ডেস্ক রিপোর্ট : অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স পরবর্তী শিল্প ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় মালিকরা অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স পরবর্তী শিল্প ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় মালিকরা। রানা প্লাজা ধসের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে শুরু হয় পোশাক শিল্প মূল্যায়ন কার্যক্রম। শুরুতেই ঘোষণা ছিল পাঁচ বছর মেয়াদি এ কার্যক্রম শেষ হবে ২০১৮ সালের জুনে। সে অনুযায়ী মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষ হতে বাকি আছে আরো ১৮ মাস। গত আড়াই বছরে সংখ্যায় কম হলেও নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে কারখানাগুলো। কিন্তু অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স পরবর্তী শিল্প ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে শিল্প মালিকদের মধ্যে।
জানা গেছে, পোশাক শিল্পোদ্যোক্তাদের অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স পরবর্তী দুশ্চিন্তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স পরবর্তী পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ তদারকি কার্যক্রম কীভাবে এগিয়ে যাবে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন সংগঠনের নেতারা। এখনই সে সময়ের জন্য প্রস্তুতি শুরু না করলে শিল্পের ক্রয়াদেশ প্রাপ্তি নিয়ে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
সূত্র জানিয়েছে, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স পরবর্তী তদারকি ব্যবস্থা সরকারি-বেসরকারি বা যেকোনো মঞ্চেই হতে পারে। তবে সার্বিকভাবে সে কর্তৃত্ব পালনকারীদের নিজস্ব সক্ষমতা যেমন থাকতে হবে, তেমনি তাদের থাকতে হবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আর এখনই সে বিষয়ে কাজ শুরু না করলে শিল্প সম্প্রসারণ প্রক্রিয়াটিতে বিঘ্ন ঘটবে। এরই মধ্যে এ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন শিল্প মালিক ও নেতারা।
বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বণিক বার্তাকে বলেন, পোস্ট অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় স্থানীয়ভাবে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি প্লাটফর্মের মাধ্যমে স্বীকৃতি কীভাবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি আমরা। আমাদের পরবর্তী বোর্ডসভায়ও বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা মালিক-শ্রমিক থেকে শুরু করে সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ তথা সুশীল সমাজের মতামত নেব। শিল্পের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য এটি জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, শিল্প প্রতি মুহূর্তে সম্প্রসারণের সম্ভাবনা থাকে। আর সম্প্রসারণ করতে গেলে তা নিরাপদ হিসেবে কে স্বীকৃতি দেবে? সেই স্বীকৃতি কি আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে? যারা স্বীকৃতি দেবে, তাদের সামর্থ্য কেমন হওয়া প্রয়োজন? সামর্থ্য ঘাটতি থাকলে তা কীভাবে সমাধান করা যাবে— এসব কিছু নিয়েই আমরা প্রস্তুত হওয়ার বিষয়ে ভাবছি।
জানা গেছে, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের আওতায় থাকা কারখানার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। এ কারখানাগুলোর মধ্যে এরই মধ্যে নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ৬৫টি। বাকি সব কারখানায় সংশোধনমূলক কর্মপরিকল্পনা (সিএপি) বাস্তবায়ন চলছে। এতে ব্যর্থ হলে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্নের ঘটনাও ঘটছে। ক্রেতাজোটগুলো ছাড়াও মূল্যায়নের আওতায় আছে প্রায় দেড় হাজার কারখানা। এগুলোর মূল্যায়ন চলছে আইএলওর সহযোগিতায় শ্রম মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে জাতীয় উদ্যোগে।
আরো জানা গেছে, জাতীয় উদ্যোগে পরিচালিত মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে, যাতে সহযোগিতা করছে আইএলও। ‘ইম্প্রুভিং ওয়ার্কিং কন্ডিশন ইন আরএমজি সেক্টর’ শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। সম্প্রতি এ উদ্যোগ এগিয়ে নিতে ‘রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল-আরসিসি’ গঠন হয়েছে। এ সেলের মাধ্যমে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা চলছে।
তবে এর কার্যক্রমের সক্ষমতা ও দূরদর্শিতা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে আছেন সংশ্লিষ্টরা। রেমিডিয়েশন সেল গঠন প্রক্রিয়া, প্রকল্প মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির অনুমোদন চেয়ে এরই মধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে আইএলও। গত বছরের ৯ নভেম্বর জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কমিটির সভায় পোশাক কারখানার ত্রুটি সংস্কারে একটি বিশেষায়িত রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি) গঠন পরিকল্পনা অনুমোদন দেয়া হয়।
রেমিডিয়েশন সেলের নেতৃত্বে থাকবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। পাশাপাশি এ সেলে থাকবে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা। এ সেলের আওতায় পরিচালিত হবে বেসরকারি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। আর সেলটি জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কমিটির সঙ্গেও যুক্ত থাকবে কারখানার কমপ্লায়েন্স কার্যক্রম উন্নয়নে। এ সেলে ৭০ জন কর্মকর্তা কাজ করবেন। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর যাতে সেলটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, সেজন্য বিশেষ করে অ্যাকর্ডের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে।
ডিআইএফইর মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, আরসিসির কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে। আর তার ব্যাপ্তি কেমন হবে, তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করার সময় আসেনি।
সূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা
মতামত লিখুন :