Logo

‘পোশাক খাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১৮%, বন্ধ হয়েছে প্রায় ১২০০ কারখানা’

RMG Times
শনিবার, জানুয়ারি ৬, ২০১৮
  • শেয়ার করুন

ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক : অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স ও বিভিন্ন বায়ারদের উচ্চমাত্রার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বাংলাদেশে গত চার বছরে প্রায় ১২০০ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরো অনেকগুলো কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে। গত বছর পোশাক শিল্পের রপ্তানী আয়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে রেকর্ড পরিমাণে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, কর্মসংস্থান দিনদিন কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির।

আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষায়িত মাস্টার্স প্রোগ্রাম ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস অ্যান্ড লেবার স্টাডিজ’  এর ‘বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সোস্যাল কমপ্লায়েন্স’ বিষয়ক একটি সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে একথা জানান বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির।

বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, গত দুই বছরে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে গার্মেন্টস সেক্টরে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ১৮ শতাংশ। 

তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধ্বস ও তাজরীন ফ্যাশনের পরে বাংলাদেশ নানা বাঁধার সম্মুখিন হয়েছে। সকল বাঁধাবিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখন বিশ্বের কাছে রোলমডেল। ইউএস গ্রীন বিল্ডিং কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত বিশ্বের সেরা দশটি কারখানার বাংলাদেশরই সাতটি। ৬৭টি গ্রীণ ফ্যাক্টরী এখন বাংলাদেশে প্রোডাকশনে রয়েছে, ২৮০ ইউজিবিসি সার্টিফিকেশনের অপেক্ষায় রয়েছে।  আজকে এই শিল্পটা কারো ব্যক্তিগত শিল্প নয়, এটি এখন জাতীয় শিল্প। পোশাক শিল্পই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র।

তিনি  বলেন, বাংলাদেশ কমপ্লায়েন্স খাতে প্রায় শতভাগ উন্নয়ন করেছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ঢাকার মিরপুরে বিজিএমইএর একটি হাসপাতাল নির্মাধানীন রয়েছে। পোশাক শিল্পের রপ্তানী আয়ের ০.০৩ শতাংশ লভ্যাংশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা হচ্ছে। যেখান থেকে শ্রমিকদের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। আমরা আশা করছি এবছর প্রায় ৮০ কোটি টাকা সেখানে জমা হবে। 

[metaslider id=”8012″]

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশকে মধ্য আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এই মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। শিল্প সম্পর্কিত উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় শুধুমাত্র পোশাক খাত থেকেই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিদেশী কর্মকর্তারা নিয়ে যাচ্ছে। ভারতের রেমিটেন্স আয়ের পঞ্চমতম শীর্ষ খাত এখন বাংলাদেশ। এর কারণ এখনো এদেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরী হচ্ছে না। 

এসময় তিনি পোশাক খাতে দক্ষ ও যোগ্য জনবল তৈরিতে খাত উপযোগী কোর্স কারিকুলাম প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, পোশাক খাতে দক্ষ ও যোগ্য জনবল তৈরিতে খাত উপযোগী কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। এই সেক্টরে যেভাবে প্রয়োজন, সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে হবে।” 

তিনি বলেন, পোশাক শিল্প শ্রমিকরা বাংলাদেশের উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কমপ্লায়েন্স খাতে এই সেক্টরে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এখনো দেশের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এই সেক্টর নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিথ্যাচার করছে। হলুদ সাংবাদিকতা আর আমাদের কিছু মানুষের নীচু মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনের ঘটনায় নেগেটিভ সাংবাদিকতার জন্যই আমাদেরকে চরম মুল্য দিতে হয়েছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার, কনফিডেন্স আর রেপুটেশন নষ্ট হয়েছে। তবুও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। 

‌এসময় তিনিও ঢাবি’র ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের’ বিভাগের প্রশংসা করেন ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরী করতে  শিল্প সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স পরিচালনা করার আহ্বান জানান। 

সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. তানিয়া রহমান বলেন, “শ্রমিকদের সমস্যা, মালিকপক্ষের সমস্যা-সেগুলো জানা এবং সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার জন্যই এই সেমিনার জরুরি।

সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস অ্যান্ড লেবার স্টাডিজ’ প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী। এতে বক্তব্য রাখেন বিএলএমইএর সভাপতি সিব্বির মাহমুদ এবং সোনালী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আলী হোসেইন শিশির। 

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে  এর অধ্যাপক মি. ড. আবু তাহের এর সভাপতিত্বে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সোস্যাল কমপ্লায়েন্সের বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি গবেষণা পত্র তুলে ধরেন সহকারী অধ্যাপক মি. আশরাফুল আলম ও মাঈনুদ্দিন মোল্লা। এতে আলোচক হিসেবে গবেষণাপত্রের বিশ্লেষণ করেন বিলসের নির্বাহী পরিচালক, মি. সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ ও আরএমজি টাইমসের সম্পাদক মি. আব্দুল আলিম।  

এসময় ‘টেকসই পোশাক শিল্প তৈরীতে অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স এর ভুমিকা শীর্ষক আরেকটি গবেষণাপত্র তুলে ধরেন গ্যাপ এর সিনিয়র ম্যানেজার তামান্না সারোয়ার এবং আলদি সার্ভিসেস লিমিটেড এর উপদেষ্টা মি. ওমর ফারুক এলিন। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মি. ড. গোলাম আজম। এসময় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি মি. ড. উত্তম কুমার দাস ও কিউইএসআই এর প্রধান নির্বাহী মি. আমিরুল ইসলাম।