ফজলুল হক : ‘আপনি যে পোশাকটা কিনছেন , সেটা আমি বানিয়েছি কিন্তু সেটার জন্য আমি কোন মজুরী পাইনি’। সম্প্রতি তুর্কির ইস্তাম্বুলে বিশ্বখ্যাত পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান জারা’য় কেনাকাটা করতে গিয়ে পোশাকের গায়ে এসব ট্যাগ দেখে নিন্তান্তই হতবাক হয়েছেন ক্রেতারা। শ্রমিক শোষনের এক করুন আর্তনাদ ফুটে উঠেছে ট্যাগের এই লেখায়।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংগঠন ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের সহযোগিতায় ইস্তাম্বুলের ব্রাভো টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের শ্রমিকরা এসব ট্যাগ লাগিয়েছে। এসব ট্যাগ নজরে এলে মুহুর্তেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় জারার বিরুদ্ধে শ্রমিক শোষণের অভিযোগ উঠে।
জানা যায়, ব্রাভো টেক্সটাইল ফ্যাক্টরী ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ‘জারা’, ‘ম্যাংগো’ ও নেক্সটসহ ইউরোপিয়ান নামকরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরী করতো। কিন্তু কারখানাটি গত বছরের জুলাই মাসে বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক কর্মরত ছিল। মালিক শ্রমিকদের কাজের কোন মজুরি না দিয়েই হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এক বছরের বেশি সময় ধরে তার কোন হদিস মেলেনি, মেলেনি শ্রমিকদের পারিশ্রমিকও। অনেক পোশাক কোম্পানির সাথেই শ্রমিকদের এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। কোম্পানীগুলো শ্রমিকদের মোট পাওনার চার ভাগের এক ভাগ দিতে রাজি হয়। অপরদিকে, শ্রমিকদের দাবি তাদের সম্পুর্ণ পাওনাই পরিশোধ করতে হবে।
বকেয়া বেতনের দাবীতে শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দেন ‘ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন’ । এই সংগঠনের সহযোগিতায় জারার জন্য প্রস্তুতকৃত পোশাকে ‘”I made this item you are going to buy, but I didn’t get paid for it.” লিখে একটি ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়। এসব ট্যাগযুক্ত পোশাক জারার বিভিন্ন আউটলেটে ছড়িয়ে পড়ে।
‘ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন’ এর যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্লাটফর্ম ‘লেবার বিহাইন্ড দ্যা লেভেল’ এর পলিসি ডিরেক্টর ‘ডমিনিক মুলার’ বলেন, ‘তাদের সম্পূর্ণ টাকার পরিমান ৬৫০,০০০ ইউরো যেটাকে অনেক বড় পরিমান মনে হলেও তা জারার চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের মোট নীট সেলের .০১% এরও কম! জারার কাছে এই পরিমানটা কিছু মনে না হলেও শ্রমিকদের কাছে এবং তাদের পরিবারের কাছে এটা বিশাল কিছু’। জারাসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলোর উচিত দ্রুত এসব শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে দেয়া।
তিনি আরো বলেন, “পোশাক কারখানায় এটা শুধু শ্রমিক শোষনই নয়, এটা নারীর অধিকার শোষনও। বিশ্বের পোশাক বাজারে ষাট মিলিয়ন মানুষ কাজ করছে। যাদের বেশির ভাগই নারী। আপনার সোয়েটার কিংবা প্যান্ট এখুনি পরীক্ষা করুন। সম্ভবত দেখবেন, এতে লেখা আছে, ‘মেইড ইন চীন’ অথবা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। তুর্কিও একটি দ্রুত উন্নয়নশীল টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ। এসব দেশের পোশাক শ্রমিকদের বেশিরভাগই নারী। কিন্তু তাদের কাজের পরিবেশ ও পারিশ্রমিক নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। বিভিন্ন দেশে শ্রমিক শোষণ চলছেই। পোশাক শিল্পখাতে এমন গল্পের বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। প্রথম সারির ব্র্যান্ডগুলো বেশি মুনাফার জন্য কম খরচের কারখানাগুলোতে কাজ করায় যেখানে শ্রমিকের প্রতি মালিকের নুন্যতম নৈতিকতাও থাকে না।”
এদিকে জারার প্রধান প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ব্রাভো টেক্সটাইলের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সকল শর্তই পুরণ করেছে জারা। কিন্তু শ্রমিকদের সাথে এমন ছলচাতুরীর বিষয়ে অবগত নয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু মালিক লাপাত্তা হওয়ার পরে ইন্ডিটেক্স ভুক্তভোগী ক্ষতিপুরণ দেয়ার জন্য নেক্সট ও ম্যাংগোর সমন্বয়ে একটি ফান্ড তৈরীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা শ্রমিকদের প্রাপ্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মতামত লিখুন :