ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক : হেচং গ্রুপের সকল কারখানার সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক পূণর্বহাল করেছে বাংলাদেশে অগ্নি এবং ভবন নিরাপত্তায় ইউরোপীয় ক্রেতা জোট প্রতিষ্ঠান অ্যাকর্ড। ১৯ ডিসেম্বর হেচং গ্রুপকে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে ব্যবসায়িক সম্পর্ক পুণর্বহালের ঘোষণা দেয় অ্যাকর্ড।
হেচং গ্রুপের এইচআর এন্ড কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার আরএমজি টাইমসকে জানান, কিছু শর্ত দিয়ে অ্যাকর্ড হেচং এর সাথে সম্পর্ক পুণর্বহাল করেছে। শর্তানুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারী’২০১৭ এর মধ্যে হেচং গ্রুপের সকল সংশোধনী কর্ম পরিকল্পনা সম্পন্ন করতে হবে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। এই সংবাদ লেখার আগ পর্যন্ত অ্যাকর্ডের ওয়েব সাইটে হেচং গ্রুপের সাথে সম্পর্ক পুনবর্হাল বিষয়ক কোনো ঘোষণা বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। তবে টার্মিনেটেড কারখানার তালিকা থেকে হেচং গ্রুপের নাম মুছে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ৯৩ শতাংশ নিরাপত্তা বিষয়ক সমস্যাগুলোর সমাধান করার পরও গত ০৯ নভেম্বর’২০১৬ তারিখে হেচংকে ভবনের কংক্রিটের স্থায়ীত্ব পরীক্ষার ভূয়া রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগে টার্মিনেট করে অ্যাকর্ড। ২৮ নভেম্বর’ ২০১৬ তারিখে অ্যাকর্ডের ওয়েব সাইটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হেচং এর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা প্রকাশ করে অ্যাকর্ড। ২৯ নভেম্বর দি আরএমজি টাইমসে হেচং গ্রুপকে টার্মিনেট করার খবর প্রকাশ করলে পোশাক শিল্প কারখানার সংশ্লিষ্টদের থেকে অ্যাকর্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে। অ্যাকর্ডে বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। অভিযোগ উঠে হেচং কর্পোরেশন লিমিটেড নামের কারখানাকে টার্মিনেট করে অবিচার করেছে অ্যাকর্ড। শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে এসে হেচং কর্পোরেশনের সাড়ে সাত হাজার শ্রমিককে নিশ্চিত বেকারত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অ্যাকর্ড বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবনের নিরাপত্তা দিতে এসে দেশের পোশাক খাতের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করছে এমন অভিযোগের তীরও ছুড়ে অনেকেই। এর আগে অন্য কোনো পোশাক কারখানার টার্মিনেট করাকে কেন্দ্র করে এতো সমালোচনা দেখা যায়নি।
টার্মিনেট হওয়ার বিষয়ে হেচং গ্রুপের পক্ষ থেকে জানায়, তারা ইলেক্ট্রিক্যাল/ফায়ার/স্ট্রাকচারাল মিলিয়ে ৯৩% কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং বাকিটুকু অ্যাকর্ড এর পরামর্শ মেনেই এগিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অ্যাকর্ড যে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে তা ঠিক করেনি বলে মন্তব্য করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তারা দাবী করে, অ্যাকর্ড কারখানার মালিক-শ্রমিকদের প্রতি অবিচার করেছে। ভবনের কংক্রিটের স্থায়িত্ব পরীক্ষার একটি রিপোর্ট নিয়োগকৃত কনসাল্টিং ফার্ম কর্তৃক ভূয়া রিপোর্ট প্রদান করা নিয়ে একটি ঝামেলা ছিল। কিন্তু অ্যাকর্ডের সাথে বৈঠক করে সেটার সমাধানও হয়। নতুন করে কনসাল্টিং ফার্ম নিয়োগ করে পুনরায় পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এর রিপোর্ট প্রকাশ করার আগেই অ্যাকর্ড হেচং এর কারখানাগুলো টার্মিনেট করে। কারখানার মান নিশ্চিত না হয়েই টার্মিনেট করায় মালিকপক্ষ চরম বিপাকে পড়ে, বেকার হওয়ার চিন্তায় হতাশায় পড়ে হেচং এর সাড়ে সাত হাজার শ্রমিক।
এ ঘটনায় হেচং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বরাবর পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করে দেশের সাড়ে সাত হাজার শ্রমিক ও জাতীয় ক্ষতির কথা বিবেচনা করে এ বিষয়ে তাঁর হস্তক্ষেপের আবেদন জানান।
মতামত লিখুন :