নিজস্ব প্রতিবেদক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানী প্রতিযোগি দেশ চীন, ভারত ও ভিয়েতনামের উচ্চ রপ্তানীর চাইতে নিচে নেমে গেছে।
ইউএস বানিজ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের একমাত্র সর্ববৃহৎ পোশাক রপ্তানী ক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্রে ৪.২২% কমে ৪.৫৪ বিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিন কোরিয়া ও চীনও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পতনের শিকার হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব বাজারে পোশাক রপ্তানীর শীর্ষে থাকা চীন ৩২.৮৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার সমমূল্যের পোশাক রপ্তানী করে যা বাৎসরিক তুলনায় ০.৫৮ % কম।
ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানী ২.৮৫% কমে গিয়ে ৪.০৯ বিলিয়নে ও দক্ষিন কোরিয়ার ৩.৭১% কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ মিলিয়ন ইউএস ডলারে।
অপরদিকে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রে ৬.৩৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার সমমূল্যের পোষাক রপ্তানী করে যা বার্ষিক ৩.৪৪% বেশি। ভিয়েতনামের রপ্তানী ৭.০৭% বৃদ্ধি পেয়ে ১০.৩৬ বিলিয়নে, পাকিস্তানের ১.৭৪% বৃদ্ধি পেয়ে ২.৩১ বিলিয়নে, এবং মেক্সিকোর রপ্তানী ৭.৬৪% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৯৯ বিলিয়ন ইউএস ডলারে।
তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সর্বমোট রপ্তানীর হারও কমে গেছে এবং তা ৪.০৯% কমে ৪.৮৭ বিলিয়নে নেমে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানী বৃদ্ধির দিক থেকে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান ও মেক্সিকোর পরে অর্থাৎ ৬ নম্বরে যদিও ২০১৬ সালে এই অবস্থান ছিল ৩ থেকে ৪ নম্বরে।
তবে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের মূল যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়ছে। তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১.৩১ বিলিয়ন ইউএস ডলার সমমূল্যের মালামাল আমদানি করেছে। অপরদিকে, ২০১৬ সালে সম্পূর্ণ বছরে যার পরিমান ছিল ৯০৫.৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পোশাক রপ্তানীর এই পতনের জন্য অবকাঠামো গত দিককে দোষারোপ করছে যা যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইলারের কাছে মালপত্রের তড়িৎ সরবরাহকে ব্যাহত করে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানীকারক সংস্থার (বিজিএমইএ) সভাপতি জনাব সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভারত তাদের পোশাক খাতে ষ্টিমুলাস প্যাকেজ চালু করে পোষাকের দাম কমিয়ে বাংলাদেশের সমপর্যায়ে নিয়ে এসেছে যদিও তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের চাইতে ভারতে শ্রমিক খরচ বেশি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পোশাকের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড গ্যাপ ও ওয়ালমার্ট তাদের কিছু অর্ডার ভারতে শিফট করেছে শুধুমাত্র লিড টাইমের জন্য। এটাও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পোশাকের রপ্তানী পতনের অন্যতম একটা কারণ।
তবে, কি পরিমান অর্ডার তারা ভারতে শিফট করেছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারকদের ভারত থেকে বিশাল পরিমাণ ফেব্রিক আমদানি করতে হয় এবং বেনাপোল স্থল বন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে মালামাল রিলিজের সময় বিভিন্ন ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় এবং এতে অনেক সময় ক্ষতি হয়ে যায়। এর ফলে স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারকগণ তাদের লীড টাইম মেইনটেইন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এজন্য তাদের বহু রিটেইলার ও ব্র্যান্ডের অর্ডার হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই, আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো ব্যবসা করতে হলে আমাদের অবশ্যই বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
মতামত লিখুন :