নিজস্ব প্রতিনিধি : ঢাকার আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে আজ রোববারও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা করার দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছেন। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫টি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। একযোগে কারখানাগুলো ছুটি দেয়া হলে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে শ্রমিকরা বিক্ষোভের চেষ্টা চালায়।
এসময় পুলিশের ধাওয়া ও মৃদু লাঠিচার্জে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যায়। এতে পুলিশের লাঠির আঘাতে ৫ শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
কর্মবিরতির অংশ হিসেবে রবিবার সকাল থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। এ ঘটনায় বেলা ১১টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় তৈরি পোশাক কারখানা এম ডিজাইন, এনভয়, উইনডি, হিয়ন এ্যাপারেলস, দ্যা ডিজাইন এন্ড জিন্স, সেতারা, সেট ফ্যাশন, গ্রীণ লাইফ ক্লোথিং, দ্যা আইডিয়াস ফ্যাশন, লিন্ডা ও ডেকোসহ প্রায় ১০টি কারখানায় এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এসময় এসব কারখানায় এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে পূর্বেই পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকায় শ্রমিকরা সড়কে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেও তা পারেনি।
জানা গেছে, বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বেশ কয়েকদিন থেকেই আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করে। সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে জামগড়া ও বাইপাইলের দুটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কারখানার ভিতরে প্রথমে কর্মবিরতি শুরু করে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে মহাসড়কে নেমে আসে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই এলাকায় ছুটে আসে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার ঘোষিত তাদের বর্তমান মজুরি তারা সঠিকভাবে পাচ্ছেন না। এমনকি গত কয়েক দিন ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসলেও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা।
এদিকে শ্রমিক বিক্ষোভ ঠেকাতে ঢাকা জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান এ ব্যাপারে সরকারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়েছেন। আর শ্রমিকদের এই আন্দোলনের পেছনে কারো উস্কানি আছে কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা-১৯ আসনের সাংসদ ডা. এনামুর রহমান শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করে কাজে যোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এসময় তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও শ্রমমন্ত্রীকে শ্রমিকদের দাবির ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছিলেন। আশা করি, এবারও প্রধানমন্ত্রী তার বিচক্ষণতা দিয়ে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করবেন।
এছাড়াও তিনি বলেন, বাড়িওয়ালাদের সাথেও ইতোমধ্যে মতবিনিময় করা হয়েছে। যাতে আগামী তিন বছরের আগে কোনভাবেই বাড়ি ভাড়া বাড়ানো না হয়। আর এতে বাড়িওয়ালারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, আন্দোলতরত এসব কারখানায় প্রায় ৩০ হাজারেরও অধিক শ্রমিক কাজ করেন।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, শ্রমিকদের দাবির ব্যাপারে মালিকপক্ষ কোন সিদ্ধান্তে না আসতে পারায় কারখানাগুলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে।
মতামত লিখুন :