ডেস্ক রিপোর্ট: শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, সরকার দেশের ৪৩টি সেক্টরের মধ্যে ৩৮টি সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করেছে।
আজ দুপুরে সচিবালয়ে মহান মে দিবস ২০১৮ উদযাপন উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এই কথা বলেন। এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই, সোনার বাংলাে গড়তে চাই।’
চুন্নু আরো বলেন, পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য গঠিত মজুরি বোর্ড আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে সুপারিশ করবে। গত ২৯ জানুয়ারি এই মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ২৬৫০জন শ্রমিককে ২২ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। বর্তমানে এই তহবিলে ২৮৩ কোটি টাকা জমা রয়েছে। দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী দেশের সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানকে নীট লংভাশের ৫ শতাংশ হারে এই তহবিলে জমা প্রদান করার জন্য তিনি আহবান জানিয়েছেন। এ তহবিল থেকে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের দুই লাখ, দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা এবং শ্রমিকের সন্তানের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষা সহায়তা প্রদান করছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার রফতানিকারক গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় তহবিলে প্রায় ৪৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জমা হয়েছে। এই তহবিল থেকে ১৩২৬ জনকে ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
তিনি শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন ,শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় শ্রমিকদের শিশুদের জন্য ৪২৪৩টি কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আইন করে । শ্রমিকের জন্য এখন পর্যন্ত যে কয়টি ভালো এবং গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকের চিকিৎসার জন্য তিনশ’ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এ হাসপাতালে একশ’ শয্যা শ্রমিকদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। নামমাত্র মূল্যে বিশেষায়িত এই হাসপাতালে শ্রমিকরা চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ৩৮টি কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে তৈরি পোশাকশিল্প এবং চিংড়িশিল্পকে শতভাগ শিশুশ্রম মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ বছরের মধ্যে আরো ১১টি সেক্টরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিশুশ্রম নিরসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্তমান সরকার দেশের ৮৩ লাখ অর্থনৈতিক ইউনিটকে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়েছে।
দেশের ২৯টি শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৫টি করে শয্যা স্থাপন করা হবে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।
বর্তমানে দেশে সাড়ে ৮ হাজার শ্রমিক ইউনিয়ন রয়েছে। ২০১৩ সালে দেশে পোশাক কারখানায় মাত্র ১২০টি ট্রেড ইউনিয়ন ছিল। বর্তমানে সেখানে ৭ শতাধিক ট্রেড ইউনিয়ন কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সকাল ৭ টায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। র্যালিটি দৈনিক বাংলা থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হবে।
মতামত লিখুন :