Logo

ভ্রমণ স্থগিত করেছে একাধিক ক্রেতা, পোশাক খাতে ২৫০ কোটি ডলার ক্ষতির আশঙ্কা

Fazlul Haque
রবিবার, জুলাই ১৭, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার কারণে আগামী মৌসুমে দুই থেকে আড়াইশত কোটি ডলার মূল্যের পোশাক তৈরির কাজ হারাতে পারে বাংলাদেশ। জঙ্গি হামলার কারণে নিরাপত্তা শঙ্কায় বিদেশি ক্রেতারা দেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। নির্ধারিত সময়ে পোশাক নিতে তারা অন্য কোন দেশে চলে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন পোশাক ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করে বাংলাদেশের বায়িং হাউজ পরিচালনাকারীদের সংগঠনের নেতারা। ফলে এবার দুই থেকে আড়াইশত কোটি ডলার মূল্যর পোশাকের অর্ডার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বব উইন কো নামের জাপানি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সাতজনের একটি প্রতিনিধিদল এক সপ্তাহের জন্য ২২ জুলাই বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। তবে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দলটিকে বাংলাদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেয়নি। দেশের কয়েকটি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে ক্রয়াদেশ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

একইভাবে তুরস্ক ও ফ্রান্সের তিনটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ভ্রমণ স্থগিত করেছেন। এমন তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) নেতারা বলেছেন, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক ক্রেতা সাময়িকভাবে আসতে চাইছেন না। অনেকে তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে বৈঠক করতে বলছেন। এতে করে সামনের মৌসুমের ক্রয়াদেশ প্রাপ্তিতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গতকাল শনিবার সকালে ‘সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় রপ্তানিমুখী খাতে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তার থেকে উত্তরণ’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিজিবিএর নেতারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিবিএর সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ জাবেদ মামুন, কার্যকরী কমিটির সদস্য মাহমুদুল হায়দার ও সাবেক সভাপতি কাইয়ূম রেজা চৌধুরী।

কাজী ইফতেখার হোসেন বলেন, গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় পোশাকশিল্পে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সুইডেনভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম এ দেশ থেকে তাদের ব্যবসা সংকোচনের চিন্তাভাবনা করছে। অনেক বিদেশি ক্রেতাও নতুন করে ব্যবসা সম্প্রসারণের বিষয়ে নেতিবাচক মতামত দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা পোশাক রপ্তানির ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছি।’

সারা বছরের ৬০ শতাংশ পোশাকই গ্রীষ্মকালীন ক্রয়াদেশ থেকে পাওয়া যায়। আগামী মাস থেকেই স্প্রিং ও সামার (গ্রীষ্ম) মৌসুমের পোশাকের ক্রয়াদেশ আসবে। পশ্চিমা দেশের ক্রেতারা জুলাই-আগস্টের গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে মোট পোশাক অর্ডারের ৬০ শতাংশের অর্ডার দিয়ে থাকে এসময়ে। এখন ক্রেতারা অর্ডার দিয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে চলে যাবেন। অর্ডার নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। আগস্টের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে আস্থার জায়গা তৈরি না হলে ক্রয়াদেশ কমার আশঙ্কা আছে।  ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার অন্য দেশে চলে গেলে এ খাতে দুই থেকে আড়াইশত কোটি ডলারের কাজ পাবে না বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

কাজী ইফতেখার হোসেন বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। এর মধ্যেও সেসব দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। দেশগুলোর সরকারই মূলত এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, আমাদের সরকারও বিষয়টি সামগ্রিক দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য এখন থেকেই সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করতে হবে।’

বিজিবিএর সাবেক সভাপতি কাইয়ূম রেজা চৌধুরী বলেন, ‘আমার এক বিদেশি ক্রেতার সম্প্রতি বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। তবে তিনি এখন আর আসতে চাইছেন না। বিকল্প হিসেবে তিনি ব্যাংকক, হংকং কিংবা দুবাইয়ে গিয়ে বৈঠক করতে বলছেন।’ তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির পাশাপাশি ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে অন্য দেশের ভিসা প্রাপ্তির বিষয়ে সরকার যদি সহযোগিতা করে, তবে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।

পরে সংবাদ সম্মেলন দেওয়া বিজিবিএর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে তাঁদের নির্ধারিত ভ্রমণ বাতিল করেছেন। কেউ কেউ তৃতীয় দেশে গিয়ে ব্যবসায়ীদের বৈঠক করতে বলছেন। সব মিলিয়ে বিজিবিএ যে আশঙ্কার কথা বলেছে, সেগুলোর সম্ভাবনা তো আছে। তবে সন্ত্রাসবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির উত্তরণ হলেই কোনো সমস্যা হবে না।

বিজিএমইএর আরেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গত রাতে বলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটলে কোনো সমস্যা হবে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এখানে যারা ব্যবসা করে তারা কিন্তু রাতারাতি ব্যবসা গুটিয়ে নেবে না। তবে সাময়িকভাবে কেউ কেউ ব্যবসা বাড়ানোর চিন্তা না-ও করতে পারে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ হাসান খান বলেন, তৃতীয় দেশে গিয়ে ক্রেতার সঙ্গে বৈঠক করার কিছু সমস্যা আছে। পয়সা খরচ করে যেতে হয়, তাতে উৎপাদন খরচ বাড়ে। এ ছাড়া অনেকেরই মাল্টিপল ভিসা নেই। ভিসা জটিলতার জন্য কেউ বিদেশে ক্রেতার সঙ্গে বৈঠক সময়মতো করতে না পারলে হয়তো ক্রয়াদেশই পাবেন না। আর একটা মৌসুম ক্রয়াদেশ না পেলে ওই ক্রেতাকে আবার ফিরিয়ে আনা কিছুটা মুশকিল।