Logo

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অশান্ত হয়ে উঠছে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল, ২৫ পোশাক কারখানায় ছুটি

RMG Times
সোমবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিনিধি : ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সাভার আশুলিয়ায় আজও শ্রমিক আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শ্রমিকরা। ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে আশুলিয়ার পোশাক শিল্পাঞ্চল। এ ঘটনায় শিল্পাঞ্চলের ২০ থেকে ২৫টি কারখানায় এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সোমবার সকালে জামগড়া এলাকার এনভয়, ইয়াগী, দি রোজ, দি লাইফ, প্রাইম, মেডলার, বান্দু, শামিম, স্টারলিংক, সেটফ্যাশন, সেতারা, পলমল, ফ্যাশন ক্র্যাফট, ফ্যাশন এইট কোম্পানি, ওশানী, ডেকো, নাভা নিট কম্পোজিট, শারমিন, সাতচুন কটন, টংলিয়ান, এনআরএল, সানস অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে কারখানাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে কাজে যোগ দিতে এসে এসব কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করলে মালিকপক্ষ এই ছুটি ঘোষণা করে।

পুলিশ জানায়, পোশাক শ্রমিকরা আজ সোমবার সকালে কারখানায় উপস্থিত হয়ে কর্মবিরতি শুরু করলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানা ছুটি দিয়ে দিলে উত্তাল হয়ে ওঠে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল।

আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার এম ডিজাইন, এনভয়, উইন্ডি, হিয়ন এ্যাপারেলস, দ্যা ডিজাইন অ্যান্ড জিন্স, সেতারা, সেড ফ্যাশন, দ্যা আইডিয়াস ফ্যাশন, লিন্ডা ও ডেকোসহ ২০ থেকে ২৫টি তৈরি পোশাক কারখানা সোমবারের জন্যও ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ঢাকা শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক পুলিশ সুপার (এসপি) মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে একযোগে কারখানাগুলো ছুটি দেওয়া হলে টঙ্গী-আশুলিয়া-ডিইপিজেড মহাসড়কে নেমে আসে শ্রমিকরা। এরপর তারা বিক্ষোভের চেষ্টা চালায়। এ সময় পুলিশের ধাওয়া ও মৃদু লাঠিচার্জে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যায়। পূর্বেই শিল্পাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকায় শ্রমিকরা সড়কে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেও পারেনি।

প্রসঙ্গত, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ১২ ডিসেম্বর শিল্পাঞ্চলের আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কের বেরণ এলাকার রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান উইন্ডি গ্রুপের হলিউড ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ শুরু করে। এ ঘটনায় ওই দিন শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কর্তৃপক্ষ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কায় ওইদিন উৎপাদন বন্ধ রেখে কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করে। এরপর থেকে প্রতিদিন শিল্পাঞ্চলের জামগড়া, বেরনসহ আশেপাশের অন্যান্য পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও একই দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছে।

কারখানাগুলোর আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, সর্বশেষ ২০১৩ সালে সরকার ঘোষিত ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিকরা কারখানায় কাজ করে আসছেন। এ কয় বছরে ঘর ভাড়া ও দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ টাকায় তাদের সংসারের ব্যয় ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ইতিপূর্বে তারা (শ্রমিকরা) কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে তারা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছেন। গত কয়েক দিন ধরে তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসলেও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

এদিকে শ্রমিক বিক্ষোভ ঠেঁকাতে ঢাকা জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়েছেন। আর শ্রমিকদের এই আন্দোলনের পেছনে কারো উসকানি আছে কি না সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ঢাকা শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক পুলিশ সুপার (এসপি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে কোন সিদ্বান্ত না আসায় এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানাগুলো রবিবারও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ।

এদিকে এ ঘটনায় গত শনিবার বিকেলে স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, বাড়ির মালিক, রাজনৈতিক দলের নেতা, শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতা ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বা মত বিনিময়কালে শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করে কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও শ্রমমন্ত্রীকে শ্রমিকদের দাবির ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছিলেন। এবারও প্রধানমন্ত্রী তার বিচক্ষণতা দিয়ে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করবেন।

সাংসদ এনামুর রহমান আরো বলেন, বাড়িওয়ালাদের সাথেও ইতিমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে, যেনো তাঁরা আগামী তিন বছরের মধ্যে কোন ভাবেই বাড়ি ভাড়া আর না বাড়ান। আর এতে বাড়িওয়ালারাও প্রশানকে আশ্বস্ত করেছেন।

অপরদিকে উৎপাদন বন্ধ রেখে প্রায় সপ্তাহ ব্যাপী কর্মবিরতি করার ফলে পোশাক কারখানাগুলো দেশের বাইরের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (বায়াদের) অর্ডার করা মালামাল মালিকপক্ষ সঠিক সময়ের মধ্যে শিপমেন্ট করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।