Logo

ভারতের পোশাক কারখানায় আধুনিক দাসত্বের শিকার হচ্ছে নারী অভিবাসী শ্রমিকরা

RMG Times
শনিবার, জানুয়ারি ২৭, ২০১৮
  • শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারতের এমনসব তৈরী পোশাক কারখানায় নারী অভিবাসী শ্রমিকরা আধুনিক দাসত্বের শিকার হচ্ছে যেখানে প্রস্তুত হচ্ছে বেনেটন, সিএন্ডএ, গ্যাপ, এইচএন্ডএম, লিভাইস, এমএন্ডএস, পিভিএইচসহ আন্তর্জাতিক শীর্ষ ব্র্যান্ডের পোশাক।

ভারতের সর্ববৃহৎ পোশাক উৎপাদন কেন্দ্রবিন্দু ব্যাঙ্গালোরে মানসম্মত মজুরি ও নানান সুযোগ সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন পোশাক কারখানা অভিবাসী নারী শ্রমিক নিয়োগ দিলেও বাস্তবে এসব নারী শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুযোগসুবিধার বদলে এসব শ্রমিকদের অত্যাধিক চাপে রেখে জোর করে অধিক সময় কাজ করানো হয়, কম মজুরী প্রদান করা হয়। এসব নারী শ্রমিকদের জীবনযাপন করতে হয় নিম্নমানের হোস্টেলে আর তাদের চলাফেরাতেও স্বাধীনতা দেয়া হয় না।

সম্প্রতি লেবার উইদাউট লিবার্টি’র “ব্যাঙ্গালোরের পোশাক শিল্পে নারী অভিবাসী শ্রমিক” শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এতে আরও বলা হয় আইএলও কতৃক নির্ধারিত ফোর্সড লেবার সংবলিত ১১ টি ইন্ডিকেটরের ৫ টিই ব্যাঙ্গালোরের এসব পোশাক কারখানায় প্রচলিত। এগুলো হল- দুর্বলতার সুযোগ নেয়া, প্রতারণা, হোস্টেলে চলাচলের বাধ্যবাধকতা, হুমকি দেয়া এবং কর্ম উপযোগী পরিবেশ ও বাসস্থান নিশ্চিত না করা। কিছু দেশি শ্রমিকরাও এসব সমস্যার সম্মুখীন হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অভিবাসী শ্রমিকরা।

ব্যাঙ্গালোরের তিনটি বৃহৎ ও স্বনামধন্য পোশাক প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে জরিপ চালিয়ে দেখা যায় সেগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৪০০০ শ্রমিক কাজ করে। রপ্তানী খাতের তথ্য অনুযায়ী অ্যাবারক্রম্বি এন্ড ফিচ, বেনেটন, সিএন্ডএ, ক্যালভিন ক্লেইন এন্ড টমি হিলফিগার, কলম্বিয়া স্পোর্টসওয়ার, ডিকেথলন, গ্যাপ, এইচএন্ডএম, লেভিস্ট্রাউস এবং মার্কস এন্ড স্পেনসার এর মত বিখ্যাতসব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোই এসব কারখানায় তাদের পণ্য উৎপাদন করছে। এসব অধিকাংশ ব্র্যান্ডেরই নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী তাদের সরবরাহকারী কোম্পানীগুলোতে ফোর্সড লেবার, শিশু শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রম অধিকারের অবমাননা থাকতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে সেসব পোশাক কারখানায় এসকল হয়রানী ও বৈষম্যতা চলছে লোকচক্ষুর অন্তরালে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাঙ্গালোরের কারখানাগুলোর কাছে অভিবাসী শ্রমিকদের আলাদা কোন তালিকা নেই, তবে ট্রেড ইউনিয়নের তথ্য মতে সেখানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা এখানের পোশাক কারখানাগুলোতে সর্বমোট ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ নারী অভিবাসী শ্রমিক কাজ করে। তাদেরকে নিয়োগ দেয়ার পূর্বে ঝাড়খন্ড বা উরিষ্যার বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্রে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদেরকে কারখানায় নেয়ার পূর্বে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় মজুরি হবে ৭০০০ টাকা থেকে ১১০০০ টাকা পর্যন্ত এবং থাকার ও খাবার সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। কিন্তু কারখানায় যোগদানের পর চিত্র পাল্টে যায়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেয়া হয় না মজুরী। এমনকি থাকার এবং খাওয়ার খরচও তাদের নিজেদেরই বহন করতে হয়। তাছাড়া,তাদেরকে হোস্টেলের কক্ষে আবদ্ধ করে রাখা হয়। সপ্তাহের কোন কর্মদিবসেই তাদেরকে বাইরে বের হতে দেয়া হয় না। শুধুমাত্র রবিবার ২ থেকে ৩ ঘন্টার জন্য বাইরে যেতে দেয়া হয়।

এছাড়াও, পরিবারের অভাব ও চাহিদা দূর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাড়ি জমানো সেখানে এমনও নারী শ্রমিক রয়েছে যারা নিজেদের বয়স ১৮’র বেশি বলে দাবি করে কিন্তু তাদের প্রকৃত বয়স ১৫ বা ১৬’র মত মনে হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিকরা জানান, ব্যাঙ্গালোরে কারখানাগুলোতে সুপারভাইজাররা স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায় নারী শ্রমিকদের দ্রুত কাজ করার জন্য ধমক দেয়, অধিক কাজ চাপিয়ে দিয়ে মানসিকভাবে কষ্ট দেয় ও অকথ্য গালিগালাজও করে। সুপারভাইজারদের এমন দুর্ব্যবহারে এসব শ্রমিকরা নিরবেই ফেলেন চোখের জল। কিন্তু মুক্তি মেলে না।