ডেস্ক রিপোর্ট : সাভারের আশুলিয়ায় একটি তৈরি পোশাক কারখানার ভিতরে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। শ্রমিকদের অভিযোগ, অসুস্থ ওই নারী শ্রমিককে ছুটি না দিয়ে কাজ করানোতে তিনি মারা যান।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কের আশুলিয়ার ছয়তলা এলাকায় উইন্ডি অ্যাপারেলস কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া শ্রমিকের নাম তাসলিমা বেগম (২৩)। তিনি ময়মনসিংহের বাসিন্দা। স্বামী সুলতান মিয়া ও সন্তান সুমাইয়াকে নিয়ে বেরুন তেঁতুলতলা এলাকার এক বাড়িতে একটি কক্ষ নিয়ে ভাড়া থাকতেন তাসলিমা।
শ্রমিকরা জানায়, সকালে উইন্ডি অ্যাপারেলস কারখানায় তিন হাজার শ্রমিক কাজে যোগ দেয়। এ সময় কারখানার ছয়তলার শ্রমিক অপারেটর তাসলিমা জ্বর ও মাথা ব্যাথা হচ্ছে বলে আলম মিয়া নামে এক কর্মকর্তার কাছে ছুটি চান। পরে ওই কর্মকর্তা তাকে ছুটি না দিয়ে কাজ করতে বলেন। পরে ওই নারী শ্রমিক দুপুরে কাজ করা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে পড়ে যান। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই নারী শ্রমিককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাসলিমাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ছুটি না দেওয়ায় তাসলিমার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করে শ্রমিকরা। পরে আলম মিয়ার এর বিচারের দাবিতে কারখানার ভিতরে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। সংঘর্ষের আশঙ্কায় বৃহস্পতিবারের জন্য কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষনা করে কর্তৃপক্ষ। পরে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলে পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ ১ এর ডেপুটি ডাইরেক্টর কাওছার জানান বিষয়টি তদন্ত করে ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের সাথে কোন প্রকার কথা বলতে রাজি হয়নি।
এদিকে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই কারখানাটির সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির নিন্দা
এদিকে তাসলিমার মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা, দোষী ব্যক্তিদের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। বৃহস্পতিবার পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে সংগঠনের নেতারা এ দাবি করেন।
বিবৃতিতে সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, তাসলিমা সকাল থেকেই অসুস্থ হওয়ার পরেও কারখানা কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা না করে উল্টো তাকে কাজ করতে বলে এবং কারখানায় আটকে রাখে। অসুস্থ তাসলিমার সুষ্ঠু চিকিৎসার উদ্যোগ না নিয়ে কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে মালিককে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায় ওই সংগঠন।
বিবৃতিতে নেতারা আরো বলেন, ‘তাসলিমার মৃত্যুতে তার পরিবার ও পরিজন যে ক্ষতির শিকার হল অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। কারখানার অভ্যন্তরে নিরাপদ কর্মপরিবেশের ব্যবস্থা করার দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
সংগঠনের পক্ষে বিবৃতি প্রদান করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার লিমা, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু শ্যামা এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দীপক রায়। সৌজন্যে : এনটিভি অনলাইন
মতামত লিখুন :