ডেস্ক রিপোর্ট : পোশাক খাত মূল্যায়নকারী উত্তর আমেরিকার ক্রেতাজোট অ্যালায়েন্সের তালিকায় আছে সাড়ে সাতশর বেশি কারখানা। এসব কারখানায় শনাক্ত হয়েছে অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও স্থাপত্যজনিত বিভিন্ন ত্রুটি। এর মধ্যে গুরুতর ত্রুটিগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামতের কথা কারখানা মালিকদের। যদিও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ৪৫ শতাংশ ত্রুটি এখনো মেরামত হয়নি। ২০১৮ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এসব ত্রুটি সংস্কার না হলে সংশ্লিষ্ট কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করবে অ্যালায়েন্স।
গত বুধবার ‘প্রটেকটিং অ্যান্ড এম্পাওয়ারিং বাংলাদেশ গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স: সেপ্টেম্বর ২০১৬’ শীর্ষক তৃতীয় বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি। প্রতিবেদনে উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ৫৫ শতাংশ ত্রুটি সংস্কার সম্পন্নের তথ্য জানিয়েছে অ্যালায়েন্স।
বাকি ৪৫ শতাংশ ত্রুটি সংস্কার সম্পন্নের জন্য ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে অ্যালায়েন্স। ঘোষিত সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ না হলে অ্যালায়েন্সে স্বাক্ষরকারী ২৬টির বেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
অ্যালায়েন্সের প্রতিবেদন বলছে, অ্যালায়েন্সের প্রাথমিক পরিদর্শনে সংশোধনযোগ্য বৈদ্যুতিক ত্রুটি রয়েছে ১৬ হাজার ৮২৪টি। সংশোধনযোগ্য অগ্নিনিরাপত্তাজনিত ত্রুটি রয়েছে ১৪ হাজার ৩০২টি।
বুধবার প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে অ্যালায়েন্স জানায়, বর্তমানে জোটের তালিকাভুক্ত কারখানার সংখ্যা ৭৬৫। এর মধ্যে সক্রিয় কারখানা রয়েছে ৬৮৫টি। ৪০টি কারখানা তাদের সংশোধনী কর্মপরিকল্পনার (সিএপি) কাজ সম্পন্ন করেছে। সংস্কারকাজে পর্যাপ্ত অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় ৯৭টি কারখানাকে অ্যালায়েন্স কমপ্লায়েন্ট কারখানার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।
অ্যালায়েন্সের স্বতন্ত্র সভাপতি অ্যালেন টশার বলেন, ২০১৮ সালের জুলাইয়ের মধ্যে সব কারখানাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ত্রুটি সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে সংশ্লিষ্ট কারখানাকে অ্যালায়েন্সের পণ্য সরবরাহকারী তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে।
অ্যালেন টশারের হুঁশিয়ারির বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের হাতে এখনো ২১ মাস সময় আছে। আশা করি, এই সময়ের সব ধরনের সংস্কারকাজ শেষ হয়ে যাবে। আসলে যারা ব্যবসায় আছে, তাদের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সব কাজ সম্পন্ন করে ফেলতে হবে।’
অ্যালায়েন্সের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোটের সদস্য পোশাক কারখানাগুলোর ৬৩ শতাংশ ত্রুটি সংশোধন শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫৫ শতাংশ অগ্রাধিকারমূলক সংস্কারকাজ। এদিকে ৪০টি পোশাক কারখানা সব ধরনের ত্রুটি সংশোধন বা সংশোধনী কর্মপরিকল্পনা (ক্যাপ) সম্পন্ন করেছে। সংশোধনকাজে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় ৯৭ পোশাক কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে অ্যালায়েন্স। এতে করে কারখানাগুলো অ্যালায়েন্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাজ পাবে না।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে গঠিত হয় অ্যালায়েন্স। এই জোটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছে ওয়ালমার্ট, গ্যাপ, জেসি পেনি, টার্গেটসহ ২৯ ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। তাদের সদস্য কারখানার সংখ্যা ৭৬৫। তবে বর্তমানে চালু কারখানার সংখ্যা ৬৮৫। এসব পোশাক কারখানায় কাজ করেন ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬১২ শ্রমিক। নতুন করে তালিকাভুক্ত ছয়টি কারখানার পরিদর্শনকাজ চলছে।
অ্যালায়েন্সের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদস্য কারখানাগুলোর ১৬ হাজার ৮২৪টি বৈদ্যুতিক ত্রুটির মধ্যে ১১ হাজার ৫৬৯টির সংশোধনকাজ শেষ। ৪ হাজার ৭৬৬টি বৈদ্যুতিক ত্রুটির সংশোধন চলছে। অগ্নিসংক্রান্ত ১৪ হাজার ১২২টি ত্রুটির মধ্যে সংশোধনকাজ শেষ হয়েছে ৮ হাজার ৮৫১টির। কাজ চলছে ৪ হাজার ৫৭০টি অগ্নিসংক্রান্ত ত্রুটির। এ ছাড়া ভবনের কাঠামোগত ৬ হাজার ৭০৭টি ত্রুটির মধ্যে সংশোধন হয়েছে ৩ হাজার ৩৩৪টি ত্রুটি।
কারখানাগুলোর বৈদ্যুতিক, অগ্নি ও ভবনের কাঠামোগত যেসব ত্রুটি দ্রুত সংশোধনে সর্বোচ্চ তাগিদ ছিল, সেসবের মধ্যে ৫৫ শতাংশ ত্রুটি সংশোধিত হয়েছে। এ ধরনের ৪১ শতাংশ ত্রুটির সংশোধনকাজ চলছে। তবে ৪ শতাংশ ত্রুটির সংশোধনকাজ এখনো শুরুই হয়নি। সব মিলিয়ে সংস্কারকাজের অগ্রগতির বিষয়ে ৪৩ শতাংশ কারখানা সঠিক পথেই আছে। ৩০ শতাংশ কারখানার সংস্কারকাজ যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে হস্তক্ষেপ দরকার।
বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘অ্যালায়েন্স বলেছে, ৬৩ শতাংশ ত্রুটি সংস্কার শেষ। তবে আমি মনে করি, ৬৩ শতাংশের অনেক বেশি কাজ হয়েছে। হয়তো লোকবলের অভাবে সর্বশেষ ফলোআপ পরিদর্শনের তথ্য পরিসংখ্যান প্রতিবেদনটিতে তারা যুক্ত করতে পারেনি।’
অ্যালায়েন্স বলছে, কারখানায় ওয়ার্কার্স সেফটি কমিটি প্রতিষ্ঠা কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। যেখানে একদল শ্রমিককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং তারা কর্মক্ষেত্রের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সমস্যা তদারকির দায়িত্ব পেয়েছে। এপ্রিল থেকে কমিটির সংখ্যা তিন গুণ বৃদ্ধি করে ৫৪টিতে উন্নীত করা হয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত অ্যালায়েন্সের সদস্যভুক্ত অধিকাংশ কারখানায় এ কমিটি কার্যকর থাকবে।
অ্যালায়েন্সের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ১২ লাখের বেশি শ্রমিককে প্রাথমিক অগ্নিনিরাপত্তা-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পুনঃপ্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে প্রায় আট লাখ শ্রমিককে। অ্যালায়েন্স হেল্পলাইন অ্যালায়েন্স কারখানা ও অ্যালায়েন্সবহির্ভূত কারখানার শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের ভালো একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। হেল্পলাইন প্রতি মাসে গড়ে ৪ হাজার ২০০টি কল গ্রহণ করছে। হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯০ হাজার কল পাওয়া গেছে।
মতামত লিখুন :