ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র (জিকে) এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানাভিত্তিক নিট কম্পোজিট ইন্ডাস্ট্রি ‘ইকোটেক্স লিমিটেড’। স্বাস্থ্য বীমা পাইলট প্রকল্পের আওতায় বুধবার সকাল দশটায় (১৫ নভেম্বর ২০১৭) রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল “ওয়েস্টিন ঢাকা”য় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’। প্রকল্পটি ফ্রান্সভিত্তিক শীর্ষ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান অসান (Auchan) ” এর ফাউন্ডেশন “উইভ আওয়ার ফিউচার (WoF)” এর অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই চুক্তির আওতায় আগামী চার বছর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ইকোটেক্স লিমিটেড এর সকল শ্রমিককে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ সকল ধরনের চিকিৎসা সেবা ও সুবিধা প্রদান করবে।
এসএনভি’র ওয়ার্কিং উইথ উইমেন প্রকল্পের টিম লিডার ফারথিবা রাহাত খান অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের স্বাগত জানান এবং অনুষ্ঠানটির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
তিনি জানান, চলতি বছরের জুলাই মাসে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসএনভি ও “উইভ আওয়ার ফিউচার (WoF)” যৌথভাবে স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই কর্মসূচির আওতায় এসএনভির কারিগরী ও সার্বিক সহযোগিতায় অলাভজনক চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ নির্ধারিত পোশাক কারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করবে এবং কর্মসূচিটি মনিটরিং ও মুল্যায়ন করবে আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল। এই কর্মসূচিটির নামকরণ করা হয় ” স্বাস্থ্য বীমা পাইলট প্রকল্প”। কারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কারখানা মালিকদের উৎসাহিত করতে সকলে যৌথভাবে কাজ করে চলেছে।
[metaslider id=7484]
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও যুগ্ম সচিব মো. আনোয়ার উল্লাহ, বিজিএমইএ এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. ফারুক হাসান, নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসির ফার্স্ট সেক্রেটারি ড. আনি ভেস্টজেন্স, অসান ইন্টারন্যাশনাল এর জেসিকা নারসো, ইকোটেক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. শফিক হাসান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়ক মি. মনজুর কাদের আহমেদ, আরএটিএম ইন্টারন্যাশনাল এর নির্বাহী পরিচালক মি, সৈয়দ জগলুল পাশা প্রমূখ।
অতিথির বক্তব্যে নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসির ফার্স্ট সেক্রেটারি ড. আনি ভেস্টজেন্স বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ কাজ করছে, যাদের অধিকাংশই নারী।কিন্তু এসব নারী শ্রমিকরা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতন নয়। তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চটা দিতে পারছেন না। নেদারল্যান্ড সরকার এসএনভির মাধ্যমে এসব পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য কাজ করে চলেছে। সাসটেইনেবিলিটি অর্জনে পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নজর দিতে হবে।
এসময় তিনি স্বাস্থ্য বীমা পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণ করায় ইকোটেক্স, এসএনভি, অসান ও জিকের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি মি. ফারুক হাসান বলেন, বিশ্বে পোশাক রপ্তানীর দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম। ইউরোপে ডেনিম রপ্তানীতে বাংলাদেশ প্রথম স্থান দখল করে আছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানী করা হয়েছে যা দেশের রপ্তানী আয়ের ৮১ শতাংশ। এ শিল্পের মোট শ্রমিকের ৭৫ শতাংশই নারী। কিন্তু তারা স্বাস্থ্য সচেতন নয়। তাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইকোটেক্স, অসান, এসএনভি ও জিকের মতো সকল উদ্যোক্তা, বায়ার, ব্র্যান্ড ও সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
ইকোটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. শফিক হাসান বলেন, ইকোটেক্স Three P মুলমন্ত্রে বিশ্বাস করে- Planet, People and products). প্রথম দুটিকে ধরে রাখতে না পারলে ভালো পণ্য পাওয়া সম্ভব না। আমরা আমাদের ব্যবসার শুরু থেকেই পরিবেশ রক্ষা, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আর পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখার চেষ্টা করছি। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রয়েছে ফ্রি মেডিক্যাল কেয়ার ও শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র। দুপুরে উন্নতমানের খাবারের পাশাপাশি মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটিও প্রদান করছি। আশা করছি, স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প থেকে আমাদের শ্রমিকরা আরো বেশি সুবিধা পাবে।
মতামত লিখুন :