Logo

৮৩ লাখ অর্থনৈতিক ইউনিটের পরিদর্শক মাত্র ৩২২ জন

RMG Times
মঙ্গলবার, মে ২, ২০১৭
  • শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের ৮৩ লাখ অর্থনৈতিক ইউনিটের বিপরীতে পরিদর্শক আছে মাত্র ৩২২ জন। এছাড়া কলকারখানা অধিদফতরের খালি পদ মিলে এ খাতে রয়েছে ৪৭৫ জন পরিদর্শক। সে হিসেবে একজন পরিদর্শকের ভাগে পড়ে ২৫ হাজার ৭৭৬টি অর্থনৈতিক ইউনিট। এজন্য একজন পরিদর্শককে প্রতিদিন পরিদর্শনে যেতে হবে কমপক্ষে ১০০টি ইউনিট। যা আদৌও সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এই চিত্র বলছে সরকার শ্রমিক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। শুধুমাত্র পোশাক খাতেই ক্রেতা, মালিক ও সরকার পক্ষের সমন্বয়ে কারখানা পরিদর্শন কিছুটা হচ্ছে। তাও পর্যাপ্ত নয়। অথচ রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সব ধরনের কারখানাতেই নিরাপত্তা ইস্যুতে উদ্বিগ্ন ছিল সবাই।

বিষয়টি নিয়ে খোদ অর্থ প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশের ৮৩ লাখ অর্থনৈতিক ইউনিট রয়েছে। এসব ইউনিটে পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজন ২০ হাজার শ্রম পরিদর্শক। কিন্তু কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরে শ্রম পরিদর্শক আছেন ৪৭৫ জন। এর মধ্যে দেশের কল-কারখানার জন্য রয়েছে ৩২২ জন পরিদর্শক। আরও ১৬০টি পদ খালি আছে। আমরা রিকুইজিশন দিয়েছি। মোট ৪৭৫ জন পরিদর্শক দিয়ে সারা বাংলাদেশে পরিদর্শন সম্ভব নয়। সংবাদপত্রসহ সব জায়গায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের বিষয় আছে। কিন্তু আমরা সব সময় ফ্যাক্টরির দিকে তাকাই। এর বাইরে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক রয়েছে। সেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। এজন্য সচেতনতা বাড়ানোর কথাও বলছেন তিনি। তিনি বলেন, কেবল মানুষকে সচেতন করে এই মুহূর্তে শ্রমিকদের নিরাপদ করা সম্ভব। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আইনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সচেতনতার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে।

বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে দেশের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পে গত ১২ বছরে ১৩ হাজার ২১১ শ্রমিক নিহত হয়েছে। একই সময়ে আহত হয়েছেন আরও ১৮ হাজার ৯০ জন শ্রমিক। ওশি ফাউন্ডেশন, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, বছরের প্রথম ৩ মাসে পেশাগত দুর্ঘটনায় ২৯৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১০১ জন। নিহতদের মধ্যে ৬৮ জন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ২২৬ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ছিলেন। আর আহতদের মধ্যে ৪৫ জন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ৫৬ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করতেন। সম্প্রতি এসব গবেষণাপত্র প্রকাশ করে এসব প্রতিষ্ঠান।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর হিসাবে কর্মক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্ঘটনা ও পেশাগত রোগে প্রতি বছর বিশ্বে ২৩ লাখ শ্রমিক মারা যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন মারা যায় গড়ে ৬ হাজার ৩০০ শ্রমিক। এসব দুর্ঘটনায় বৈশ্বিক জিডিপির ৪ শতাংশ অপচয় হয়। তবে বাংলাদেশে পেশাগত দুর্ঘটনায় জিডিপির কত শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে- সে বিষয়ে সুস্পষ্ট পরিসংখ্যান নেই।

জানা গেছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের জোট এলায়েন্স বেশ কিছু নিরাপত্তা শর্ত দেয় দেশের কারখানাগুলোকে। এসব শর্তের মধ্যে ছিল অগি্ননিরাপত্তা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ফায়ার ডোর, হোসপাইপ, জুকিপাম্প, অটোস্প্রিঙ্কলার, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক্যাল ড্রইং, ফায়ার ড্রইং ও সিঙ্গেল লাইন ডায়াগ্রাম এবং ভবন নিরাপত্তার মধ্যে বিল্ডিংয়ের অনুমোদন, অবকাঠামোগত নকশা, মাটি পরীক্ষা, ফ্লোরের ধারণক্ষমতা দেখা হয়ে থাকে। এছাড়া ফ্লোরের ধারণক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে সর্বোচ্চ ৪০ পাউন্ড হতে হবে। এসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি দেশের অনেক কারখানাই। চার বছরে জোট দুটি দেশের ২০০টি কারখানা চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া সবমিলিয়ে বিগত পাঁচ বছরে প্রায় ২ হাজার পোশাক কারখানা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। সূত্র মতে, বিজিএমইএর নিবন্ধিত তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা ৬ হাজার ১৯৬টি। এর মধ্যে নানা কারণে বিজিএমইএ নিবন্ধন বাতিল করার জন্য ১ হাজার ৭৬৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানা বাদ দিলে নিবন্ধিত কারখানার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৩১টি। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনে চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়েছে ২০০টি। সর্বোপরি বর্তমানে সক্রিয় কারখানার সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০টি। সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রামে ২০১৩ সালে ১৪১টি, ২০১৪ সালে ২১২টি, ২০১৫ সালে ১৩৭টি, ২০১৬ সালে ১৩৫টি এবং ২০১৭ সালের চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৫৩টি কারখানার সদস্যপদ বাতিল করে বিজিএমইএ।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ চিত্র শুধু পোশাক খাতের। ঠিকমতো পরিদর্শন করলে অনেক কারখানাই কমপ্লায়েন্স বা নিরাপত্তার ইস্যুতে অযোগ্য হয়ে পড়বে। কিন্তু আমাদের দেশে ঠিকমতো পরিদর্শন হয় না বলেই যেমন তেমন করে চলছে কারখানা। এতে দুর্ঘটনাও বাড়াছে। তাই এ খাতটিকে দ্রুতই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।