ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে অগ্নি এবং ভবন নিরাপত্তায় ইউরোপীয় ক্রেতা জোট প্রতিষ্ঠানকে ডাচ কোর্ট চেনালো পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান হেচং গ্রুপ। অ্যাকর্ড কর্তৃক টার্মিনেটেড হেচং গ্রুপ ব্যবসায়িক সম্পর্ক ফিরে পেতে সম্ভাব্য সকল পন্থা অবলম্বন শেষে বাংলাদেশী একটি আইনি পরামর্শদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডের কোর্টের দারস্থ হলে টনক নড়েছে অ্যাকর্ডের। গত ১৯ ডিসেম্বর হেচং গ্রুপের সাথে মিমাংসার মাধ্যমে শর্ত সাপেক্ষে ব্যবসায়িক সম্পর্ক পূণর্বহাল করে অ্যাকর্ড।
গত ৯ নভেম্বর ৯৩ শতাংশ সংশোধনী কর্ম পরিকল্পনা সম্পাদনের পরেও হেচং গ্রুপের সকল কারখানার সাথে অ্যাকর্ডের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করে অ্যাকর্ড। ২৯ নভেম্বর’ ২০১৬ তারিখে অ্যাকর্ডের ওয়েব সাইটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হেচং এর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা প্রকাশ করে অ্যাকর্ড।কিন্তু গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে অ্যাকর্ডের ওয়েব সাইট থেকে টার্মিনেটেড কারখানার তালিকা থেকে উধাও হয়ে যায় হেচং গ্রুপের কারখানার নাম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হেচং গ্রুপের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক পুণর্বহাল করেছে অ্যাকর্ড।
আরএমজি টাইমসের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে হেচং গ্রুপে অ্যাকর্ডের পরিদর্শন শুরু হয়। অ্যাকর্ডের সংশোধনী কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী ইলেক্ট্রিক্যাল/ফায়ার/স্ট্রাকচারাল মিলিয়ে ৯৩% কাজ সম্পন্ন করার পরও একটি রিপোর্ট নিয়ে ঝামেলার দরুণ হেচং গ্রুপের সকল কারখানাকে টার্মিনেট করে অ্যাকর্ড। সাড়ে সাত হাজার শ্রমিকের অন্ন সংস্থানের উৎস হেচং গ্রুপের সকল প্রতিষ্ঠান টার্মিনেট হওয়ার ঘটনায় হতবাক হয়ে যায় মালিকপক্ষ। নিশ্চিত বেকারত্ব বরণের সম্ভাবনায় হতাশ হয়ে পড়ে কারখানার সকল শ্রমিক। অ্যাকর্ডের এমন সিদ্ধান্তকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি মালিক পক্ষ।এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে পোশাক সংশ্লিষ্ট পেশাজীবিদের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অ্যাকর্ডের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
হেচং গ্রুপের মালিক পক্ষ অ্যাকর্ডের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেও কোনো সমাধান পায়নি। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বরাবর পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করে দেশের সাড়ে সাত হাজার শ্রমিক ও জাতীয় ক্ষতির কথা বিবেচনা করে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনাসহ সম্ভাব্য সকল উপায়ে চেষ্টা অব্যাহত রাখে হেচং কর্তৃপক্ষ। শেষে বাংলাদেশী আইনী পরামর্শদানকারী প্রতিষ্ঠান “Attoneys” এর মাধ্যমে নেদারল্যান্ডের কোর্টের দারস্থ হয়। আর তখুনি টনক নড়ে অ্যাকর্ডের। কোর্টের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই হেচং এর সাথে মিমাংসা করে অ্যাকর্ড। শর্তসাপেক্ষে ২৮ ফেব্রুয়ারী’২০১৭ এর মধ্যে সংশোধনী পরিকল্পনা কাজ সম্পন্ন করার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়।
হেচং এর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক পুনর্বহাল করার ব্যাপারে অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি। ই-মেইল করেও মিলেনি কোনো উত্তর।
আইনী পরামর্শদানকারী প্রতিষ্ঠান “Attoneys” এর কর্ণধার এডভোকেট জাফরুল হাসান শরিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি আদালত সংশ্লিষ্ট হওয়ায় তিনি এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
হেচং এর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
হেচং এর কর্ণধার মিঃ ইউন হী আরএমজি টাইমসকে জানান, অ্যাকর্ড কর্তৃক দেয়া সময়ের মধ্যে তারা শতভাগ কাজ শেষ করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তারা শ্রমিকদের সকল অধিকারের প্রতি যেমন যত্নবান তেমনি নিরাপত্তার বিষয়েও যথেষ্ট সচেতন।
অ্যাকর্ডের সাথে হেচং এর ব্যবসায়িক সম্পর্ক পুনর্বহালের প্রক্রিয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুুবুকের বিভিন্ন গ্রুপে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে তুমুল বেগে। অনেকেই মনে করছেন, অ্যাকর্ড একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অপুরণীয় ক্ষতি করে যাচ্ছে। এর প্রতিবাদ করা উচিত। হেচং গ্রুপের মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও সচেতন হয়ে সাহসী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য যে, রানা প্লাজা ভবন ধ্বসের ঘটনার পরবর্তীতে বাংলাদেশে অগ্নি এবং ভবন নিরাপত্তায় একর্ড (একর্ড) ১৫ মে ২০১৩ তারিখে স্বাক্ষরিত হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এবং রিটেলার ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মধ্যে এটি একটি পাঁচ বছরের স্বতন্ত্র, আইনত বাধ্যতামুলক চুক্তি, নিরাপদ এবং সুস্থ বাংলাদেশী তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) গড়ে তোলার জন্য ২০১৩-র জুন মাসে একটি কার্যকরী পরিকল্পনার বিষয়ে সম্মতি পাওয়া যায়, এর ফলে অক্টোবর ২০১৩ সালে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ একর্ড ফাউন্ডেশন গঠিত হয়।
মতামত লিখুন :