের নিরাপত্তায় কল্যাণ তহবিল গঠন

Fazlul Haque
বুধবার, এপ্রিল ৬, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

এম সায়েম টিপু, ঢাকা : তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য সম্প্রতি সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে একটি শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করেছে। এই তহবিল গঠনের ফলে দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের আপত্কালীন সময়ে নিরাপত্তার বিষয়টি আরো একধাপ এগোলো বলে মনে করেন এ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা জানান, এই তহবিল এমনভাবে গঠন করা হয়েছে, যার ফলে শ্রমিকরা যেমন আপত্কালীন সময়ে সুবিধা পাবে, অন্যদিকে কারখানার দুর্ঘটনার কারণে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে মালিক অসমর্থ হলে এই তহবিল থেকে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা যাবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কোনো কারখানার মালিক কোনো দুর্ঘটনার কারণে শ্রমিকদের ন্যায্য পরিশোধে তাত্ক্ষণিকভাবে অসমর্থ হলেও ওই তহবিল থেকে অর্থ ব্যবহারে এমন সুবিধা রাখা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত নেবে তহবিল পরিচালনা বোর্ড।

সম্প্রতি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড’ গঠন করে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য সরকার গত বছর বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং শ্রম আইন বিধিমালা, ২০১৫-এর আলোকে এই তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৭ মার্চ শ্রম ও আইন শাখা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করা হয়।

বিজিএমইএ সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু জানান, শ্রমিকদের ইনস্যুরেন্স ও চাকরির নিশ্চয়তার পাশাপাশি শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে শিল্পের মোট রপ্তানির ০.০৩ শতাংশ জমার বিধান রাখা হয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে লাভবান হবে শ্রমিকরা। এক বছরের হিসাবে এ ফান্ডে জমবে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। এ টাকা শুধু শ্রমিকদের কল্যাণেই ব্যয় করা হবে। এ ছাড়া শ্রমিকদের জন্য যে দুই লাখ টাকার ইনস্যুরেন্স করা হয়েছে, তা পেতে অনেক সময় লাগবে। কেউ যদি দুর্ঘটনায় মারা যায় তাহলে শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড থেকে তা শ্রমিকদের স্বজনদের দেওয়া হবে। প্রতিবছর ফান্ডের এ টাকা বাড়তেই থাকবে।

জানা যায়, এই তহবিলের অর্থ থেকে শ্রমিকরা দুটি ভাগে এই সুবিধা পাবে। একটি থাকবে সুবিধাভোগীদের আপত্কালীন সুবিধা। হঠাৎ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই ফান্ড থেকে টাকা দেওয়া হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে কল্যাণ ফান্ড। অসুস্থতাজনিত কারণে কোনো শ্রমিক মারা গেলে এই ফান্ড থেকে টাকা দেওয়া হবে। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেলে শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা পাবে তিন লাখ টাকা। কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে দেওয়া হবে দুই লাখ টাকা এবং গুরুতর অসুস্থ শ্রমিককে দেওয়া হবে এক লাখ টাকা। এ ছাড়া শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের অর্থ দিয়ে শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য সামাজিক কাজেও ব্যয় করা হবে।

গত ২৭ মার্চ শ্রম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন পাঠানো হয় বিজিএমইএতে। এতে ‘শতভাগ রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট শিল্প খাতের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিলের পরিচালনা ১০ সদস্যের চূড়ান্ত কমিটি নাম উল্লেখ করা হয়।

শ্রম মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএ সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় তহবিল পরিচালনা বোর্ড হবে ১০ সদস্যের। এতে পদাধিকার বলে সভাপতি থাকবেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। পদাধিকার বলে সহসভাপতি থাকবেন দুজন। এর একজন হলেন শ্রমসচিব মিকাইল শিপার, অন্যজন বিজিএমইএ সভাপতি মো, সিদ্দিকুর রহমান। আর বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান থাকছেন সদস্য হিসেবে। এ ছাড়া বিজিএমইএর তরফ থেকে আরো দুজনকে সাধারণ সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ নাসির ও সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান এবং শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে থাকবেন অন্য তিন সদস্য। তাঁরা হলেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আখতার, গার্মেন্টস শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুদ্দোজা নিজাম আর ঊর্ধ্বতন আরেক সরকারি কর্মকর্তা থাকবেন পরিচালনা বোর্ডের সদস্যসচিব। বোর্ড গঠনের দিন থেকে পরবর্তী তিন বছর থাকবে এর মেয়াদ।

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আখতার বলেন, ‘শ্রমিকদের দুর্যোগের সময় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া যাবে। যদিও আমি জানি না এখনো এই কমিটির সদস্য কি না; তবে দায়িত্ব পেলে সততার সঙ্গে এই কমিটির পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করব।’