Logo

এনটিএস হোল্ডিং’র বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

RMG Times
শনিবার, অক্টোবর ৭, ২০১৭
  • শেয়ার করুন

ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের জার্মানী ভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘হংকং গার্মেন্টস সলুশনস জিএমবিএইচ’ এর বাংলাদেশ লিয়াজোন অফিস ‘এনটিএস হোল্ডিং লিমিটেড” এর বিরুদ্ধে শ্রমিক শোষণ ও প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইন বহির্ভূত নিয়োগপত্র ও অসঙ্গতিপূর্ণ কাগজপত্র প্রদানের মাধ্যমে প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক দুই কর্মকর্তা সিনিয়র কিউএ মি. জাহিদ মোল্লাহ ও হেড অফ টেকনিশিয়ান মি. তারেকুল ইসলাম তারেক। প্রায় সাত বছর চাকরী জীবন শেষে নিয়ম মেনে অব্যাহতি নেয়ার পরও আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ ( compensation) ও শেষ এক মাস কর্মদিবসের বেতন পরিশোধ করেনি এনটিএস হোল্ডিং। কোম্পানিটি মুলত জার্মানি ভিত্তিক পোশাক ব্র্যান্ড  ALDI এর পোশাক সরবরাহ করে থাকে।

আরএমজি টাইমসকে দেয়া এক লিখিত অভিযোগে তারা বলেন, নিয়ম মেনে রিজাইন দেয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটি আমাদের কোনো প্রকার সুবিধা ও চলতি মাসের মজুরী দিতে অস্বীকার করছে। এনটিএস হোল্ডিং এ দীর্ঘ সাত বছর চাকরী করেছি। অন্য সবার মতো আমাদেরও প্রত্যাশা ছিল দীর্ঘ সার্ভিস জীবন শেষে আমরাও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবো কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে”।

মি. তারেক বলেন, ‍‌”২০১০ সালে এনটিএস ফ্যাশন লিমিটেড (বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি এনটিএস হোল্ডিং নামে পরিচিত) নামের এই প্রতিষ্ঠানটি চাকরীতে প্রবেশ করি। এই প্রতিষ্ঠানে সাত বছর চাকরী করেছি। কিন্তু এখন কাগজপত্রে দেখতে পারছি আমার চাকরীর বয়স মাত্র চারমাস। দীর্ঘদিন যে প্রতিষ্ঠানের জন্য শ্রম দিয়েছি সেই প্রতিষ্ঠানের থেকে প্রতারিত হবো কখনোই ভাবিনি”। 

তিনি আরো বলেন, “ভালো সুযোগ পাওয়ায় আমরা দুজনই অফিসের সকল নিয়ম মেনে গত আগস্ট মাসে চাকরী থেকে রিজাইন দিই। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রিজাইন গ্রহণ করে ১ সেপ্টেম্বর’২০১৭ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের কোনো প্রকার সুযোগ সুবিধা বা ক্ষতিপূরণ ও চলতি মাসের মজুরী দিতে অস্বীকার করে। বেতনের দাবী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশের জিএম ইউসুফ সামাদসহ হেড অফিসে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু সবাই নিয়োগপত্রের দোহাই দিয়ে বেতন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের মতে, আমরা যেহেতু বেতনের সমপরিমাণ ঈদ বোনাস পেয়েছি সেহেতু এখন আর বেতন দেয়া হবে না। কারণ চার মাসের চাকরীতে ঈদ বোনাস হবে না। ঈদ বোনাসই বেতন হিসেবে নিতে হবে।”

মি. জাহিদ মোল্লা আরএমজি টাইমসকে দুঃখ করে বলেন, “দীর্ঘ দিনের চাকরী শেষে সার্ভিস বেনিফিট পাবো এমন স্বপ্ন না হয় দুঃস্বপ্ন মনে করে ভুলে থাকা যায়, কিন্তু প্রাপ্য বেতন কেনো পাবো না? ঈদূল আযহার বোনাস যদি আমাদের প্রাপ্য না হয় তাহলে আমাদের ঈদুল ফিতরের সময় বোনাস দেয়া হয়েছিল কেনো? আমরা দুজনই প্রায় সাত বছরের বেশি সময় এই প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেছি। অনেক ভালোবাসা, হাসি কান্না মিশে আছে এই প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে। অন্যান্য  সুযোগ সুবিধা না পেলেও বিদায় বেলায় এভাবে পেটে লাথি পড়বে, এমনটা মেনে নিতে পারছি না”।

মি. জাহিদ বলেন, “ম্যানেজমেন্ট, টীম, কার্য পরিধি, সেক্টর সব এক থাকার পরেও বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানটি নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে অসঙ্গতিপূর্ণ কাগজপত্র তৈরী করেছে যাতে শ্রমিকদের অতি সহজেই শোষণ করা যায়। তারা নিজেরা আইন ভঙ্গ করে শ্রমিকদের ঠকিয়ে এখন তারাই আবার আইনের দোহাই দিয়ে আমাদের প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে, প্রাপ্য মজুরীটুকুও দিচ্ছে না। আমাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ে আমরা  শীগ্রই শ্রম আদালতের দারস্থ হবো”। 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুপ্রীম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবি বলেন, “ভুক্তভোগী শ্রমিক দুজন প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় সাত বছর একটানা কাজ করেছে। তারা অবশ্যই ক্ষতিপূরণের পাওয়ার অধিকারী। আমি তাদের বিভিন্ন ডকুমেন্ট দেখেছি, এনটিএস হোল্ডিং আইনসিদ্ধ পাওনা শ্রমিককে না দিয়ে থাকলে প্রতিষ্ঠানটি অন্যায় করেছে এবং ভুক্তিভোগি শ্রমিক শ্রম আদালতে যেতে পারেন”।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনটিএস হোল্ডিং এর জিএম মি. ইউসুফ সামাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আরএমজি টাইমসকে কোনো তথ্য দেননি।